চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে চালু হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৪ হাজার জাহাজ পরিচালনা করেছে, যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ছবিটি সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তোলা হয়েছে। ছবি: রাজীব রায়হান

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) আগামী মাস থেকে একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া চালু করতে যাচ্ছে, যেটি অটোমেশনের মাধ্যমে পণ্য খালাস করার কাজকে আমদানিকারকদের জন্য আরও দ্রুত, সহজ ও সাশ্রয়ী করবে।

শিপিং এজেন্ট অথবা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট দ্বারা ইস্যুকৃত 'ডেলিভারি অর্ডার' নামের এই ছাড়পত্র আমদানি প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত অনেকগুলো নথির মধ্যে একটি। এই ছাড়পত্র প্রদানের প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল করা হচ্ছে।

শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এই ছাড়পত্র আমদানিকারকদের দেন, যাতে তারা বন্দর থেকে চালান খালাস করতে পারেন।

বর্তমান প্রক্রিয়া অনুযায়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের শিপিং এজেন্ট বা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে সশরীরে গিয়ে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) গ্রহণ করতে হয়। এতে বেশ কিছু কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, যেটি আমদানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সময়সীমাকে প্রভাবিত করে।

ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টরা আমদানিকারকদের পক্ষে এই কাজটি করে থাকেন। শিপিং এজেন্টদের কার্যালয় সন্ধ্যায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকক্ষেত্রেই এক দিনের মধ্যে ডিও সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না।

১ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ৬টি শীর্ষস্থানীয় শিপিং লাইন ডেলিভারি অর্ডার দেওয়া শুরু করবে।

২২ নভেম্বর চবক ৬টি প্রধান শিপিং এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, এপিএল বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড, মায়েরস্ক বাংলাদেশ লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্স বাংলাদেশ লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্স, ওশ্যান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও এমএসসি মেডিটারেনিয়ান শিপিং কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড।

তারা এই শিপিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করেছে পরীক্ষামূলকভাবে আমদানি চালানের বিপরীতে ইলেক্ট্রনিক ডেলিভারি অর্ডার (ইডিও) দেওয়া শুরু করতে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সব শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানকে এই প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হবে, যাতে বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরও সহজ হয়।

উল্লেখ্য, দেশের বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি এই বন্দরের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

প্রতিটি কর্মদিবসে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে গড়ে ৪ হাজার টিইইউ (২০ ফুটের সমতুল্য একক) ধারণ ক্ষমতার আমদানি কন্টেইনার ডেলিভারি দেওয়া হয়।

রপ্তানিমুখী শিল্প ও আভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য তৈরি করা পণ্যের কাঁচামাল আমদানি বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বন্দর থেকে ডেলিভারির পরিমাণও বাড়ছে।

চবক'র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৪ হাজার জাহাজ ভিড়েছে, যার পরিমাণ ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রায় ২ গুণ।

জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি কন্টেইনারের পরিমাণও বেড়েছে।

৫ বছর আগে বন্দর কর্তৃপক্ষ ১১ লাখ টিইইউ আমদানি কন্টেইনার পরিচালনা করেছে, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৫ শতাংশ বেড়ে ১৩ লাখ ৮০ হাজার হয়েছে।

চবক সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রচলের পর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের আর শিপিং এজেন্ট বা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানে সশরীরে গিয়ে ডিও সংগ্রহ করতে হবে না, যার কারণে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় বাঁচবে।

চবক একটি টার্মিনাল পরিচালনা সিস্টেম তৈরি করেছে, যার মধ্যে একটি ইডিও মডিউল সংযুক্ত রয়েছে। ফলে শিপিং এজেন্ট অথবা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা শুধু প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করলেই ডিও প্রদান করতে পারবেন।

চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু জানান, বর্তমানে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কর্মীদের শীর্ষস্থানীয় শিপিং এজেন্টদের কাছ থেকে ডিও সংগ্রহ করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার সিরিয়াল পেতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।

নতুন সিস্টেমটির পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চবক'র একজন প্রকৌশলী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, সিঅ্যান্ডএফ কর্মীদের আর সিরিয়াল নম্বর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।

তিনি আরও জানান, তারা নিজেদের বাসায় বসে দিনের যেকোনো সময় তাদের ইউজার আইডি ব্যবহার করে মডিউলের মাধ্যমে রিকুইজিশন জমা দিতে পারবেন এবং শিপিং এজেন্টরাও কর্মঘণ্টা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও সিস্টেমে ডেটা আপলোড করতে পারবেন।

বর্তমানে শিপিং এজেন্ট অথবা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ডিও প্রদান করার আগে একটি ফর্ম তৈরি করতে হয়, যেটি তৈরি করতে তাদের কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগে। চবক'র প্রকৌশলী জানান, অনলাইন সিস্টেমে এ কাজের জন্য মাত্র ১ মিনিট সময় ব্যয় হবে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন জানান, বর্তমানে হাতে তৈরি করা ডিওতে প্রতারণার সুযোগ রয়েছে, যা অনলাইন সিস্টেমে থাকবে না।

তিনি এই উদ্যোগের জন্য চবক'র প্রশংসা করেন এবং পুরো প্রক্রিয়াকে কাগজবিহীন করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হিসেবে অভিহিত করেন।

এমএসসি মেডিটারেনিয়ান শিপিং কোম্পানি বাংলাদেশের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আজমির হোসেন চৌধুরী জানান, শুরুতে কিছু কাগজপত্র সশরীরে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদেরও প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধ করার জন্য তাদের কার্যালয়ে সশরীরে আসতে হবে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মুনতাসির রুবায়েত জানান, ডিওর জন্য সশরীরে শিপিং এজেন্টের কাছে যাওয়ার আগে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের আগে শুল্ক কর জমা দিতে হয় এবং ব্যাংক থেকে ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হয়।

ছাড়পত্র সংগ্রহের পর বন্দরে আরও কিছু কাজ শেষ করতে হয়, যার পর চালানগুলোকে খালাস করা যায়, জানান তিনি।

মুনতাসির রুবায়েত প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনলাইন সিস্টেমে যুক্ত করে আরও বেশি পরিমাণ উপকার পাওয়ার ওপর জোর দেন।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
health reform

Priorities for Bangladesh’s health sector

Crucial steps are needed in the health sector for lasting change.

9h ago