মস্তিষ্কে যেভাবে কাজ করবে ইলন মাস্কের নিউরালিংক চিপ

মস্তিষ্কে যেভাবে কাজ করবে ইলন মাস্কের নিউরালিংক চিপ
মস্তিষ্কে স্থাপন করা নিউরালিংকের চিপের সাহায্যে কম্পিউটারে গেম খেলছে একটি বানর। ২০২১ সালে তোলা। ছবি: নিউরালিংক

স্নায়ু এবং ব্রেন সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) তাদের মানুষের মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ স্থাপন করে পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে।

২০১৬ সালে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক নিউরালিংক প্রতিষ্ঠা করেন; মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত করে দৃষ্টিশক্তি, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা, বিষণ্ণতা, সিজোফ্রেনিয়া, স্থুলতা ও শরীরিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, অনুমতি পাওয়া গেলেও তারা এখনই এই পরীক্ষার জন্য কোনো অংশগ্রহণকারীকে নিয়োগ দেবে না।  

গত বৃহস্পতিবার নিউরালিংক মানব মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করে পরীক্ষার অনুমতি পাওয়ার কথা ঘোষণা করে। এক বিবৃতিতে এফডিএ এটি নিশ্চিত করেছে।

এফডিএ'র অনুমোদনের জন্য দীর্ঘ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল নিউরালিংক। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, এর আগে নিরাপত্তার অভাব দেখিয়ে নিউরালিংককে অনুমতি দেয়নি এফডিএ।

তবে এবার অনুমতি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও কবে থেকে মানব শরীরে নিউরালিংক চিপ স্থাপন করে পরীক্ষা কর্যক্রম শুরু করা হবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। খুব শিগগিরই এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানানো হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে জানানো হয়েছে।

নিউরালিংকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক দীর্ঘদিন ধরেই এই পরীক্ষা চালু করতে উন্মুখ। বিভিন্ন সময় তিনি প্রকাশ্যে এই পরীক্ষা চালুর কথা বলেছেন। এমনকি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে তিনি নিজের সন্তানদেরকেও এ পরীক্ষায় ব্যবহার করবেন বলে মন্তব্য করেছেন।

এই চিপগুলো ইতোমধ্যে বানরের মস্তিষ্কে স্থাপন করে পরীক্ষা চালানো হয়েছে।

নিউরালিংক যেভাবে কাজ করে

নিউরালিংকের চিপগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে এগুলো মস্তিষ্কের সংকেতগুলোকে যথাযথভাবে বুঝে ব্লুটুথের মাধ্যমে সংযুক্ত ডিভাইসে পাঠাতে পারে। বানরের মস্তিস্কে পরীক্ষা চালানোর সময় এই প্রক্রিয়া সফলভাবে কাজ করেছিল।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চিপসগুলো জনপরিসরে চালু করার আগে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, যাতে এগুলোতে কোনো ত্রুটি বা দুর্বলতা না থাকে।

মাস্ক এর আগে বলেছিলেন, প্রস্তাবিত প্রযুক্তিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের মাধ্যমে মানুষের উৎখাত হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করতে পারে।

নিউরালিংক কম্পিউটার ও মানুষকে সংযুক্ত রাখবে। মানুষের মস্তিষ্কে বসানো একটি চিপের সাহায্যে এই প্রক্রিয়াটি কাজ করবে। ওই চিপটি একটি ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এবং ব্লুটুথের সাহায্যে মস্তিষ্কের সংকেতগুলো যুক্ত থাকা ডিভাইসের সাহায্যে দেখা যাবে।

যুক্তরাজ্যের লিডস বেকেট ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক ডক্টর রজ ওয়াট-মিলিংটন বলেন, আমরা যেসব ডিভাইস ব্যবহার করি, নিউরালিংকের চিপস সেসব ডিভাইসগুলোর সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্ককে যুক্ত করবে।

'ব্যাপারটা হচ্ছে, এই চিপসগুলো আমাদের মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রনিক সংকেতগুলোকে রিয়েল টাইমে সংগ্রহ করবে, সেগুরোকে প্রসেস করবে এবং ব্লুটুথের মাধ্যমে সংযুক্ত ডিভাইসে প্রেরণ করবে। এর ফলে যার হাত অকেজো, তিনিও তার স্মার্টফোনটি চালাতে পারবেন। ভবিষ্যতে এই চিপের সাহায্যে মাউস বা কী-বোর্ডের কাজও করা যাবে, যাতে হাত নাড়াতে পারেন না, এমন যে কেউ মস্তিষ্কের সংকেত ব্যবহার করে কম্পিউটার ও কী-বোর্ড চালাতে পারেন।

নিউরালিংক কী নিরাপদ?

মস্তিষ্কে এই চিপ স্থাপন করা হলে তা মানুষের শরীর ও জীবনের ওপর কেমন ঝুঁকি তৈরি হয়, তা নিয়ে অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ রয়েছে। তবে এফডিএ এখন মানব মস্তিষ্কে এই চিপের পরীক্ষামূলক ব্যবহার অনুমোদন করায় উদ্বেগ অনেকখানি কমবে।

তবে দীর্ঘদিন ধরেই নিউরালিংক এই চিপ নিয়ে নানা রকম যাচাই-বাছাই ও গবেষণা অব্যাহত রেখেছে।

মানুষের মস্তিষ্ককে কীভাবে আরও শক্তিশালী করা যায়, কিংবা সুপার কম্পিউটারের সমকক্ষ করা যায়, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই গবেষণা চলছে। বিশ্বের একাধিক প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে গবেষণা করছে। ইলন মাস্ক দাবি করেছেন, নিউরালিংকের চিপ এই গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। 

সূত্র: বিবিসি, ডয়েচে ভেলে
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

 

Comments

The Daily Star  | English
charges against Sheikh Hasina at ICT

Contempt of court: ICT jails Hasina for six months

On April 30, ICT Chief Prosecutor Tajul Islam brought the matter before the tribunal

1h ago