ক্ষমতার অপব্যবহারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা যেভাবে চাঁদাবাজি হয়ে যায়

ঘটনাটি দুর্বল স্ক্রিপ্টের কোনো সিনেমার গল্পের মতো শোনাতে পারে। একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটল। আহত বৃদ্ধকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি ভাঙা হাত প্লাস্টার করে বাড়ি ফিরলেন। পরদিন মোটরসাইকেলের মালিক কয়েকজন বন্ধুসহ গেলেন বৃদ্ধের সঙ্গে দেখা করতে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিছু টাকা দিয়ে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে বিষয়টি শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন তারা।

কিন্তু সেখানে যাওয়া মাত্র সাদা পোশাকে র‌্যাবের একটি দল তাদের গ্রেপ্তার করে। তারপর অদ্ভুতভাবে র‌্যাব-৪ এর সহায়তায় করা মামলার বিবৃতিতে কলেজ ও স্কুলের ৮ শিক্ষার্থী 'চাঁদাবাজি' করেছে এমন একটি গল্প উঠে আসে। সেখানে দুর্ঘটনার কোনো উল্লেখ নেই। বরং ভুক্তভোগীকে 'মারধর' ও 'জখম' করে ৪০ হাজার ৫০০ টাকা 'ছিনিয়ে' নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। অথচ ভুক্তভোগী এমন কোনো অভিযোগ করেননি।

গত মার্চ মাসে মিরপুরে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কয়েকজন সদস্যের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিবরণ প্রকাশ পেয়েছে। এটি পরিষ্কার যে বাইরে থেকে কেউ ইন্ধন না জোগালে, এটি সাধারণ সড়ক দুর্ঘটনাই ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, মামলায় অভিযুক্ত ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরের বাবা মোহন মিয়া 'গুমের' শিকার বলে জানা গেছে। ২০১৮ সাল থেকে তিনি নিখোঁজ।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীর ছেলের বক্তব্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে যায়। তিনি বলেছেন, ৫ আসামির সঙ্গে তাকেও র‌্যাব-৪ অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য মামলা করতে চাইলেও, কোনো অজানা কারণে র‌্যাব সদস্যরা মামলায় তা উল্লেখ করতে দেয়নি। তিনি ওই কিশোরদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ না দেওয়ার অনুরোধ করলেও, কোনো লাভ হয়নি।

ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে র‍্যাব এটিকে চাঁদাবাজির মামলা হিসেবে সামনে আনে। মামলায় ঘটনা পুরোপুরি অন্যভাবে উপস্থাপন করা হলেও, র‌্যাব-৪ এর কোম্পানি কমান্ডার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন যে র‍্যাব সঠিক কাজটি করেছে।

আমরা বিশ্বাস করি শুধু একটি স্বাধীন তদন্তই এ ঘটনার পেছনের সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এ অভিযোগ উঠছে যখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চলছে এবং সংস্থাটি তার ভাবমূর্তি উন্নত করার চেষ্টা করছে। সংস্থাটিকে এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে দেওয়া উচিত নয়, কারণ এর মাধ্যমে এই এলিট ফোর্সের অনেক অর্জন ম্লান হয়ে যেতে পারে।

সারা দেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এমন ঘটনার কারণে পুলিশসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর জনগণের আস্থা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। জনগণের আস্থা ফিরে পেতে সরকারের উচিত নিয়মিতভাবে ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা।

Comments

The Daily Star  | English

Cops get whole set of new uniforms

The Inspector General of Police (IGP) has issued a comprehensive new dress code titled Police Dress Rules, 2025, detailing rank-wise uniforms and accessories for all Bangladesh Police members.

3h ago