কিশোর অপরাধ বিচারে শিশুর বয়সসীমা কি কমানো উচিত?

প্রতীকী ছবি | সংগৃহীত

বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সামাজিক আচার-আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির যেমন পরিবর্তন হয়, তেমনি নতুন নতুন ঘটনা সামলাতে আমাদের অনেক আইন ও বিধিতে পরিবর্তন আনতে হয়। এ বাস্তবতার নিরিখেই সরকার কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে শিশু আইন সংশোধনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

সম্প্রতি আশুলিয়ায় একজন শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করেছে তারই এক ছাত্র। অপরদিকে নড়াইলে কলেজের অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরতে বাধ্য করা হয়েছে। গত মাসে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ দুটি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিশুদের বয়সসীমার দিকে নতুন করে নজর দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু যেহেতু শিশুদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কোনো বিষয় সংবেদনশীলভাবে দেখতে হয়, তাই আমরা আশা করি আইন মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অন্যান্য সব সম্ভাবনাকে বিবেচনা করবে।

ইতোমধ্যে শিশুশ্রম বা বাল্যবিবাহের প্রবণতা আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে আইনের ফাঁকফোকর দিয়েই জোরালোভাবে গেঁথে আছে। বয়সসীমা কমানোর বিষয়টি এই প্রবণতাকে আরও সহজ করে তুলবে।

এদিকে কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান বা কিশোরদের সহিংস অপরাধ সংঘটনের বিষয়টিকেও মোকাবিলা করেতে হবে। বিভিন্ন অপরাধে কিশোর গ্যাং সদস্যদের আদালতে পাঠানো হলে, তাদের বিচার করতে গিয়ে বয়স বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

এ ছাড়া জন্ম সনদে কারচুপির ঘটনাও দেখা গেছে। বর্তমানে শিশুর সর্বোচ্চ বয়সসীমা ১৮ হওয়ায়, শাস্তি এড়াতে অপরাধীর বয়স ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ১৮ বছরের নিচে দেখানো হতে পারে।

আশুলিয়ার শিক্ষক হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্তের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে কনের বাবা-মা বিবাহযোগ্য দেখাতে গিয়ে কন্যাসন্তানের জন্ম সনদে তারিখ পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। সুতরাং সব শিশুর কথা বিবেচনায় নিয়ে বয়সসীমা নির্ধারণ করা একটু জটিল।

শিশুর সর্বোচ্চ বয়সসীমা কমিয়ে ১৪ বছর করতে এক মন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন। এটা করা হলে বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হবে। এতে দেশে বাল্যবিবাহের হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আর এর কারণে বেড়ে যাবে অকাল গর্ভধারণ ও জন্মহার।

ইতোমধ্যে শিশুর বয়সসীমা নিয়ে আমাদের আইনগত সমস্যা আছে। যেমন: শ্রম আইন ১৪ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের কর্মে নিয়োগে বৈধতা দেয়। কিন্তু শিশু আইনে শিশুর সর্বোচ্চ বয়সসীমা ১৮। 'বিশেষ পরিস্থিতিতে' অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের অনুমোদন আইনি ত্রুটির আরেকটি উদাহরণ। সরকারের সাম্প্রতিক বয়সসীমা সংশোধনের পরিকল্পনা এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।

সুতরাং, আমরা মনে করি শিশু আইনে যে কোনো পরিবর্তন আনা বা শিশুর সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে বিচক্ষণতার সঙ্গে। হত্যার মতো ঘটনায় 'বিশেষ পরিস্থিতিতে' কিশোর অপরাধের বিচারের বিষয়টি সরকার বিবেচনায় নিতে পারে। পাশাপাশি কিশোর সংশোধন ব্যবস্থার উন্নতিসাধনও একটি অগ্রাধিকার হিসেবে থাকা উচিত।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

5h ago