উন্নয়ন প্রকল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
এটি বিস্ময়কর যে, একটি সরকারি প্রকল্পও বাংলাদেশের নির্মাণ পদ্ধতির বিপজ্জনক প্রকৃতি থেকে মুক্ত নয়। ঢাকার পল্লবী এলাকায় সোমবার সকালে মেট্রোরেলের নির্মাণস্থল থেকে ইট পড়ে এক পথচারী নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত মাহবুবুর রহমান তালুকদার (৪৯) মিরপুর-১০ নম্বরের একটি জুয়েলারি দোকানের শ্রমিক এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এমন ঘটনা কী করে ঘটে? হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি সরকারি মেগাপ্রকল্পে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কি নেই, যাতে একজন পথচারীরও মৃত্যু না হয়? এত বড় মাপের প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে কী কোনো নিরাপত্তা কর্মকর্তা নেই? এই সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত কেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা বা ক্ষতিপূরণের কোনো আওয়াজ পাওয়া যায়নি? মাহবুবুরের অকাল মৃত্যুর জবাব দেবে কে?
বাংলাদেশে নির্মাণকাজের কারণে মৃত্যুর ঘটনা বিরল নয়। শুধু ২০২১ সালেই নির্মাণ খাতে অন্তত ১৫৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএনএস) এক জরিপে উঠে এসেছে। অনুমান করা যায়, প্রকৃত সংখ্যা হয়তো আরও বেশি। বিশেষ করে ঢাকায়, যেখানে প্রায় প্রতিটি ব্লকে কমপক্ষে একটি নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান, সেখানে নিরাপদ নির্মাণ পদ্ধতির অনুসরণ খুবই প্রয়োজন। তবে মেট্রোরেলের মতো মেগাপ্রকল্পের কারণে মাহবুবুরের মৃত্যুর বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের। মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পটি অনেক এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং অধিকাংশ এলাকা অত্যন্ত ব্যস্ত ও জনবহুল। রাস্তা পারাপারের সময় বা ফুটপাতের অভাবে অনেক সময় মানুষকে নির্মাণাধীন প্রকল্পের পাশ দিয়ে বা নিচ দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। আকাশছোঁয়া সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা যেন যথেষ্ট নয়, এখন তবে কী নাগরিকদের রাস্তায় হাঁটার সময় ক্রমাগত বাম, ডান, সামনে, পেছনে এবং উপরের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হবে? সত্যিই শহরের উন্নয়ন কাজের প্রতিটি কোণায় মরণফাঁদ লুকিয়ে আছে?
আমরা মনে করি, মেট্রোরেল নির্মাণের কারণে এই মৃত্যু একটি ব্যতিক্রম ঘটনা, যদিও একটি মৃত্যুও অনেক বড় ক্ষতি। একজন ব্যক্তি নির্মাণকাজের নিচ দিয়ে হাঁটার সময় যেকোনো দিন মারা যেতে পারেন, যেখানে শ্রমিক বা নাগরিকদের আহত অথবা মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী কর্তৃপক্ষ প্রায়শই তদন্ত বা শাস্তির ঊর্ধ্বে থাকে, সেখানে আমাদের উন্নয়ন ভাবনা কী বার্তা দেয়? মাহবুবুরের ১০ বছরের মেয়েসহ তার পরিবার সরকারের কাছ থেকে সহমর্মিতা ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য এবং যত দ্রুত সম্ভব সেটি করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। সবচেয়ে বড় কথা, সরকারকে অবশ্যই জরুরিভিত্তিতে এ ঘটনার তদন্ত করতে হবে এবং সরকারি ও বেসরকারি নির্মাণস্থল ও এর আশপাশের এলাকার সকল ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়, তাই এমন মৃত্যু ও আঘাত ক্ষমাযোগ্য হতে পারে না।
Comments