গ্রাহকের অর্থ ফেরতের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

বিভিন্ন প্রতারক কোম্পানির কাছ থেকে গ্রাহকের অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে বহু বছর ধরে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যদিও, এসব কোম্পানি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েই নিবন্ধিত।

এই ধরনের কোম্পানির মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের ফেরত দেওয়ার জন্য এসব কোম্পানির কাছ থেকে অর্থ আদায়ের কোনো রেকর্ড নেই।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হাজার হাজার মানুষ বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনি গ্রুপের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ডেসটিনির মালিককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

একইভাবে, প্রতারক এমএলএম কোম্পানি ইউনিপে টু ইউ ও যুবকের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়নি। ফলে গ্রাহক ও মার্চেন্টরা বঞ্চিত রয়ে গেছেন।  

এসব কোম্পানি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) রেজিস্ট্রারে নিবন্ধিত। এরপরও, যখনই কোনো কোম্পানি গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনা ঘটায়, তখনই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলে কোম্পানির কাছ থেকে টাকা আদায় করা তাদের দায়িত্ব নয়।

কিছু বৈঠক এবং পরে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ওপর প্রতারক কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার মাধ্যমেই কাজ শেষ করে মন্ত্রণালয়।

১০টি ই-কমার্স কোম্পানির প্রতারণামূলক কার্যকলাপের বিষয়েও একই কাজ করতে দেখা গেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। আবারও তারা বলছে, অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী গত বুধবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, সরকার ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারবে না। কারণ, সরকার টাকা নেয়নি এবং ব্যবসার লাভের ভাগিদারও হয়নি। এর বদলে, ভবিষ্যতে যেনো কোনো প্রতারক কোম্পানির মাধ্যমে মানুষ প্রতারিত না হয় সেই লক্ষ্যে শিগগিরই কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

প্রতারণা এড়াতে মানুষের লোভ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহসানুল করিম জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোম্পানি মালিকদের জেলে পাঠানো হয় এবং টাকা আদায় করা হয় না।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'এসব ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি বোর্ড গঠন করতে পারে বা কোম্পানিগুলো পরিচালনার জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ করতে পারে, যেনো এসব কোম্পানি লাভ করতে শুরু করে এবং গ্রাহক-মার্চেন্টদের অর্থ ফেরত দিতে পারে।'

করিম আরও বলেন, প্রতারক কোম্পানি থেকে অর্থ আদায়ের দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। কারণ এগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আরজেএসসিতে নিবন্ধিত।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম সারওয়ার বলেন, 'বর্তমানে দেশে ই-কমার্সের জন্য কোনো নির্দিষ্ট আইনি ব্যবস্থা নেই। ফলে বর্তমান আইনি কাঠামোর অধীনে একমাত্র কার্যকরী ব্যবস্থা হচ্ছে অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে দায় এড়ানোর চেষ্টা করবে, তা বোঝা খুব সহজ।'

প্রতারক কোম্পানিগুলোর টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো নজির নেই বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক সারওয়ার।

তিনি আরও বলেন, 'এখানে গ্রাহক, বিনিয়োগকারী ও মার্চেন্টদেরও দায়িত্ব আছে। তারা যেনো কোনো ভুয়া কোম্পানির প্রতারণার শিকার না হন, তা তাদেরও নিশ্চিত করতে হবে।'

ক্রেতাদের সাবধান হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সাঈদা আনজু বলেন, 'বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসব কোম্পানি থেকে অর্থ আদায়ের দায়িত্ব এড়াতে পারে না।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতারক ই-কমার্স কোম্পানির মালিকদের শাস্তি দিতে এবং অর্থ উদ্ধার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থ পাচার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা উচিত।'

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম ‍

Comments