দেশে চামড়া খাতের প্রধান সমস্যা কমপ্লায়েন্সের অভাব: গবেষণা

ছবি: সংগৃহীত

দেশের চামড়া খাতের প্রধান সমস্যা কমপ্লায়েন্সের অভাব। এ সমস্যার কারণে এ খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয় বাজারেও চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আজ মঙ্গলবার দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন, অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও র‌্যাপিডের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় সম্ভব। সেজন্য এ খাতের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং শ্রম মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করার সুপারিশ করা হয় গবেষণায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ গবেষণার ফলাফল মূল প্রবন্ধ আকারে উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, 'চামড়া খাতে ভালো না করার একমাত্র কারণ কমপ্লায়েন্সের অভাব। পরিবেশগত, সামাজিক ও মানের দিকে জোর দিতে হবে। কমপ্লায়েন্স না হওয়ার কারণে বাংলাদেশ পণ্যমূল্য ৩০-৪০ শতাংশ কম পাচ্ছে।'

'চামড়া খাতের সমস্যা আগে থেকে চিহ্নিত। এর সমাধানের উদ্যোগ দরকার। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, উন্মুক্ত জায়গায় ময়লা ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ও দক্ষ উদ্যোগ দরকার,' বলেন তিনি।

'চামড়া খাতে মূল্য সংযোজন অনেক বেশি' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'উদ্যোক্তারা আর্থিক সহায়তা চেয়ে নীতি সহায়তা বেশি চান। করোনার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে এই খাত আশানুরূপ সুবিধা পায়নি। চামড়া খাতে ৮ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ আছে। এই ঋণের বিপরীতে বছরে ৮০০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়। অনেক কারখানাই সময়মত ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে ওইসব কারখানা প্রণোদনা সুবিধা পায়নি।'

'একটা ম্যাপিং করে আগালে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৮-১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করা সম্ভব। তবে এজন্য কর্মপরিকল্পনা যথাযথভাবে সময়মতো বাস্তবায়ন করতে হবে।'

চামড়া খাতের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে লেদার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।

'ট্যানারি শিল্পে করোনার প্রভাব মূল্যায়ন' শীর্ষক এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা।

তিনি বলেন, 'চামড়া খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ঠিকমত পরিচর্যা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মান নিশ্চিত করতে পারলে এ খাত থেকে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন রপ্তানি আয় সম্ভব। কিন্তু এ খাতে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।'

তিনি বলেন, 'ইউরোপীয়, ইতালিয়ান ও ভারতীয় কোম্পানি দেশে আসছে। কিন্তু কারও কাছ থেকে সমাধানের ভালো প্রকল্প পাওয়া যাচ্ছে না। চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাও চ্যালেঞ্জ। কোরবানির সময় চামড়ার দর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা সে দাম পান না।'

সাভারের সিইটিপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আগের ইটিপি আর এখনকার ইটিপি আলাদা। ইটিপির ১০৯টি নজেলের কেমিক্যাল নিশ্চিত করা হয়েছে। একটি মডিউল পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। আগের তুলনায় ইটিপির কমপ্লায়েন্স অনেক ভালো। আগামীতে আরও ভালো হবে। রাজশাহীতে চামড়া খাতের জন্য সিইটিপি প্লান্ট বসানোর পরিকল্পনা আছে।'

রাজধানীর হাজারীবাগকে রেড জোন থেকে বের করার বিষয়ে রাজউকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে জানিয়ে শিল্প সচিব বলেন, 'হাজারীবাগে বাই-প্রডাক্ট করার সুযোগ আছে। এতে কর্মসংস্থান হবে, রপ্তানি আয় হবে। এজন্য নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।'

ওয়েবিনারে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, 'করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সারা বিশ্বে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় চামড়া পণ্যের বাজারে নিজেদের অংশ বাড়ানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু নিজস্ব কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও কমপ্লায়েন্সের অভাবে সে সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না।'

তিনি বলেন, 'স্বাধীনতার পর থেকে কাঁচা চামড়ার রপ্তানি কমেছে ৭৯ শতাংশ। আর ফিনিশড চামড়ার রপ্তানি বেড়েছে ৮০ ভাগ। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ নিজেদের চামড়া ব্যবহার করতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এ খাতে যেসব নীতিমালা নেওয়া হয়েছে সেগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয়নি।'

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Remittance rises 30% in July

Migrants sent home $2.47 billion in the first month of the current fiscal year

5h ago