শ্রীপুরে যুবককে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

লাঠি হাতে মেহেদি (নীল জামা পরা ) আরিফুলকে পেটাচ্ছেন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

গাজীপুরের শ্রীপুরে চুরির অভিযোগে এক যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে ও ঝুলিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল হক খান, প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য কাউসার আহমেদ, বরকত খানের ছেলে জিয়াউর রহমান ও সিরাজ উদ্দিন খানের ছেলে ইজ্জত আলী খান।

শুক্রবার রাতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুর রহমান। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের খান বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

নির্যাতনের শিকার যুবক আরিফুল খান (২৮) দমদমা গ্রামের উসমান খানের ছেলে। নির্যাতনের পর তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়।

নির্যাতনের শিকার আরিফুল খানের ভাই আশরাফুল আলম খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকার বাসিন্দা ডা. কাইয়ুম প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর আগে দমদমা এলাকায় জমি কেনেন। বর্তমানে ওই জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ চলছে। গতকাল ওই ব্যক্তি তার জমি দেখতে দমদমা এলাকায় যান। সেই সময় কে বা কারা তার গাড়ির গ্লাস ভেঙে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যান। পরে স্থানীয় কাউসার, ফজলুল, সিরাজ, ইজ্জত ও ফজলুল হক খানের নির্দেশে আমার ভাই আরিফুলকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তার পায়ে দড়ি বেঁধে পা উপরের দিকে তুলে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা মারধর করা হয়।'

'নির্যাতনের এক পর্যায়ে আমার ভাইয়ের জিহ্বা বের হয়ে এলে তারা মারধর বন্ধ করে। আমরা স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ঘটনাটি জানিয়েছি। এ ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবি করছি', বলেন তিনি।

নির্যাতনের শিকার আরিফুল খান বলেন, 'আমি সকালে নাশতা করে ঘরে শুয়ে ছিলাম। পরে প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য কাউসার আমাকে ফোন দিয়ে যেতে বলেন। আমি না গেলে তিনি লোকজন দিয়ে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর আমার ২ পা বেঁধে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে শরীরের সব জায়গায় মারধর করে।'

'তারা বলেছে যে, আমি ওই গাড়ির গ্লাস ভেঙে টাকা চুরি করেছি। কিন্তু আমি ওই গাড়ির গ্লাস ভাঙি নাই, টাকাও নেই নাই', যোগ করেন তিনি।

প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর সদস্য জাকির হোসেন শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল পাশের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন দেখতে গিয়েছিলাম। পরে দুপুরের দিকে আরিফকে গাছের সঙ্গে উপুর করে ঝুলিয়ে মারার খবর এলাকাবাসী আমাকে ফোন করে জানায়। তখন স্থানীয় কয়েকজনের কাছে ফোন করলে তারা ছেড়ে দেয়। পরে বিকেলে বাড়িতে গিয়ে আরিফুল খানকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাই।'

'চুরি করে থাকলে আইনের হাতে তুলে দেবে। এভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি। তা ছাড়া আরিফুল চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না, এ বিষয়ে কেউ কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি বা যার টাকা চুরি হয়েছে, তারও কোনো অভিযোগ নেই', বলেন তিনি।

অভিযুক্ত প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য কাউসার আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আরিফুল চুরি করেছে। শাসন করার জন্য তাকে মারধর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আগেও চুরির অভিযোগ রয়েছে।'

ওই জমি দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) মিশু বলেন, 'টাকা চুরির পর মালিক কাউকে বিচার দেননি। কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি ওই যুবককে মারধর করেছে।'

প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, 'ওই যুবককে মারধরের একটি ভিডিও দেখেছি। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে না। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt calls for patience as it discusses AL issue with parties

Taken the initiative to introduce necessary amendments to the ICT Act, says govt

33m ago