ঢাকার হাটে ৪ লাখ টাকায় এক জোড়া ‘মিরকাদিম’
'প্রায় ১০ মাস ধরে সন্তানের মতো লালন-পালন করে বড় করেছি মিরকাদিমের ঐতিহ্যবাহী ধবল গরু। ভালো খাবার দিয়েছি। ওদের জন্য আলাদা ঘর, ফ্যান, মশারির ব্যবস্থাও আছে। বাসায় যেভাবে আরাম করে মানুষ থাকেন সেভাবেই রেখেছি। রাতদিন খেটেছি। আগামী শুক্রবার ঢাকার রহমতগঞ্জ হাটে নিয়ে যাব। মিরকাদিমের এক জোড়া ধবল গরুর দাম ৪ লাখ টাকায় বিক্রির আশা করছি।'
দ্য ডেইলি স্টারকে এমনটিই বলেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার টেংগর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন। তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে মিরকাদিমের ঐতিহ্যবাহী ধবল গরু লালন-পালন করে আসছেন। তার বাবা মৃত ফকির চানও এ পেশায় ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর তার ২ ছেলে আক্তার ও মঞ্জিল হোসেন এ পেশা ধরে রেখেছেন।
যে কয়টি পরিবার ঐতিহ্যবাহী এ ধবল গরু লালনপালন করেন তাদের মধ্যে আক্তারের পরিবারটি অন্যতম।
গত মঙ্গলবার বিকেলে আক্তারের ঘরের দরজার পর্দা সরানোর সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় ২টি ধবল গরু। কোরবানির জন্য লালনপালন করছেন তিনি। গরুর জন্য আলাদা আধাপাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। সেখানে প্রায় ৫ বছর ধরে পরিবারটি কোরবানির গরু লালনপালন করে আসছে। ধবল গরুর যত্নে তারা অনেক পরিশ্রম করেন। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখেন। বাইরের কাউকে গরুর কাছে যেতে দেন না।
আক্তার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামী শুক্রবার সকালে মিরকাদিম লঞ্চঘাট থেকে ট্রলারে গরু ২টি রহমতগঞ্জ হাটে নিয়ে যাব। কম দাম পেলেও বিক্রি করে আসতে হবে। কয়েকদিন আগে ঢাকা ও স্থানীয় ৬-৭ জন ক্রেতা গরু কিনতে এসেছিল। তারা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বললেও বিক্রি করিনি।'
তিনি জানান, গরু ২টিকে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫০০ টাকার খাবার দিতে হয়। দিনদিন গো-খাদ্যের দাম বেড়েই চলেছে। তাই বেশি খাবার দিতে পারছি না। বুট, ভুষি, কুড়া, গমের ভুষি, খুদ, খৈল ইত্যাদি খাওয়ানো হয়। আগে প্রতি কেজি খৈলের দাম ছিল ৮০ টাকা, বর্তমান বাজারে ১১৫ টাকা। বুট-ভুষি প্রতি কেজি ৪০-৪২ টাকা ছিল, এখন ৮৫ টাকা।
'অনেক কষ্ট করে বড় করেছি। বিক্রি করতে খারাপ লাগে। ধবল গরু দেখতে সুন্দর। খুবই শান্ত প্রকৃতির। গত বছর একটি গরু লালন-পালন করে বিক্রি করেছিলাম। যতদিন আছি এ পেশা ধরে রাখব,' যোগ করেন আক্তার হোসেন।
Comments