প্রেস কাউন্সিলের প্রতিটি মেম্বার এটা অ্যাপ্রুভ করেছেন: বিচারপতি নাসিম

সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ কাউন্সিলের বর্তমান সাংবাদিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তাদের সমর্থন নিয়েই করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ নিজামুল হক নাসিম।

তবে, দ্য ডেইলি স্টারের কাছে ভিন্ন মত প্রকাশ করেন কাউন্সিলের বর্তমান কমিটিতে থাকা ৫ জন সাংবাদিক প্রতিনিধি।

তারা বলেছেন, এই উদ্যোগ সম্পর্কে বর্তমান কমিটির সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল রোববার দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছিল প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ নিজামুল হক নাসিমের সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: আপনি বলেছিলেন, সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন সংশোধনের উদ্যোগে প্রেস কাউন্সিলের সাংবাদিক প্রতিনিধিদের সম্মতি আছে এবং তারাও এই আইন চান। সাংবাদিক প্রতিনিধিদের অনেকে বলছেন, তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি এবং তারা এটা জানেন না। এ বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করবেন?

বিচারপতি মোহাম্মদ নিজামুল হক নাসিম: আমরা প্রেস কাউন্সিলে যখন আলোচনা করি তখন প্রেস কাউন্সিল ও প্রত্যেকটা বডিকে দাওয়াত দেই। তারা আসে। যেমন- আমরা সাংবাদিকদের ডিজিটাল তালিকা করার যে পরিকল্পনা করেছি সেটার জন্যও আমরা সমস্ত অর্গানাইজেশনকে ডেকেছিলাম। সেখান থেকে অ্যাপ্রুভাল নিয়েই আমরা সামনে এগোচ্ছি।

এটা (১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান) শুরু হয়েছে ২০১৬ সালে। আমি তো এলাম ২০২১ সালের অক্টোবরে। আমাদের রেকর্ডপত্র বলে যে, প্রতিবার যখন এই কাজটি করা হয়েছে তখন প্রেস কাউন্সিলের প্রতিটি মেম্বার এটা অ্যাপ্রুভ করেছেন।

ডেইলি স্টার: আপনার সময়ে বর্তমান কমিটিতে যারা সম্পাদক, সাংবাদিক আছেন তাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে?

বিচারপতি নিজামুল হক: হ্যাঁ হয়েছে। আমাদের কমিটিতে রেগুলোর আলোচনা হচ্ছে।

ডেইলি স্টার: তারা সবাই কি এটাতে সম্মতি দিয়েছেন?

বিচারপতি নিজামুল হক: হ্যাঁ। আমি বলব, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল সম্মতি দিয়েছে। সদস্যদের কেউ সম্মতি দেয়নি এমন রেকর্ড নেই।

ডেইলি স্টার: তাহলে সাংবাদিক প্রতিনিধিরা কেন বলছেন যে তারা জানেন না, তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি?

বিচারপতি নিজামুল হক: তারা কেন বলছেন, তা আমি বলতে পারব না। এটা তারাই বলতে পারবেন।

ডেইলি স্টার: এটা নিয়ে তাহলে এক ধরনের কনফিউশন থেকে যাচ্ছে।

বিচারপতি নিজামুল হক: আমাদের কাছে কোনো কনফিউশন নেই।

ডেইলি স্টার: আইনটি এখন কোন পর্যায়ে আছে?

বিচারপতি নিজামুল হক: এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারব না। শুনেছি এটা এখন কেবিনেটে আছে।

ডেইলি স্টার: এই আইন পাস হলে সাংবাদিকদের নানা রকম অসুবিধায় পড়া, বিপদে পড়া আরও বেড়ে যাবে কি না?

বিচারপতি নিজামুল হক: নিশ্চই না, এটা আমি একেবারে জোর দিয়ে বলতে পারি। সাংবাদিকদের যেসব বিষয় প্রেস কাউন্সিল আইনে ট্রায়াল করা হয়, অন্য কোনো আইনে নয়, সেখানে শুধু পাওয়ার বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে।

ডেইলি স্টার: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো যদি এই আইনের অপপ্রয়োগ হয়?

বিচারপতি নিজামুল হক: এখানে ট্রাইব্যুনালে প্রেস কাউন্সিলে আমার সঙ্গে যে ২ জন থাকবেন, তারা ২ জনই সাংবাদিক প্রতিনিধি। এখানে বাদী হতে পারবেন একজন সাধারণ মানুষ, বিবাদী হবেন সাংবাদিক বা প্রতিষ্ঠান। এখানে আইনের অপপ্রয়োগের কোনো সুযোগই নেই। কারণ এখানে বাইরের কোনো হাত নেই।

ডেইলি স্টার: প্রেস কাউন্সিল কি শুধু সাংবাদিকদের কিছু প্রশিক্ষণ ও বিচার করবে? মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিল কিছু করে না কেন?

বিচারপতি নিজামুল হক: প্রেস কাউন্সিল মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে। কাউন্সিলের কার্যক্রমও আস্তে আস্তে বাড়বে।

ডেইলি স্টার: সাংবাদিকরা যখন গ্রেপ্তার, সাংবাদিকরা যখন জেলে, সাংবাদিকদের ওপর যখন নিপীড়ন— তখন প্রেস কাউন্সিল কোনো কথা বলে না। কেন?

বিচারপতি নিজামুল হক: সেটা হয়তো প্রেস কাউন্সিল মনে করে যে, এটা আমাদের ব্যাপার না। সেটা হয়তো কোর্টের ব্যাপার, সেটা কোর্টে যাবে। আমি চাই যেন ওটা (সাংবাদিক নিপীড়ন) না হয়। কিন্তু বলা তো অন্য জিনিস। আমাদের সেই অথরিটি আছে কি না, আইন আমাদের সেই অথরিটি দিয়েছে কি না—সেটা ব্যাপার।

ডেইলি স্টার: এই অথরিটি কি প্রেস কাউন্সিলের আছে? ধরেন একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে বা আটক করে নির্যাতন করা হলো। কিংবা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে তাকে নির্যাতন করা হলো। এই জায়গায় কথা বলার বা আইনগত এখতিয়ার প্রেস কাউন্সিলের আছে কি না?

বিচারপতি নিজামুল হক: বিভিন্ন জায়গায় এমন ঘটনা শুনলে আমরা চিঠি পাঠাই, এগুলো বন্ধ করতে বলি। দুএকটি ইনভেস্টিগেশনও আমাদের মাধ্যমে হয়েছে। হয়নি তা নয়। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে তো আমাদের সম্পৃক্ত হওয়া সম্ভব নয়।

ডেইলি স্টার: আপনার আইনগত ক্ষমতা আছে কি না?

বিচারপতি নিজামুল হক: আমরা প্রেস কাউন্সিলে সাংবাদিকদের মানোন্নয়নে মূলত কাজ করব। আইনগতভাবে আমি বিবৃতি দিতে পারব। তাতে লাভ হবে কি? আমি তো মনে করি লাভ হবে না। বরং তাদেরকে যদি আইনি সহায়তা দেওয়া যায় সেটার ব্যবস্থা আমরা করতে পারি।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, অন্য কোর্টের ব্যাপারে আমরা ইনভলব হতে চাই না। আমাদের এখানে যেগুলো আসছে সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং কাজ করতে চাই।

ডেইলি স্টার: সাংবাদিক নিপীড়নের শিকার হলে আপনারা ইনভলব হবেন না?

বিচারপতি নিজামুল হক: আমাদের তো কোনো ক্ষমতা নেই এ বিষয়ে।

 

Comments