সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিক-ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ৫৫ শতাংশ

প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশি নাগরিক ও বিভিন্ন ব্যাংকের সুইস ব্যাংকে জমা করা অর্থের পরিমাণ ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ৫৫ শতাংশ বেড়ে ৮৭১ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক (সিএইচএফ) হয়েছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, এর মধ্যে ৮৪ কোটি ৪০ লাখ সিএইচএফ বিভিন্ন ব্যাংকের এবং বাকিটা বাংলাদেশি নাগরিকদের।

২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিক ও ব্যাংকগুলোর জমা অর্থের পরিমাণ ৬ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ৫৬৩ মিলিয়নে (প্রায় ৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা) দাঁড়িয়েছিল। যা টানা তৃতীয় বছরের মতো কমে যায়।

এই অ্যাকাউন্টগুলোর মালিক কারা এবং বাংলাদেশ থেকে এই টাকা পাচার করা হয়েছে কি না, সুইস ব্যাংক সে বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করেনি।

এমন সময় এই তথ্য প্রকাশিত হলো যখন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত সম্পদ বা বিদেশে গচ্ছিত নগদ টাকা যখন বৈধ উপায়ে দেশে ফেরত আনার ঘোষণা দিয়েছেন। অর্থনীতিবিদরা অর্থমন্ত্রীর ঘোষণাকে 'নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য' বলে অভিহিত করেছেন। তারা বলছেন, এটি অর্থ পাচারে উত্সাহিত করবে।

অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব করেন, রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহের জন্য আগামী বছর থেকে ৭ থেকে ১৫ শতাংশ করের বিনিময়ে দেশের বাইরে পাচার করা অর্থ বৈধ করে দেশে ফেরত আনা যাবে।

শুধু বাংলাদেশ নয়, গত বছর সুইস ব্যাংকে ভারত ও পাকিস্তান থেকেও আমানতের পরিমাণ বেড়েছে।

২০২১ সালে ভারত থেকে আমানত ৫০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন সিএইচএফে দাঁড়িয়েছে। তার আগের বছর যা ছিল ২ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন।

পাকিস্তান থেকে আমানত ২০২১ সালে ৭১০ মিলিয়ন সিএইচএফ হয়েছে, যা ২০২০ সালে ছিল ৬৪০ মিলিয়ন সিএইচএফ।

তবে, অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কা থেকে আমানত গত বছর ৬০ মিলিয়ন সিএইচএফে নেমে এসেছে। ২০২০ সালে যা ছিল ১৩০ মিলিয়ন।

দেশটির ব্যাংকিং আইন সম্পূর্ণ গোপনীয়তা ও সুরক্ষা দেওয়ার কারণে সুইজারল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের ধনীদের জন্য কর ফাঁকির উদ্দেশ্যে টাকা জমা রাখার একটি পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশিরাও সুইস ব্যাংক একাউন্টে তাদের অর্থ জমা করছেন।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিকদের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার, বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকও সুইজারল্যান্ডে টাকা জমা রাখে। তাই এই টাকাকে সরাসরি কালো টাকা হিসেবে গণ্য করা যায় না।

তবে, পাচারকারীরাও সেখানে টাকা লুকিয়ে রাখতে পারেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার সুইস সরকারকে তাদের ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের তথ্য দিতে বলতে পারে। তাহলে জানা যাবে সেখানে কী পরিমাণ অবৈধ অর্থ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক অর্থনীতিবিদ মনসুর বলেন, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশিদের মধ্যে সুইজারল্যান্ডকে ট্যাক্স হ্যাভেন হিসেবে বেছে নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

জার্সি, কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ, পানামা, সিঙ্গাপুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের মতো অন্যান্য জায়গায়ও টাকা রাখা হচ্ছে।

তিনি জানান, বাংলাদেশি অর্থ পাচারকারীদের অধিকাংশই এখন তাদের অর্থ বিদেশি ব্যাংকে জমা দেন না। বরং তারা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেন।

তিনি বলেন, 'এই অর্থের একটি বড় অংশ রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ করা হয়।'

অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments

The Daily Star  | English

100 days of govt: Major steps taken towards a ‘new Bangladesh’

Despite numerous challenges, the interim government over the last 100 days has taken many timely and significant steps that align with the vision of building a “new Bangladesh”, observed Transparency International Bangladesh yesterday.

6h ago