পুলিশকে অবশ্যই সাইবার অপরাধের শিকার নারীদের সহায়তা করতে হবে
নারী ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য একাধিক প্ল্যাটফর্ম ও আইন প্রয়োগকারী ইউনিট থাকা সত্ত্বেও সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন নারী-শিশুরা। এটি খুবই উদ্বেগজনক বিষয়। আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, নারীরা অভিযোগ করার পর পুলিশের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছেন না।
বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, তারা পুলিশ সদর দপ্তরের অধীনে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন (পিসিএসডব্লিউ) উইংয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু তাতে কোনো উপকার হয়নি।
এক সমীক্ষা অনুসারে, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত পিসিএসডব্লিউ উইংয়ে এ সংক্রান্ত অন্তত ১২ হাজার ৬৪১টি অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাইবার লাইন পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাইবার অপরাধের শিকার প্রায় ৮৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ নারীর অভিযোগের সুরাহা হয়নি৷ সাইবার অপরাধ দমনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তা বা অদক্ষতার মাত্রার ধারণা পাওয়া যায় এই সমীক্ষা থেকে।
সাইবার স্পেসে যখন নারীরা সাইবার অপরাধের শিকার হন, তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল বা হয়রানি করা হয়, এমনকি এ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য তাদের পরিবার তাদেরকেই দোষ দিতে শুরু করে— তখন পুলিশও সাহায্য না করলে তারা হতাশ হয়ে পড়েন। অথচ তাদের সহায়তা করা পুলিশের দায়িত্ব এবং এ কাজটি করতে পুলিশ বাধ্য।
সমাজ ও পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নারীদের জন্য তাদের সমস্যা শেয়ার করা বা সমাধানের জন্য অভিযোগ দায়ের করা আরও কঠিন হয়ে উঠে। তার ওপর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারায় অপরাধীরা এ ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার সাহস পায়। সম্প্রতি সাইবার অপরাধের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, মনে হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী যে কেউ এই ধরনের অপরাধের শিকার হতে পারেন।
সাইবার লাইনের সমীক্ষা অনুসারে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রায় ৭৯ শতাংশই সাইবার অপরাধের শিকার হন। প্রশ্ন হলো, ব্যবহারকারীদের জন্য সাইবারস্পেস নিরাপদ করতে কী করা যেতে পারে বা করা উচিত?
এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। পাশাপাশি, ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এসব অপরাধ দমনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বর্তায়। বর্তমান অবস্থা দেখে আমরা ধরে নিতে পারি, সাইবার অপরাধ মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, এমনকি সঠিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাও নেই তাদের।
তারা যদি এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য উন্নত ব্যবস্থা তৈরি না করে ও কাজের গতি ত্বরান্বিত না করে, তাহলে আমরা শিগগির পরিস্থিতির পরিবর্তন দেখার আশা করতে পারি না। এ অবস্থায় আমরা কর্তৃপক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।
Comments