রাজপথ দখল করে সংগ্রাম করতে হবে, কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই: আমীর খসরু

বিএনপরি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন আগামীতে যে কর্মসূচি আসবে, কারও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। রাজপথ দখল করে সংগ্রাম করতে হবে।

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে পূর্বঘোষিত ঢাকা জেলা বিএনপির আয়োজনে রাজধানীর প্রবেশ মুখ সাভারের আমিনবাজার এলাকায় মিরপুর মফিদ ই আম স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আমীর খসরু বলেন, আগামীতে কী করবেন আপনারা। কারও অনুমতি দরকার নেই। আমাদের নেতা তারেক রহমান পরিষ্কারভাবে বলেছেন। তার কথা মেনেই চলবেন। আগামীতে যে কর্মসূচি আসবে, কারো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। রাজপথ দখল করে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে৷

তিনি বলেন, স্বৈরাচারের প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে তার প্রতিপক্ষকে হত্যা করবে। আমরা দেখেছি তারা কত লোককে হত্যা করেছে, গুম করেছে। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রতিপক্ষকে জেলে ঢুকাতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াই তার প্রধান প্রমাণ। খালেদা জিয়া যদি বাইরে থাকেন, এই স্বৈরাচার সরকারের ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হবে না।

কারাগারে খালেদা জিয়েকে বিষ দেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে কী করেছে, আজকে সেটি জানার বিষয় হয়ে গেছে। কেন আমাদের নেত্রীর শারীরিক অবস্থা এই জায়গায় এসে পৌঁছেছে? আজকে এই প্রশ্ন জেগেছে। জেলে রাখার সময় কী খাইয়েছিল, তার খাবারে বিষ দেওয়া হয়েছিল কি না, স্লো পয়জনিং করা হয়েছিল কি না, এই প্রশ্নগুলো আজ জনমনে এসেছে। পরীক্ষার মাধ্যমে সেসব বেরিয়ে আসতে পারে বলে তাকে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টের আরেকটি চরিত্র হচ্ছে, মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, জেলে পাঠানো, বাড়িঘর আক্রমণ করা যাতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মতো করে দেশটা দখল করে বসে থাকবে। তারা বিচারবিভাগকে দখল করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দখল করেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের দখল করেছে।

তিনি বলেন, ২৫ তারিখে এখানে সভা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি। পুলিশ আগের রাতে মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ছিল, যুবলীগ ছিল—জয়েন্ট অপারেশন। আজকে সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। আগামী নির্বাচনকে চুরি করার পথে যারা হাত বাড়াবে, তারা কেউই রেহাই পাবে না।

আমীর খসরু বলেন, বিশ্বের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো—যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে, আইনের শাসনে বিশ্বাস করে, নির্বাচিত সরকারে বিশ্বাস করে—প্রত্যেকে বাংলাদেশকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সুতরাং যারা মঞ্চ ভেঙে সমাবেশ বন্ধ করায় জড়িত তাদের নামসহ তথ্য রাখা হচ্ছে। কেউ বাদ যাবেন না। শুধু বিদেশিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়বেন না, বাংলাদেশের মানুষের নিষেধাজ্ঞাতেও পড়বেন। বারবার বলা হচ্ছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা ভোট চুরির সঙ্গে জড়িত থাকবেন, এমনকি যারা দেখেও না দেখার ভান করছেন তারাও বাদ যাবেন না।

তিনি বলেন, 'তারা (সরকার) বাইরে অনেক সাহসী, ভেতরে কিন্তু এত সাহসী না। জাতিসংঘে কাজ শেষ হয়ে গেছে, বক্তব্য শেষ হয়ে গেছে, বিশ্বের সব নেতারা চলে গেছেন, কিন্তু আমাদের অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটনে বসে আছেন। অবস্থা বোঝেন কত খারাপ, কত খারাপ হলে সেলফি তুলেও কাজ হয় না। সেলফি তুলে কতদিন ফুরফুরে মেজাজে ছিল। তারপর দেখা যায় আরেকটা (নিষেধাজ্ঞা) আসছে। এরা যে ভুয়া তা সারা বিশ্ব বুঝে গেছে। নাহলে সব দেশের প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরও আমাদের অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সেখানে বসে কি করছেন? চেষ্টা চালাচ্ছেন হাতে-পায়ে ধরে কিছু করা যায় কি না। কিন্তু কোনো কাজ হবে না।'

তিনি বলেন, 'সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন করতে হবে। দেশে একটি নির্বাচিত সরকার হবে, সংসদ হবে, তারা জনগণের কাছে দায়ী থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। তার আগে কোনো রক্ষা নাই।'

দেশের টাকা পাচারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এক লাখ কোটি টাকার উপরে শুধু বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকাতে সবচেয়ে বেশি। এখন ভিসা নীতি নিয়ে প্রতিদিন আলোচনা হচ্ছে; অনেকে ভয়ভীতির কারণে মুখ খুলছেন না, কিন্তু হৃদয় ফেটে যাচ্ছে। এখানে কেউ বাদ যাবে না, এমনকি বিচারকরাও বাদ যাবে না। বিশ্বের কোনো দেশে ভিসা নীতিতে বিচারকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না, বাংলাদেশে হয়েছে। গণমাধ্যমও কিন্তু এর বাইরে নেই।

তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা যারা ভোট চুরি করবে তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা ভোট চুরি করবে তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসবে, বিচারক যারা ভোট চুরির সঙ্গে জড়িত তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসবে। আর যারা সাংবাদিক হয়ে ভোট চুরিতে সাহায্য করবেন, তাদের ওপরে এই নিষেধাজ্ঞা আসতে অসুবিধাটা কোথায়?

এর আগে নির্ধারিত সময় বেলা ২টায় সমাবেশ শুরু হয়৷ সমাবেশ, সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও কেরানীগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীরা যোগ দেন।

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ ও বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো।

ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবার ও কল্যাণ বিষয়ক সহ সম্পাদক দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা, ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইরফান ইবনে আমান অমিসহ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

Comments

The Daily Star  | English

Panic grips NBR officials

The relief that followed the end of a disruptive strike by tax officials at the National Board of Revenue has quickly given way to anxiety and regret, as the government started a clampdown on those involved.

12h ago