৬ মাসে ৪৭৬ ধর্ষণ

নারী-কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে রাষ্ট্র কী করেছে?

প্রতীকী ছবি। স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বাংলাদেশে নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ঘটনায় আমরা কতটা আতঙ্কিত, তা প্রকাশ করতে শব্দই যথেষ্ট নয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নতুন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের প্রথম ৬ মাসে দেশে অন্তত ৪৭৬ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৪ জন ধর্ষণের পরে মারা গেছেন এবং ৬ জন আত্মহত্যা করেছেন।

এই সময়ের মধ্যে আমাদের নারী ও কন্যাশিশুরা আরও অনেক ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে মোট ২২৮ জন নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৪০ জন মারা গেছেন এবং ৪২ জন আত্মহত্যা করেছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, পারিবারিক সহিংসতার একটি প্রধান কারণ যৌতুক এবং যৌতুক সংক্রান্ত মৃত্যু ও আত্মহত্যার সংখ্যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই সংখ্যা সত্যিই ভয়ংকর। তবে, আমরা মনে করি প্রকৃত চিত্র আরও ভয়ংকর হতে পারে। কারণ এই তথ্য শুধু সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এসব তথ্য এই সত্যের দিকে ইঙ্গিত করে যে, বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবিলায় মানবাধিকার গ্রুপ, আইনি সহায়তা সংস্থা এবং গণমাধ্যমগুলো যেসব প্রচেষ্টা চালিয়েছে, তার কোনো ফল পাওয়া যায়নি। আর কীভাবে পাওয়া যাবে, যদি রাষ্ট্র তার জনসংখ্যার অর্ধেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক না হয়?

ধর্ষণের ক্ষেত্রে, বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের এখনো সামাজিক নিগ্রহের শিকার হতে হয়, যখন অপরাধীরা প্রায়ই অবাধে ঘুরে বেড়ায় এবং ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারকে ভয় দেখায়। যখন এর আইনি দিকটি আসে, তখন এর কিছু ফাঁকফোকর সামনে আসে। যা বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের ধর্ষণের মামলা দায়ের ও ন্যায়বিচার চাইতে নিরুৎসাহিত করে। আমাদের আইনে ধর্ষণের প্রাচীন সংজ্ঞা এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। যদিও বিতর্কিত 'টু-ফিঙ্গার টেস্ট' অবশেষে ২০১৮ সালে হাইকোর্ট নিষিদ্ধ করেন। তবুও এই আইনের এখনো ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন, যেন আইনটি ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে।

অতএব, আমরা যদি এ ধরনের জঘন্য অপরাধের ভুক্তভোগীদের প্রতি মানসিকতা পরিবর্তন করতে না পারি, আমাদের বিদ্যমান আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে না পারি, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের এবং সমাজকে এই বিষয়ে সচেতন করতে পারি এবং অপরাধীর ভোগ করা দায়মুক্তির সংস্কৃতি ভাঙতে না পারি, তাহলে আমাদের নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না এবং আগামী বছরগুলোতে হয়তো আরও বেশি সংখ্যক ধর্ষণের ঘটনা দেখতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

4h ago