টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে ডলার বিক্রি বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
গত বছর রেকর্ড পরিমাণ মার্কিন ডলার কিনলেও, রেমিট্যান্স কমে যাওয়া ও আমদানি বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে এবার তা বিক্রি করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি বছরের জুলাই মাসেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০৫ মিলিয়ন ডলার কেনে। কিন্তু, এক বছরেরও বেশি সময় পর টাকার অবমূল্যায়ন শুরু হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি আগস্ট মাস থেকে ডলার বিক্রি শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য অনু্যায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি মাসে এ পর্যন্ত ২২৩ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই হস্তক্ষেপকে সময়োপযোগী একটা পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
যদিও তারা বলছেন, সামনের দিনগুলোতে প্রবাসী আয় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যদি রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে থাকে তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এখানে নিয়মিত হস্তক্ষেপ করতে হবে।
আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে চলতি বছরের ২ আগস্ট ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। গত বছরের জুলাই থেকেই এই একই বিনিময় মূল্য ছিল ডলারের।
পরে, ২ আগস্ট থেকে তা বাড়তে থাকে এবং গত পরশু ২৫ আগস্ট ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৫ টাকা ২০ পয়সা।
টাকার অবমূল্যায়নে লাগাম টানার পদক্ষেপ হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছর স্থানীয় ব্যাংকগুলো থেকে ৭ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল।
বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে প্রবাসী আয় গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রেমিট্যান্স কমতে থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও ডলার বিক্রি করতে হবে।'
জুলাই মাসে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। যা আগের পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যাপক টিকাদান কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বিশ্বব্যাপী যাতায়াত কিছুটা সহজ হয়েছে। এ অবস্থায় হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোও পুনরায় জোরদার হয়েছে। এতে অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ কিছুটা থমকে গেছে।
বৈশ্বিক লকডাউনের সময় আন্তর্জাতিক চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় অবৈধ আন্তঃসীমান্ত লেনদেন ব্যাপক বাঁধার মুখে পড়ে। ফলে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়।
পাশাপাশি, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার কারণে বাংলাদেশের জন্য আমদানি খরচও বেড়েছে।
এদিকে, আমদানির চাহিদা বেড়ে চললেও রপ্তানির পরিমাণ সে অনুপাতে বাড়েনি।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বিলম্বিত সুবিধা ভোগ করছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৩৬০ দিনের মধ্যে পেমেন্ট নিষ্পত্তির ব্যাপারে স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে অনুমতি দিয়েছে।
এমরানুল হক বলেন, 'বর্ধিত এই সময়কাল প্রায় শেষের দিকে। তাই, ব্যাংকগুলো এখন ডলারের ঘাটতিতে পড়ছে।'
তবে, টাকার অবমূল্যায়নের এই প্রবণতা বেশিদিন স্থায়ী হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের ভাষ্য, বাজারের গতি-প্রকৃতি বুঝতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে।
তিনি বলেন, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মান কমা কিংবা বাড়ার বিষয়ে প্রবাসী আয় মূল নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলীর অভিমত, টাকার মান কমলে তা অর্থনীতিতে খুব একটা সমস্যা তৈরি করবে না। কারণ, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী আছে।
মঙ্গলবার দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলার। গত এক বছরে রিজার্ভ বেড়েছে ২৩ শতাংশ।
টাকার অবমূল্যায়ন রপ্তানিকারকদের জন্য আশীর্বাদ। কারণ, এতে বিদেশের বাজারে বাংলাদেশে তৈরি পণ্য সস্তা হয়ে যায়। তবে, আমদানিকারকরা তাদের অবস্থান সুবিধাজনক দেখছেন না।
এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক কুতুবউদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার ওপর জোর দেওয়া উচিত।'
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ।
Comments