হ্যান্ডসেট-ইন্টারনেটে কর বাড়তে পারে বাজেটে
আসন্ন বাজেটে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বৃদ্ধি এবং হ্যান্ডসেট উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করতে পারে সরকার। এর ফলে বেড়ে যেতে পারে হ্যান্ডসেটের দাম ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ বাড়িয়ে মোট ১০ শতাংশ করতে চায় বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মোবাইল ফোন বিক্রির ওপর কোনো ভ্যাট নেই।
এই সিদ্ধান্তের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে দেশের ১ কোটি ১০ লাখ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওপর। সেই সঙ্গে নতুন হ্যান্ডসেট কেনার খরচও বেড়ে যাবে।
ব্রডব্যান্ড সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাম্বার আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল হাকিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আরও ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়ানো হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকারের যে প্রচেষ্টা তার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।'
তিনি আরও বলেন, 'দিন শেষে ব্যবহারকারীদের এই অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে।'
সরকার বর্তমানে সরবরাহ ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যান্ডউইথ বিক্রির সময় প্রতিবার ৫ শতাংশ করে ভ্যাট সংগ্রহ করে।
সাবমেরিন কেবল কোম্পানি ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) পরিষেবা প্রদানকারীদের কাছে। এরপর তা ইন্টারনেট সেবা দাতাদের (আইএসপি) হাত ঘুরে গ্রাহকের কাছে পৌঁছায়।
আমিনুল হাকিম বলেন, 'সরকার যদি খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট বৃদ্ধি করে, তাহলে এই শিল্প থেকে মোট ভ্যাট ২০ শতাংশেরও বেশি হবে।'
করোনা মহামারি আঘাত হানার পর থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ১ কোটি ৯৯ লাখে দাঁড়িয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ এখন ইন্টারনেটের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। অনেক মানুষ এখন বাড়ি থেকে অফিস করেন, ফ্রিল্যান্সিং করেন, এমনকি অনলাইনে বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশুনাও করেন।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি মো. এমদাদুল হক জানান, মহামারিতে গ্রাহক বাড়লেও দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭ শতাংশ ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করেন, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন।
তিনি বলেন, 'যদি অতিরিক্ত ভ্যাট চাপানো হয় তাহলে ব্রডব্যান্ড গ্রাহক সংখ্যা বাড়ার হার কমে যাবে এবং অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কেননা, জিডিপিতে এই খাতের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।'
তিনি জানান, ভ্যাট বাড়লে আইএসপিদের পক্ষে সারা দেশে একই দামে ইন্টারনেট বিক্রি করা সম্ভব হবে না।
টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গত বছরের জুনে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শুল্ক নির্ধারণ করে।
একজন গ্রাহকের এখন সর্বনিম্ন ৫ এমবিপিএস ইন্টারনেট গতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ ব্যবহার করার জন্য মাসে অন্তত ৫০০ টাকা দিতে হয়।
তিনি বলেন, 'গত ২ বছরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে এবং এর ফলে সরকারের ভ্যাট আদায় বেড়েছে। সরকার যদি নতুন করে ভ্যাট না বাড়ায়, তাহলে গ্রাহক বাড়বে। এতে করে শেষ পর্যন্ত সরকারি কোষাগারে বেশি পরিমাণ টাকা যাবে।'
দেশে মোবাইল উৎপাদন ও সংযোজন শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এই ভ্যাট আরোপ করা হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কেননা, এ বছর মোবাইল বিক্রি ২০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। মানুষ ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে কোনো ধরনের অতিরিক্ত কেনাকাটা করতে চাইছেন না।
সিম্ফনির মূল প্রতিষ্ঠান এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত মোবাইল ফোনের স্থানীয় উত্পাদন বাড়াতে সরকারের যে প্রচেষ্টা তা দুর্বল করে দেবে।'
বর্তমানে, স্মার্টফোনের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশেরও বেশি ১৪টি স্থানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পূরণ করে।
এই মহামারিতে ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণ ত্বরান্বিত করলেও বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ শতাংশের নিচে রয়েছে। এর কারণ, স্মার্টফোনের উচ্চ মূল্য এবং মানুষের কম ক্রয় ক্ষমতা।
জাকারিয়া শহীদ জানান, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে ডিভাইসের দাম ইতোমধ্যে বেড়ে যাওয়ার প্রবণতায় রয়েছে। এর সঙ্গে এই অতিরিক্ত ভ্যাট যোগ হলে একটি ফোন কিনতে গ্রাহককে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি খরচ করতে হবে।
স্যামসাং মোবাইলের স্থানীয় সংযোজন প্রতিষ্ঠান ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, 'মোবাইল ফোন এখন মানুষের জন্য একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং খুচরা পর্যায়ে আরোপিত ভ্যাট ব্যবহারকারীদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ তৈরি করবে।'
তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু সব কিছুর দামই বাড়ছে, তাই সরকারের উচিত এই খাত থেকে ভ্যাট নিয়ে গ্রাহকের ওপর আরও চাপ তৈরি না করা।'
Comments