আব্রামস ও লেপার্ড ট্যাংক কি ইউক্রেনের তুরুপের তাস

লেপার্ড টু ট্যাংক এবং এম ওয়ান আব্রামস ট্যাংক। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার হাতে দখল হয়ে যাওয়া অঞ্চল পুনরুদ্ধারসহ যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে ট্যাংক চেয়ে আসছিল ইউক্রেন। এ নিয়ে কয়েকমাস ধরে অনিচ্ছা প্রকাশের পর অবশেষে ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য ট্যাংক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। 

ইতোমধ্যে ব্রিটেনও ইউক্রেনে চ্যালেঞ্জার টু ট্যাংক পাঠাবে বলে জানিয়েছে। পোল্যান্ড বলেছে যে, তারা লেপার্ড টু ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠাতে চায়। তবে এসব ট্যাংক যেহেতু জার্মানিতে তৈরি, তাই বার্লিনকে তাদের রপ্তানির অনুমোদন দিতে হবে।

গত বুধবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ ইউক্রেনে লেপার্ড টু ট্যাংক পাঠাতে সম্মত হয়েছেন। খবরটি এমন সময় এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রও এম ওয়ান আব্রামস ট্যাংক ইউক্রেনের সম্মুখসারির যোদ্ধারের সহায়তার জন্য পাঠাতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।

যদিও এ নিয়ে প্রথমে জার্মানির মতোই দ্বিধান্বিত ছিল যুক্তরাষ্ট্র। বার্লিন যখন যুদ্ধের উত্তাপ ও পরিধি বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কায়, তখন ওয়াশিংটন চিন্তিত ছিল ইউক্রেনের আব্রামস ট্যাংক হাতে পাওয়ার পর এর লজিস্টিক ও রক্ষণাবেক্ষণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে।

আব্রামস ও লেপার্ড ট্যাংক সম্পর্কে যা জানা যায়

ভারী অস্ত্রসজ্জিত সামরিক যান হিসেবে দুটিই সময়ের সেরা বলে বিবেচিত এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্র দাপিয়ে বেড়ানো সোভিয়েত আমলের যেকোনো ট্যাংকের চেয়ে অধিক শক্তিশালী।  

ডিজিটাল ম্যাগাজিন ব্রেকিং ডিফেন্সের কন্ট্রিবিউটিং এডিটর সিডনি ফ্রিডবার্গ আলজাজিরাকে বলেন, 'লেপার্ড ও আব্রামস আসলে জমজ।'  

১৯৭৯ সালে জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রথম লেপার্ড টু ট্যাংক তৈরি করে ক্রাউস-ম্যাফেই কোম্পানি।

অস্ট্রিয়া, কানাডা, চিলি, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, গ্রিস, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, স্পেন এবং তুরস্কের সেনাবাহিনীর কাছে এই ট্যাংক রয়েছে। 

১৯৭৮ সালে জেনারেল ডায়নামিকস ল্যান্ড সিস্টেমস (জিডিএলএস) কোম্পানি প্রথম এম ওয়ান আব্রামস ট্যাংক তৈরি করে এবং ১৯৮০ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সিডনি ফ্রিডবার্গ বলেন, 'দুটি ট্যাংকই প্রায় একই ধরনের, বড় আকারের ভারী সাঁজোয়া যান। সোভিয়েত আমলে তৈরিকৃত বা রাশিয়ার কাছে থাকা যেকোনো ট্যাংকের চেয়ে এটি অধিক সুরক্ষিত।'

আব্রামস ও লেপার্ড ট্যাংকের মূল পার্থক্য এদের ইঞ্জিনে।

লেপার্ড টু-তে আছে ডিজেলচালিত এমটিইউ এমবি ৮৭৩ ইঞ্জিন, যার রক্ষণাবেক্ষণ তুলনামূলক সহজ এবং গোটা ইউরোপেই এর ব্যবহার রয়েছে। তবে আব্রামসে ব্যবহৃত হয় অধিক শক্তিশালী ও তুলনামূলক জটিলভাবে নির্মিত টারবাইন ইঞ্জিন।

সিডনি ফ্রিডবার্গ বলেন, 'ইউরোপে যেহেতু আব্রামস ট্যাংকের তেমন ব্যবহার নেই, সেহেতু এর খুচরা যন্ত্রাংশ, ওয়ারহাউজিং ও সাধারণ রক্ষণাবেক্ষণের মতো লিজিস্টিক সহায়তা পাওয়া ইউক্রেনের জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে। ৪ জনের এই ট্যাংকটির জটিল যন্ত্রাংশ চালনার জন্যও অতিরিক্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।'

তবে এসবের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আনাতোলি অ্যান্তোনভ বলেছেন, 'কিয়েভে ওয়াশিংটনের আব্রাম ট্যাংক পাঠানো হবে মস্কোর বিরুদ্ধে আরেকটি নির্লজ্জ উস্কানি। যুদ্ধে ইউক্রেন জিতবে, পশ্চিমাদের এমন মতিভ্রমের জন্য অনুতাপ করতে হবে।' 

আব্রামস ও লেপার্ড ট্যাংক কেন ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

আলজাজিরার প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অ্যালেক্স গ্যাটোপৌলোস বলেন, 'ইউক্রেন যদি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ফাটল ধরাতে চায় এবং যুদ্ধের প্রথম দিকে রুশদের দখল করে নেওয়া অঞ্চলগুলো ফিরে পেতে চায়, সেক্ষেত্রে সর্বশেষ-প্রজন্মের প্রধান যুদ্ধ ট্যাংকগুলো ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল সমতল এবং ট্যাংক পরিচালনার জন্য উপযুক্ত। রাশিয়া সেখানে সারি সারি পরিখা খননের পাশাপাশি সুরক্ষিত বাঙ্কার তৈরি করছে, যাতে ইউক্রেনের অগ্রযাত্রা ঠেকিয়ে দেওয়া যায়। 

ইউক্রেনের আক্রমণের সুবিধার্থে যুদ্ধক্ষেত্রে আমেরিকান ব্র্যাডলি, জার্মান মারডার এবং রাশিয়ার তৈরি বিএমপি-টু'র মতো পদাতিক যুদ্ধযান দ্বারা সুরক্ষিত সেনাদের সঙ্গে থাকবে এসব ট্যাংক।

সূত্র: আলজাজিরা

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt decides to ban activities of AL until completion of ICT trial

Law Adviser Prof Asif Nazrul said this at a press briefing after a special meeting of the advisory council tonight

2h ago