১৭ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহে ব্যর্থতা, মূল্য তালিকা না দেখানো, পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করা এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রাহকদের প্রতারিত করার দায়ে ১৭টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

জরিমানা করা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—দারাজ বাংলাদেশ, আজকেরডিল, ডেইলি শপিং, অথবা, সহজ, পিকাবু, রকমারি, বইবাজার, বিডিশপ, ঘরবাজার, প্রিয়শপ, বিক্রয়.কম, ফুডপান্ডা, পাঠাও, চালডাল, ফাল্গুনি শপ এবং কিকশা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘনের জন্য ই-কমার্স সংস্থাগুলোকে জরিমানা করা হয়েছে।

জনপ্রিয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজ বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এ ছাড়াও, সহজকে ৬৮ হাজার টাকা, আজকেরডিলকে ৪৫ হাজার টাকা, চালডালকে ২৫ হাজার টাকা, ফুডপান্ডাকে ১৫ হাজার টাকা এবং পাঠাওকে ৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

দারাজ বাংলাদেশের চিফ করপোরেট অ্যাফেরার্স অফিসার হাসিনুল কুদ্দুস বলেন, ২০১৮ সালের জন্য দারাজকে দুটি বড় জরিমানা করা হয়েছে।

তিনি জানান, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দারাজ একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছে এবং এটি এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

সহজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা এম কাদির বলেন, 'সম্প্রতি প্রকাশিত ৮টি অমীমাংসিত মামলায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পুনঃরায়ের অপেক্ষায় আছি। গত ৪ বছরে ৮৫টি মামলার অধিকাংশেই আমরা জিতেছি এবং অল্প কয়েকটির জন্য জরিমানা দিয়েছি। আর এগুলোও অফলাইন তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতাদের কারণে, যার ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।'

আজকেরডিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, 'আপনি যখন পরিষেবা দিচ্ছেন তখন কিছু ভুল হতেই পারে।'

চালডালের চিফ অপারেটিং অফিসার জিয়া আশরাফ বলেন, ভোক্তারা যদি কোনো অভিযোগ করেন, কোম্পানি তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করে। 'কখনো কখনো আমরা সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় পাই না।'

এক বিবৃতিতে ফুডপান্ডা জানিয়েছে, তাদের গ্রাহকরা যেকোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে তা অবিলম্বে সমাধানে তারা কাজ করে এবং গ্রাহকদের অভিযোগ যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের চেষ্টা করে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, ১৭টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯০ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে পণ্য বা সেবা সঠিকভাবে না দেওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, ২০২০ সাল থেকে ই-কমার্স সংস্থাগুলোর জরিমানার মুখোমুখি হওয়া বাড়ছে। এ বিষয়ে 'ভোক্তাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।'

জরিমানা করা হয়নি ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ ও ধামাকাকে

বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ এবং ধামাকা শপিংকে কোনো জরিমানা করা হয়নি।

এখন পর্যন্ত ইভ্যালির বিরুদ্ধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ৭ হাজার ১৩৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে। যার মধ্রে ৬৩ শতাংশের নিষ্পত্তি হয়েছে।

ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে ২ হাজার ৬৪৩টি। যা মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে হার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ ছাড়াও, ধামাকা শপিংয়ের বিরুদ্ধে জমা হওয়া ৩২৩টি অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশের।

বর্তমানে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ এবং ধামাকার মালিক ও শীর্ষ কর্মকর্তারা জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের মামলায় কারাগারে আছেন।

এই ৩টি প্রতিষ্ঠানকে কেন জরিমানা করা হয়নি জানতে চাইলে বাবলু কুমার সাহা জানান, ভোক্তারা বিপুল পরিমাণে পণ্য অর্ডার করেন। কিন্তু জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দিতে পারে।

তিনি বলেন, 'জরিমানা করা হলে একজন ভোক্তা ১২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন। এতে তারা বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বে।'

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান মনে করেন, আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।

তিনি বলেন, 'যেসব প্রতিষ্ঠান একই পদ্ধতিতে বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। তাদের বড় অংকের জরিমানা করা উচিত।'

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল জানান, বড় কোম্পানিগুলো লাখো গ্রাহকের সঙ্গে ব্যবসা করেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ থাকবেই।

তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন এবং ই-ক্যাব একটি ডিজিটাল সিস্টেম তৈরি করছে। যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহকদের অভিযোগ গ্রহণ করা হবে এবং নিষ্পত্তি করা হবে।

কেন্দ্রীয় অভিযোগ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম গ্রাহকদের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ই-ক্যাব এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। যে অভিযোগগুলো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম সমাধান করবে না সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থায় পাঠানো হবে।

বাংলাদেশে প্রায় আড়াই হাজার ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং আড়াই লাখ ফেসবুকভিত্তিক পেইজ রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Why gold costs more in Bangladesh than in India, Dubai

Gold prices in Bangladesh continue to soar, leaving many to wonder why the precious metal costs more here than in neighbouring India or the global trading hub Dubai.

1h ago