জঙ্গি আস্তানা উপড়ে ফেলুন 

উপযুক্ত মুহূর্তে হামলার ঘৃণ্য পরিকল্পনা নিয়ে আনসার আল ইসলাম নামের একটি গোষ্ঠীর জঙ্গিদের বাংলাদেশের ভেতর গোপন আস্তানায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।

দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুসারে, এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী প্রগতিশীল ব্যক্তি ও নাস্তিকদের তাদের 'সফট টার্গেট' এবং হিন্দুত্ব ও বিদেশি মিশন প্রচারকারী সংস্থাগুলোকে 'হার্ড টার্গেট' হিসেবে ভাগ করে তালিকাভুক্ত করেছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাস্টারমাইন্ডদের এখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ তারা বিশ্বাস করে, এই ধরনের আক্রমণ শেষ পর্যন্ত বড় সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যাবে এবং তা তাদের শক্তিকে দুর্বল করে দেবে।

এককালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) নামে পরিচিত এই দলটিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটি আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা হিসেবে পরিচিত।

সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে দেশে ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার ও লেখকদের ওপর হওয়া বেশকিছু হামলায় জড়িত থাকার কারণে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড তদন্তের সময় তারা এ ঘটনার সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে। এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডটি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক আলোচিত হয়।

এরপর ৩ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে আরও ৩ জন ব্লগার ও লেখক খুন হওয়ার পর এবিটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

এখানে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে, দেশে জঙ্গি ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের জন্য নিষিদ্ধ ষষ্ঠ সংগঠন এবিটি। অন্য ৫টি সংগঠন হলো— হিযবুত তাহরীর, জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি), বাংলাদেশ জাগ্রতা মুসলিম জনতা ও শাহাদাত-ই-আল-হিকমা।

এটা জানা দ্বিগুণ বেদনাদায়ক যে, নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর, জেএমবি ও হুজি এখনো দেশে সক্রিয় রয়েছে এবং গোপনে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য স্বল্প পরিচিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাজ করছে।

সন্ত্রাস দমন কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, আনসার আল ইসলামের নিয়োগ ও  প্রাথমিক প্রশিক্ষণ অনলাইনে করা হয়। আর দলের সামরিক শাখাকে দেশের কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে সশরীরে উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সংগঠনটি কাশ্মীরকে একটি সম্ভাব্য আশ্রয়স্থল এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নতুন সদস্য সংগ্রহের উৎস হিসেবে বিবেচনা করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আনসার আল ইসলামে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের একটি দল পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার হয়ে আফগানিস্তান ও কাশ্মীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। দলটি ইন্দো-বাংলা সীমান্ত এলাকায় আস্তানা তৈরি করার পরিকল্পনা করছে, যাতে তারা সেখান থেকে ভালোভাবে কাজ করতে পারে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠে, জঙ্গি সংগঠনে নিয়োগপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষকরা দেশের অভ্যন্তরেই তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নিজে নিজে প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রশিক্ষণ নিতে পারে না। এটা স্পষ্ট যে, তাদের প্রতি সহানুভূতি আছে— এমন লোকজন তাদের আশ্রয় ও মৌলিক রসদের যোগান দিচ্ছে।

আমরা বিশ্বাস করি, গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক প্রসারিত করার মাধ্যমে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেই সহানুভূতিশীলদের ধরতে এবং চক্রটিকে আরও সফলভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম হবে।

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

JnU protests called off

Students and teachers of Jagannath University called off their protest last night after receiving assurances from the government that their demands would be met.

3h ago