ড. ইউনূসকে নিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছেন ফখরুল সাহেবরা: কাদের

ড. ইউনূসকে নিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছেন ফখরুল সাহেবরা: কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'মির্জা ফখরুল সাহেবরা আন্দোলন করে গোলাপবাগের গরুর হাটে হোঁচট খেয়ে আন্দোলন এখন আর জমে না। বাজারে ভাটা পড়ে গেছে, এমতাবস্থায় আবার নতুন খেলা ড. ইউনূসকে শুরু করেছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'ওয়ান-ইলেভেনের দুঃস্বপ্ন দেখছেন। আন্দোলনে পারলেন না, হাসিনাকে হটাতে হবে। কীভাবে হটাতে হবে? ওয়ান-ইলেভেনের মতো ইউনূসের নেতৃত্বে একটা নতুন সরকার এমন কথা-বার্তা বাজারে আছে। সেই দুঃস্বপ্ন দেখছেন কি না জানি না। ওয়ান-ইলেভেনে ইউনূস সাহেব কম চেষ্টা করেননি। তখনো ওনার খায়েশ ছিল। সে খায়েশ পূর্ণ হয়নি।'

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমরা এমন দেশে আছি, যে দেশে আমরা রাজনীতিতে সহাবস্থান করছি পঁচাত্তরের খুনিদের সঙ্গে। সহাবস্থান করছি জাতীয় ৪ নেতার যারা হন্তারক, তাদের সঙ্গে আমাদের রাজনীতি করতে হচ্ছে।'

একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, 'সেদিন যারা আলামত নষ্ট করেছিল, যারা হত্যাকাণ্ডকে চাপা দিতে জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছিল তাদের সঙ্গে আমাদের রাজনীতি করতে হচ্ছে। এটা দুর্ভাগ্য! স্বাধীন দেশ; এখন মনে হয়, এ দুর্ভাগা দেশ। স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধবিরোধী শক্তিগুলোকে সহাবস্থানে নিয়ে এসেছে।'

'আজকে তারাই বড় বড় কথা বলে। গণতন্ত্রকে যারা হত্যা করে, ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করে, বিচারপতি আজিজের মতো দলীয় লোককে নির্বাচন কমিশনের প্রধান করে, হ্যাঁ-না ভোট করে যেখানে ১১৪ শতাংশ ভোট হ্যাঁতে পড়েছিল। এই শক্তির সঙ্গে আজকে গণতন্ত্রের কথা বলতে হয়। এই শক্তি গণতন্ত্র চায়। রাজশাহী শহরে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে বাংলা ভাই কাদের আমলে? বিএনপির,' বলেন তিনি।

কাদের আরও বলেন, 'গণতন্ত্রের বস্ত্র হরণ করেছে যারা, যারা আমাদের দেশে বারে বারে গণতন্ত্র হত্যা করেছে তারাই এখন গণতন্ত্র নাকি পুনরুদ্ধার করবে। যারা দুর্নীতে ৫ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, তারা এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে, আন্দোলন করছে। লজ্জা করে না, এতটুকু লজ্জা তাদের নেই। দুর্নীতি করে আজকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। মুখোশ দিয়ে মুখচ্ছবিকে যারা ঢাকতে চায়, এ দেশে সেটা সম্ভব নয়।'

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসকে নিয়ে বিবৃতি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর যে মানুষটি একটি শোকও প্রকাশ করেননি; ৪ জাতীয় নেতাকে জেলের মধ্যে মারল, একটা কথাও তিনি বলেননি; সচিবালয়ে যারা আছেন, আমি বলবো বিবেককে প্রশ্ন করুন—এই ড. ইউনূস আমাদের শহীদ মিনারে যায়? কোনো দিন গেছে? এই ড. ইউনূস আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যায়? কোনো দিন গেছে? বলুন।'

'আমাদের বন্যা, আমাদের জলোচ্ছ্বাসে তিনি কি কখনো এসেছেন? তিনি কি কখনো সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন? আমাদের দেশে করোনা, ভয়াবহ করোনার যে আক্রমণ, তখনো ইউনূস কোনো কথা বলেননি। আমাদের দেশে রক্তের বন্যা বয়ে যায়, ড. ইউনূস কথা বলেন না। যে মানুষ আমার সুখ-দুঃখে নেই, বাংলাদেশের সুখে-দুঃখে নেই, সে মানুষের জন্য আমাদের এত মায়াকান্না কেন,' প্রশ্ন রাখেন কাদের।

তিনি আরও বলেন, 'শ্রেষ্ঠ মানুষ তিনি, নোবেল পেয়েছেন কিন্তু নোবেল পেলেই কোনো অপরাধ করে অব্যাহতি পেয়ে যাবেন এটা কোন দেশের আইনে আছে? শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করেন যিনি তার মতো নোবেল বিজয়ী শ্রেষ্ঠ সন্তানের আমাদের প্রয়োজন নেই।'

ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আজকে যারা বিবৃতি দিয়েছেন, এই বিবৃতি যে স্পেসে দেওয়া হয়েছে, সেটা কিনতে ২ মিলিয়ন ডলার লাগে। এই অর্থ কোথা থেকে এলো? সেটাও আমাদের আজকে জিজ্ঞাসা।'

'এখন জানি বাংলাদেশকে নিয়ে, এই ভূ-খণ্ডকে নিয়ে বিশ্বের অনেক মোড়লের অনেক স্বপ্ন আছে। যারা একদিকে ইউনূস সাহেবের মামলা স্থগিত করতে বলেন, মামলা কীভাবে স্থগিত হবে? মামলার কাগজপত্র, দলিল-দস্তাবেজ ঠিক আছে কি না যাচাই করতে বিশেষজ্ঞ পাঠান। যেটা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। ঠিক আছে কি না দেখেন। আপনারা হাওয়ায় একটা বিবৃতি ছেপে দিলেন,' যোগ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, 'আবার এর সঙ্গে একটু দ্বিধা লাগে যখন দেখি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন। আসল কথা হলো, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের এটাকে সামনে রেখে বাংলাদেশের নির্বাচনকে বানচাল করা। বাংলাদেশে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে ভণ্ডুল। নতুন খেলা! পরিষ্কার বলতে চাই, বাংলার মাটিতে এই খেলা, এ অশুভ খেলা আমরা খেলতে দেবো না।'

সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, 'আপনাদের কিছু কিছু দাবি অপূর্ণ থেকে গেছে। তবু আপনারা এই সচিবালয়ে কোনো কারো প্ররোচনায় পড়ে কোনো বিশৃঙ্খলা, কোনো প্রকার কর্মবিরতি-ধর্মঘট; যা অতীতে এ সচিবালয়ের পরিবেশ নষ্ট করেছিল—আপনারা সেটা করেননি।'

ঐক্য পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি পূরণে চেষ্টা করবেন বলে এ সময় আশ্বাস দেন ওবায়দুল কাদের।

Comments

The Daily Star  | English

Govt calls for patience as it discusses AL ban with parties

Taken the initiative to introduce necessary amendments to the ICT Act, says govt

53m ago