‘সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হলে ইসি নির্বাচন করতে পারবে না’
বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'নির্বাচন সংক্রান্ত সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হলে ইসি নির্বাচন করতে পারবে না'।
আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি চলতি কমিশনের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রফিকুল ইসলামের বিদায়ী কমিশনের ৫ বছরের সময়কালে নানা বিষয় ও অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে গত ৫ বছরে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন কার্যক্রমের মূল্যায়ন প্রসঙ্গ তিনি বলেন, 'আমরা নিজেদের মূল্যায়ন করতে পারি না; প্রকৃতপক্ষে, কেউই নিজেদের মূল্যায়ন করতে পারে না। কারণ নিজেদের ভুল তারা দেখতে পায় না। তবে আমি এতটুকু বলতে পারি যে, আমরা আমাদের সংবিধান ও শপথ অনুসারে নিজেদের কাজগুলো করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।'
বিদায়ী কমিশন তার মেয়াদকালে বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে– এমন অভিযোগের ব্যাপারে রফিকুল ইসলামের বক্তব্য, 'এ ধরনের অভিযোগ আমরা গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি। কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থা কীভাবে ধ্বংস হয়েছে কিংবা এর কতটুকু হয়েছে- সে বিষয়ে তারা কখনোই আমাদের বিস্তারিত কিছু জানায়নি। একটি অস্পষ্ট ধারণার ওপর ভিত্তি করে আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি না।'
এ ছাড়া কমিশন অনেক রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে– এমন বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, 'যদি তাই হয়, তাহলে আমি বলতে চাই যে, তারা সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা কেবল এর সামান্য একটি অংশ। আমাদের এটা বুঝতে হবে যে, প্রায় প্রতিটি বিষয়েই বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। তাই সবার আস্থা অর্জনের বিষয়টি খুবই কঠিন একটি কাজ।'
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, 'জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ২ ধরনের মত আছে। একটি অংশ বলছে যে আমরা আমরা নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছি। আবার অন্য অংশ বলছে যে নির্বাচনী পরিস্থিতি ছিল দারুন। আমরা কাউকে ক্ষমতাসীন কিংবা বিরোধী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করি না। সবাইকে প্রার্থী ও ভোটার হিসাবে বিবেচনা করি।
'মেয়াদের শুরুতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (সিসিসি) নির্বাচন ও শেষের দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (এনসিসি) নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অনেকে ইসির প্রশংসা করেছেন। তবে সহিংসতা ও অনিয়মের সাক্ষী অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য ইসি ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। এমন দুটি পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মেলাবেন?'– প্রশ্ন করা হয় রফিকুল ইসলামকে।
তার ভাষ্য, 'সিসিসি ও এনসিসি নির্বাচনের জন্য আমরা কোনো বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি। অন্যান্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারেও আমাদের দিক থেকে কোনো ত্রুটি ছিল না। সব নির্বাচনেই আমরা আইন অনুসারে কাজ করি। নির্বাচনের জন্য আমরা একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করি ও আনুষঙ্গিক সহায়তা প্রদান করি। নির্বাচন কর্মকর্তারা মাঠে নির্বাচন পরিচালনা করেন। ইসির পক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সহায়তা করে। আমাদের দায়িত্ব তাদের তদারকি করা। সব নির্বাচনের জন্য আমাদের একই রকম ব্যবস্থা আছে।'
এদিকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার অভিযোগ সম্পর্কে রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমি আগেই বলেছি, ইসির পক্ষে পোলিং অফিসার ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা নির্বাচন পরিচালনা করেন। এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক বাহিনীকে ডাকা হয়।
'৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন কাভার করার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ছিলেন। আমরা সেদিন টিভি থেকে চোখ সরাইনি। নির্বাচন চলাকালীন গণমাধ্যম বা রিটার্নিং কর্মকর্তা এমনকি পর্যবেক্ষকরাও এ ধরনের কোনো অনিয়মের খবর দেননি। ৪২ হাজার কিংবা তার বেশিসংখ্যক ভোটকেন্দ্র সম্পর্কে জানার গায়েবি ক্ষমতা আমাদের নেই। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলই আমাদের সরাসরি কোনো অনিয়মের কথা বলেনি।'
তবে নির্বাচনের বেশ কিছুদিন পর এ সংক্রান্ত কিছু কিছু অভিযোগ উঠতে থাকে মন্তব্য করে রফিকুল ইসলাম বলেন, 'ততক্ষণে আমাদের হাত বাঁধা পড়ে গেছে। গেজেটে বিজয়ীদের নাম প্রকাশের পর এ বিষয়ে ইসির কিছু করার থাকে না। তবে সংক্ষুব্ধ কোনো প্রার্থী এ জন্য আদালতে যেতে পারতেন।'
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন চলাকালে কমিশন কোনো অভিযোগ পেয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'না, আমরা ১ জানুয়ারি, এমনকি ২ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি।'
এ সময় নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরা নিয়ে বিবিসির একটি প্রতিবেদনের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় রফিকুল ইসলামকে। এই প্রসঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, 'নির্বাচনের দিন আমরা সারাদেশের ২৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেই। ছবিগুলো কি এসব কেন্দ্র থেকে নেওয়া হয়েছিল? একটি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ভর্তির খবরের ভিত্তিতে কি আমরা পুরো নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি?'
সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো সাক্ষাৎকারটি পড়তে ক্লিক করুন 'The EC can't hold elections if it probes all the electoral allegations'
Comments