‘তিন শূন্য’র পৃথিবী গড়তে অ্যাথলেটদের প্রতি ড. ইউনূসের আহ্বান

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অর্থনীতিবিদ ও শান্তিতে নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস 'তিন শূন্য'র পৃথিবীর নেতৃত্ব দিয়ে পৃথিবীকে বদলে দিতে অলিম্পিকের অ্যাথলেটদের আহ্বান জানিয়েছেন।

এই তিন শূন্যর একটি শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ, দ্বিতীয়টি শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা এবং তৃতীয়টি উদ্যোক্তা শক্তি বিকাশের মাধ্যমে শূন্য বেকারত্বের। এই তিনটি খাতে শূন্য তৈরির মাধ্যমে একটি নতুন পৃথিবী গড়ার আহ্বান জানান তিনি।

ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির 'অলিম্পিক লরেল' সম্মাননা গ্রহণ করার পর এক বক্তব্যে এ আহ্বান জানান।

টোকিও অলিম্পিক ২০২০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। অধ্যাপক ইউনূস দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।

বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'অলিম্পিক লরেল গ্রহণ করতে পেরে আমি অভিভূত এবং সম্মানিত বোধ করছি। আমি দুঃখিত যে, আমি আপনাদের সঙ্গে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারিনি। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ক্রীড়ার সামাজিক মাত্রার দিকটি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে।'

অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী অ্যাথলেটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'আপনারা, পৃথিবীর অ্যাথলেটরা, পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার কাজে নেতৃত্ব দিতে পারেন এবং একটি 'তিন শূন্য'র পৃথিবী— শূন্য নীট কার্বন নিঃসরণ, দারিদ্র্য চিরতরে দূর করতে শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং প্রতিটি মানুষের সহজাত উদ্যোক্তা শক্তি বিকাশের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শূন্য বেকারত্বের একটি নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করতে পারেন।'

এ সময় তিনি শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির মিশন ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সবার সাফল্য কামনা করেন।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির আইওসি ইয়ং লিডার্স প্রোগ্রাম, 'ইমাজিন' পিস ইয়ুথ ক্যাম্প ও অ্যাথলেট৩৬৫ বিজনেস অ্যাকসিলারেটরসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পে সহায়তা করছেন। খেলাধুলার মধ্য দিয়ে সামাজিক সমস্যা সমাধানে বৈশ্বিক সামাজিক ব্যবসা নেটওয়ার্ক 'ইউনূস স্পোর্টস হাব' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নের জন্য তাকে 'অলিম্পিক লরেল' দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ বলেন, 'অলিম্পিক লরেলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আধুনিক অলিম্পিক গেমসের প্রতিষ্ঠাতা ও পুনঃপ্রবর্তক ব্যারন পিয়েরে দ্য কুবার্তার রূপকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এটি একইসঙ্গে প্রাচীন অলিম্পিক গেমসের আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতিফলনও বটে। যার অন্যতম লক্ষ্য শান্তি ও ক্রীড়ার মধ্য দিয়ে সমাজের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা।'

তিনি আরও বলেন, 'এই আদর্শ ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় অধ্যাপক ইউনূসের কাজ দৃষ্টান্তমূলক। তিনি উদারভাবে তার বিপুল জ্ঞানভাণ্ডার দিয়ে খেলোয়াড় ও অলিম্পিক কমিউনিটিকে সমৃদ্ধ করছেন। আমাদের সবার কাছে তিনি এক বিশাল প্রেরণা। তিনি খেলোয়াড়দের খেলা পরবর্তী জীবনে সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল ব্যবসা উদ্যোক্তায় পরিণত হতে সহায়তা করছেন এবং এভাবে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহে অবদান রাখতে আমাদের মূল্যবোধকে তুলে ধরছেন।'

'বিশেষ করে প্যারিস-২০২৪ এর মধ্য দিয়ে অলিম্পিক গেমসের জন্য তিনি একটি নতুন মডেল তৈরিতে আমাদের সহায়তা করে যাচ্ছেন, যেখানে পরিবেশকে সর্বনিম্ন মাত্রায় বিঘ্নিত করে আয়োজক দেশ তার সংস্কৃতি ও মানুষের জন্য সর্বোচ্চ অর্জন নিশ্চিত করতে পারবে। অলিম্পিক কমিউনিটির জন্য তিনি যা করছেন সেজন্য আমরা তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই,' বলেন অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'মানুষকে সমবেত করতে পৃথিবীতে অলিম্পিক গেমস ও ক্রীড়া সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে। অলিম্পিক গেমস শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে  বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যকে মহিমান্বিত করে, সমগ্র পৃথিবীকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। পিয়াংচেংয়ে ২০১৮ শীতকালীন অলিম্পিকে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাথলেটদের সমবেত জাতীয় কুচকাওয়াজ ক্রীড়ার মাধ্যমে শান্তির বিপুল সম্ভাবনার কথা আমাদের প্রবলভাবে মনে করিয়ে দেয়। "অলিম্পিক যুদ্ধবিরতি" স্বচ্ছ প্রতিযোগিতা, শান্তি, মানবতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে একটি উন্নততর পৃথিবী সৃষ্টির লক্ষ্যকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা এই শক্তিকে সবচেয়ে কার্যকর উপায়ে পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারি। খেলাধুলার মধ্যে পৃথিবীকে উদ্দীপ্ত করে জীবন পরিবর্তিত করার ক্ষমতা রয়েছে। আর এই ক্ষমতাকে উন্মোচিত করতে সবচেয়ে কার্যকর কৌশল হলো সামাজিক ব্যবসা।'

২০১৬ সালে রিওতে চালু হওয়া 'অলিম্পিক লরেল' প্রতি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া হচ্ছে। প্রাচীন অলিম্পিক গেমসের সঙ্গে একটি প্রতীকী সংযোগ হিসেবে ট্রফিটির অধোভাগটি তৈরি করা হয়েছে গ্রীসের অলিম্পিয়ার একটি পাথরের রেপ্লিকা দিয়ে।

অলিম্পিক এজেন্ডা ২০২০ এর ২৬ নম্বর সুপারিশ থেকে উদ্ভূত উদ্যোগগুলোর একটি হচ্ছে অলিম্পিক লরেল, যা ক্রীড়া ও সংস্কৃতির মধ্যে মেলবন্ধনকে আরও শক্তিশালী করতে অলিম্পিক আন্দোলনের ভবিষ্যতের জন্য একটি কৌশলগত রোডম্যাপ। ক্রীড়ার মাধ্যমে শিক্ষা, সংস্কৃতি, উন্নয়ন ও শান্তিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি এই বিশেষ সম্মাননা দিয়ে থাকে। 

কেনিয়ার অলিম্পিয়ান ও সমাজ সংস্কারক কিপ কাইনোকে ২০১৬ সালের ৫ আগস্ট রিও ডি জেনিরোতে সর্বপ্রথম অলিম্পিক লরেল সম্মাননা দেওয়া হয়।

২০২০ সালের অলিম্পিক লরেলের জন্য বাছাই প্যানেলের সদস্য হিসেবে ছিলেন পাঁচটি মহাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী। এই কমিটির সদস্যরা হলেন— এশিয়া মহাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী বিশ্বখ্যাত জাপানী চিত্রপরিচালক নাওমি কাওয়াসে, দুই আমেরিকার পক্ষে প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী ও কানাডার সাবেক গভর্নর জেনারেল জুলি পেয়েট, আফ্রিকার পক্ষে ইউএন উইমেনের নির্বাহী পরিচালক দক্ষিণ আফ্রিকার ফুমজিল লামবো-এনকুকা, ওশেনিয়ার পক্ষে প্যাসিফিক আইল্যান্ড ফোরাম সেক্রেটারিয়েটের সেক্রেটারি জেনারেল ও পাপুয়া নিউ গিনির রাজনীতিবিদ ডেম মেগ টেলর, ইউরোপের পক্ষে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির অনারারি প্রেসিডেন্ট জ্যাক রগ এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh lags behind in rooftop solar race

Despite significant potential for rooftop solar energy, Bangladesh has lagged behind in development, while Vietnam has emerged as a regional leader in the sector

1h ago