পাচার করা অর্থ দেশে ফেরাতে ‘সাধারণ ক্ষমা’ কাজে আসবে?

পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে সরকারের সদিচ্ছার প্রত্যক্ষ রূপ হিসেবে সামনে এসেছে কর ছাড়ের মাধ্যম।

১০ শতাংশ কর দিয়েই যেকোনো দেশে থাকা টাকা দেশে ফেরাতে পারবেন বাংলাদেশিরা। এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দ্য ডেইলি স্টার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

যারা বাংলাদেশে অপ্রদর্শিত আয়ের টাকায় স্থাবর সম্পদ কিনেছেন, তারাও অন্তত ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করে তা বৈধ করতে পারবেন।

গত বৃহস্পতিবার ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, 'যেসব দেশে এমন প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে সেখানে প্রচুর অর্থ ফেরত এসেছে।'

ইন্দোনেশিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ ফেরাতে তাদের এই পদ্ধতি কাজ করেছে।

২০১৬ সালের জুলাই মাসে ইন্দোনেশিয়া দেশটির নাগরিকদের ৯ মাসের সময়সীমা দিয়েছিল, যাতে তারা বিদেশে থাকা নিজেদের অবৈধ সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে পারেন, এর উপর কর দিতে পারেন এবং সরকারিভাবে নেওয়া ব্যবস্থার হাত থেকে বাঁচতে পারেন।

এটি ছিল ইন্দোনেশিয়ার এ ধরনের চতুর্থ উদ্যোগ। এর আগে ১৯৬৪-৬৫, ১৯৮৪ ও ২০০৮ সালেও এমন উদ্যোগ নিয়েছিল দেশটি। তবে আকর্ষণীয় প্রণোদনার অভাবে তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

তাই ইন্দোনেশিয়ার সরকার অপ্রদর্শিত সম্পদ ফেরাতে আকর্ষণীয় প্রণোদনা দিতে সচেষ্ট ছিল। তারা একটি সফল কিন্তু বিতর্কিত ইতালীয় কর প্রকল্প মডেল গ্রহণ করে, যে মডেলটি সুইজারল্যান্ডে পাচার করা কয়েক বিলিয়ন ইউরো রোমে ফেরাতে সহায়তা করেছিল।

এই সুবিধা ঘোষণার ৩ মাসের মধ্যে যারা তাদের অপ্রদর্শিত সম্পদ প্রদর্শন করেছেন তারা ২ থেকে ৪ শতাংশ কর পরিশোধ করে তা বৈধ করতে পেরেছেন। দেশটিতে ব্যক্তি পর্যায়ে নিয়মিত করের হার ৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ এবং করপোরেটদের ২৫ শতাংশ।

৩ মাস পরে কিন্তু ৬ মাসের মধ্যে যারা সম্পদ প্রদর্শন করেছেন তাদের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে ৬ শতাংশ এবং ৬ মাসের পরে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রদর্শিত সম্পদের ওপর ১০ শতাংশ কর দিতে হয়েছে।

৯ মাসের মধ্যে প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ প্রদর্শিত হয়েছিল এবং এর মধ্যে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার ইন্দোনেশিয়ায় ফেরত আসে। ফলে এই উদ্যোগকে সফল বলে দাবি করা হয়।

ইন্দোনেশিয়ার এই মডেলের সঙ্গে তুলনা করলে, বাংলাদেশের উদ্যোগটি সফল হবে না বলেই মনে হয়। কেননা, বাংলাদেশে করের পরিমাণ যেমন বেশি, তেমনি সম্পদ দেশে ফেরানোর জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমাও দেওয়া হয়নি।

অর্থমন্ত্রী জানান, যতদিন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ থাকবে ততদিন এই সুযোগ পাওয়া যাবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রশ্ন রাখেন, 'শুধুমাত্র দেশে টাকা সাদা করে ফেরানোর জন্য কেউ কেন এত খরচ করবেন?'

তিনি জানান, অনেক দেশ এই ধরনের 'সাধারণ ক্ষমা' করেছে। সেগুলো ছিল সীমিত সময়ের জন্য, নগদ অর্থ ফেরানোর ওপর অল্প কর সুবিধায় এবং কেউ এই সুযোগ না নিলে তাকে শনাক্ত করা হবে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এই প্রচারণার রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এটি বাস্তবায়ন করবে।

দ্য ডেইলি স্টার গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে যে, তারা সরকারের কাছ থেকে এখনও এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাননি।

জাহিদ হোসেন বলেন, 'টাকা পাচারে যদি কর ফাঁকি দেওয়াটাই একমাত্র বা প্রধান কারণ হয়ে থাকে তাহলে কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে সফলতার। তবে, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের জন্য কর ফাঁকি দেওয়াটা খুবই ছোট কারণ বলে মনে হয় আমার কাছে।'

'এর সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ বিদেশে নিরাপদে রেখে দেওয়া,' যোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, সরকার যদি অবৈধ অর্থ কোথায় আছে তা শনাক্তের ব্যবস্থা করতে পারে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা সেই সম্পদ বৈধ করার চেষ্টা করতে পারে।

তিনি বলেন, 'কিন্তু এই নীতিগুলো সৎ করদাতাদের কর দিতে নিরুৎসাহিত করে। এটা কোনোভাবেই নৈতিক নয়। এমন হলে সৎ করদাতারা কি কর দিতে আগ্রহী হবে?'

তিনি জানান, সৎ করদাতাদের ওপর যে প্রভাব পড়ে সেই বিষয়টি খুব কমই মূল্যায়ন করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Netanyahu approves Lebanon ceasefire deal ‘in principle’: media

Israeli Prime Minister Benjamin Netanyahu approved the emerging ceasefire deal with Hezbollah "in principle" during a security consultation with Israeli officials on Sunday night, a source familiar with the matter said

25m ago