মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুন

ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আয়োজিত সাম্প্রতিক সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন একটি ভয়াবহ অথচ অপ্রকাশ্য সত্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতার নিন্দা জানালেও, দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

পাশাপাশি, দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কও অব্যাহত রেখেছে বিভিন্ন দেশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অকপটতার জন্য আমরা তার প্রশংসা করছি এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য তিনি যে আহ্বান জানিয়েছেন, তার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি।

২০১৭ সালে জাতিসংঘের তৎকালীন মানবাধিকার প্রধান রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশন'কে 'জাতিগত নির্মূলের টেক্সটবুক উদাহরণ' বলে অভিহিত করেছিলেন। এরপর থেকে বাংলাদেশ সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই গণহত্যায় যুক্ত অপরাধীদের প্রতি নিন্দাসূচক শব্দ ছুড়েছে এবং মানবিক প্রতিক্রিয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। কিন্তু, যখন মিয়ানমারকে আমাদের কিছু উন্নয়ন সহযোগীসহ অন্যদের কাছ থেকে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র পেতে দেখা যায়, তখন তাদের সেসব কথা ফাঁকা বুলি মনে হয়।

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন, রাশিয়া, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া, ইসরায়েল, ইউক্রেন ও ফিলিপাইন একদিকে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়ে শান্তির আহ্বান জানাচ্ছে, অন্যদিকে মিয়ানমারকে অস্ত্রও সরবরাহ করছে।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাদের বেসামরিক সহযোগীদের সহায়তায় নিজেদের নাগরিকদের বিরুদ্ধে নির্মমভাবে সহিংসতা ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে—বিষয়টি শুধু  এখানেই শেষ নয়। তারা গণতান্ত্রিক সংস্কার গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে, দেশের ক্ষমতা দখলের জন্য অভ্যুত্থান করেছে, গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকে সহিংসভাবে দমন করেছে, সশস্ত্র জাতিগত সংগঠনগুলোর সঙ্গে গৃহযুদ্ধের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং বাকস্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার দমন করা অব্যাহত রেখেছে।

এরপরও গত ৪ বছরে মিয়ানমারের সঙ্গে অনেক উন্নত দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থনও কমে গেছে। বিশ্ব যদি বাণিজ্যের স্বার্থে মিয়ানমারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অবাধে সুযোগ দিতে থাকে, তাহলে তা বৈশ্বিক ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক মহলের নৈতিক দায়িত্ব সম্পর্কে কী ধারণা দেয়?

মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ তৈরিতে অবশ্যই অর্থনৈতিক ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। শুধুমাত্র কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা বা কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাই যথেষ্ট নয়।

পাশাপাশি, মিয়ানমার যেন নিজের কাজের দায় নেয়, তা নিশ্চিত করতে প্রধান আঞ্চলিক দেশগুলোকে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।

বাংলাদেশের মতো শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া দেশগুলোর ওপর থেকে চাপ সরিয়ে সমস্যার উৎসের দিকে (এই ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সামরিক শাসন ও তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন) মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার সময় এসেছে আন্তর্জাতিক মহলের।

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Shanto to quit captaincy after SA Tests?

It was learnt that the board wants Shanto to continue as skipper and are trying to convince him to revert his decision

48m ago