‘যদি’ বা ‘কিন্তু’ নয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করতেই হবে

কিছুদিন আগে আমরা বলেছিলাম, কোনো আইনই যেন অবিচারের আইন না হয়। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ঠিক সেরকমই একটি আইন।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

কিছুদিন আগে আমরা বলেছিলাম, কোনো আইনই যেন অবিচারের আইন না হয়। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ঠিক সেরকমই একটি আইন।

এটি এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে, এই আইনের যদি সুফল থেকেও থাকে, তারচেয়ে ঝুঁকি অনেক বেশি। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ থাকা মানে, সত্য অস্বীকার করা। আইনটি নিয়ে আইনমন্ত্রীর মন্তব্য দুর্ভাগ্যবশত ওই পর্যায়েই পড়ে।

দ্য ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার আইনটির ব্যবহার ও সম্ভাব্য সংশোধনী সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী মোট ৪ বার 'যদি' শব্দটি ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, 'যদি প্রয়োজন হয়' তাহলে সরকার সর্বোত্তম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে আইনটিতে পরিবর্তন আনবে। যেহেতু আইনটির কিছু অপপ্রয়োগ হয়েছে।

এখানে 'কিছু' কথাটা অবশ্যই পরিস্থিতির অবমূল্যায়ন। এ ছাড়া, একজন মন্ত্রী যখন 'যদি প্রয়োজন হয়' শব্দগুলো বলেন, তখন তা আইনটির অতি জরুরি সংস্কারের সম্ভাবনাকে দুর্বল করে দেয়। দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনে এককভাবে সবচেয়ে কার্যকরী হাতিয়ার হিসেবে প্রমাণিত একটি আইন নিয়ে দীর্ঘ ৪ বছর পরও কেন সন্দেহ থাকবে? এটিকে সম্পূর্ণভাবে সংশোধন বা বাতিল করা ছাড়া আর কী করার থাকতে পারে?

ইচ্ছামতো ব্যবহার করা আইনি অস্ত্র হিসেবেই শুধু এখন এর ব্যবহারিক প্রয়োগ আছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় প্রায় ৮৯০টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে ২০৬টিই দায়ের করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা। আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এসব মামলার বেশিরভাগই করা হয়েছে বিরোধী দলের কর্মী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে।

এর মাধ্যমে বোঝা যায়, আইনটির মূল লক্ষ্য সাইবার অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেওয়া নয়। এর লক্ষ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের, বিশেষ করে রাজনৈতিক কর্মী, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের ভয় দেখানো। এর মাধ্যমে আরও বোঝা যায়, কর্তৃপক্ষ নিজেদের কাজকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য যা-ই বলুক না কেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের আলোকে এ আইন সংশোধন করা কেবল প্রয়োজনীয়ই নয়, অতি প্রয়োজনীয়। তবে আমরা স্বীকার করছি, সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা কিছুটা কমেছে।

আইনমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনার উদ্ধৃতিও দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার বিচারের আগে যেন এটি পরীক্ষার জন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও আইন বিশ্লেষকদের সমন্বয়ে গঠিত সেলে পাঠানো হয়। যদি এ কাজটি সঠিকভাবে করা হয়, তাহলে মামলার সংখ্যা কমবে তা সত্য। কিন্তু এই উদ্যোগের মাধ্যমে আইনটির প্রয়োজনীয় সংস্কার বা পুলিশ, বিচার বিভাগ ও ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা ভিন্নমতাবলম্বীদের ক্ষেত্রে এসব মামলায় কেমন আচরণ করবে, তা নির্ধারিত হয় না।

তাই আমরা কালক্ষেপণ না করে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রশ্নবিদ্ধ বিধানগুলো সংশোধন করার আহ্বান জানাচ্ছি সরকারের প্রতি। একইসঙ্গে, বাকস্বাধীনতা প্রয়োগের জন্য কেউ যেন এর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।

Comments

The Daily Star  | English
interim government's dialogue with BNP

BNP wary of constitutional vacuum

The BNP appears to be apprehensive about the sudden controversy over the resignation letter of ousted prime minister Sheikh Hasina

8h ago