পুরস্কার নয়, সরকারের উচিত অর্থ পাচারকারীদের সাজা দেওয়া

প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী নামমাত্র কর দিয়ে বিদেশ থেকে টাকা ফেরত আনার সুযোগ রাখার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে আমরা হতবাক।

বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় তিনি আবারও প্রস্তাবটির পক্ষে কথা বলেছেন। একইসঙ্গে, সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের এই উদ্যোগের বিরোধিতা না করতে বলেছেন তিনি।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মাত্র ৭ থেকে ১৫ শতাংশ করের বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ বৈধ করা যাবে।

অর্থমন্ত্রী বলছেন, এর ফলে রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রার সংগ্রহ বাড়বে। তবে আমরা তার সঙ্গে একমত নই। আমরা মনে করি, এই উদ্যোগটি অনৈতিক এবং এটি কেবল ভবিষ্যতে আরও অর্থ পাচারকেই উৎসাহিত করবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রস্তাবটিকে অগ্রহণযোগ্য-অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, এটি অর্থপাচারকারীদের আইন থেকে অনৈতিক সুরক্ষা দেবে এবং শাস্তি পাওয়ার বদলে তারা পুরস্কৃত হবেন।

আমরা তাদের মতামতের সঙ্গে একমত। আমরা মনে করি, এই ধরনের উদ্যোগ দেশের নিয়মিত করদাতা ও ব্যবসায়ীদের হতাশ করবে। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিও (এফবিসিসিআই) আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, এই উদ্যোগ মানুষকে দেশ থেকে অর্থ পাচারে উৎসাহিত করতে পারে।

অর্থমন্ত্রী তার প্রস্তাবের পক্ষ সমর্থনে ইন্দোনেশিয়ার মতো অন্যান্য দেশের উদাহরণও দিয়েছেন, যারা এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনেছে।

কিন্তু, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্য কোনো দেশের সঙ্গে তুলনা চলে বলে আমরা মনে করি না। কারণ, বাংলাদেশের অর্থ পাচারকারীরা সরকারের দেওয়া অর্থ সাদা করার সুযোগ গ্রহণ করে, এমন ঘটনা আমরা খুব কমই দেখেছি।

সিপিডির মতে, বিগত বছরগুলোয় এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে খুব কম টাকা বৈধ হয়েছে। তাহলে সরকার কেন বারবার তাদের এমন সুযোগ দিচ্ছে?

এবারের বাজেট সাধারণ মানুষের দুর্দশা লাঘবে ব্যর্থ হয়েছে। সমাজে মূল্যস্ফীতি ও ক্রমবর্ধমান বৈষম্য রোধে এতে কোনো বাস্তবসম্মত ব্যবস্থার প্রস্তাব রাখা হয়নি। অথচ অর্থপাচারকারীদের ঠিকই অবৈধ টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটি সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির পরিচয় দেয়।

পাচারকারীদের অর্থ সাদা করার সুযোগ না দিয়ে সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। দেশের আইন অনুসারে, অর্থ পাচারের শাস্তি হলো পাচার করা অর্থ বাজেয়াপ্ত করা, পাচারকৃত অর্থের দ্বিগুণ জরিমানা ও ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।

আইন প্রয়োগ করতে এবং দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধে সরকারের বাধা কোথায়? আমরা কি বিশ্বাস করে নেবো যে সরকারের সামর্থ্য বা রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আছে? সরকারকে অবশ্যই দুর্বল চিন্তাভাবনা থেকে তৈরি এসব নীতির ভার বইতে হবে, যেগুলো বছরের পর বছর ধরে অর্থ পাচারকারীদের সুযোগ দিয়ে আসছে।

Comments

The Daily Star  | English

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

17h ago