ডায়াবেটিস রোগীর জন্য আখের রস উপকার না ক্ষতিকর?

ছবি: যুবায়ের বিন ইকবাল

ভাদ্র মাসের গরমে এক গ্লাস ঠাণ্ডা আখের শরবত যে কাউকে সতেজ করে তুলতে পারে মুহূর্তেই। তবে কেউ যদি ডায়াবেটিস রোগী হন এবং রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক বেশি থাকে তাহলে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এমনকি আখের রসের মতো সাধারণ ডিহাইড্রেটিং পানীয়ও একজন ডায়াবেটিক রোগীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

আখের রস কি উপকারী?

ইব্রাহীম জেনারেল হাসপাতাল ও ডিসিইসি'র ডেপুটি চিফ নিউট্রিশন অফিসার পুষ্টিবিদ ফারজানা আনজিন বলেন, এক গ্লাস (২৪০ মিলি) আখের রসে ১৮০ ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৩০ গ্রাম চিনি এবং এতে খাদ্য আঁশ ও বেশি থাকে। আখের রসে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ জলীয় অংশ, ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ সুক্রোজ এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ খাদ্য আঁশ থাকে। এছাড়াও এতে এন্টি অক্সিডেন্ট, কোলেস্টেরল হ্রাসকারী উপাদান এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ আছে। এইসব পুষ্টি উপাদান এর মধ্যে আছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিংক, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন এবং বেশ কিছু অ্যামিনো এসিড। এছাড়াও আখের রসের আরো কিছু উপকারীটা আছে -

ছবি: যুবায়ের বিন ইকবাল

●        আখের রসে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ইমিউন সিস্টেম ও লিভার সুরক্ষায় কার্যকরী।

●        কিডনি ভালো রাখতে আখের রসের ভূমিকা অনবদ্দ্য। এতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যালকালাইন যা এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে এবং মূত্রথলির ইনফেকশন দূর করে।

●        আখের রসে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি রয়েছে। তাই যারা দুর্বল বা ক্লান্ত থাকেন, তারা আখের রস খেলে উপকার পাবেন।

●        শিশুদের বৃদ্ধির জন্য এই রস খাওয়াতে পারেন।

●        আখের রস চিবিয়ে খেলে মুখের ব্যায়াম হয়।

●        উন্মুক্ত স্থানের মেশিনে ভাঙানো আখের রস খাওয়া উচিত নয়। এটি স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে।

●        আখের রসে চিনির মাত্রা বেশি। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে আখের রস খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।

রক্তে শর্করা বৃদ্ধির সঙ্গে আখের রস কীভাবে সম্পর্কিত?

ছবি: যুবায়ের বিন ইকবাল

এত পুষ্টিগুণ থাকা সত্ত্বেও আখের রস ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর অবাধে বা ইচ্ছামতো পরিমাণে খাওয়া উচিৎ না। কারণ, এতে প্রাকৃতিক চিনি বা সুক্রোজ বেশি থাকে৷ ডায়াবেটিস রোগীদের আখের রস খাওয়ার সময় খুব সতর্কতা অবলম্বন করে খাওয়া উচিৎ। অনেক সময় আখের রস খাওয়ার পর হঠাৎ করে রক্তে শর্করা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তারপর আবার হঠাৎ করে শর্করা কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনসুলিন তৈরি হওয়ার সময় পেশী, চর্বি এবং লিভারের কোষগুলো ভালোভাবে সাড়া দেয় না এবং রক্ত থেকে সহজে গ্লুকোজ শোষণ করতে পারে না। ফলে অগ্নাশয় কোষগুলোতে গ্লুকোজ প্রবেশ করতে সাহায্য করার জন্য আরো ইনসুলিন তৈরি করে। এই সময় চিনির কারণে অগ্নাশয়কে অতিরিক্ত কাজ করতে হয় এবং একটা সময় দীর্ঘমেয়াদের জন্য শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি তৈরি হয়। যেসব ডায়াবেটিস রোগীরা ইনসুলিন গ্রহণ করেন তাদের জন্যেও শরীরে হঠাৎ এই বাড়তি চিনির প্রবেশ রক্তের শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে বাধা সৃষ্টি করে।

তবে পুষ্টিবিদ ফারজানা আনজিন বলেন, একজন ডায়াবেটিক রোগী ২ পাইক বা গিট পরিমাণ আখ সকাল ১১ টায় খেতে পারে অথবা এ পরিমাণ আখ থেকে যে পরিমাণ রস হয় ততটুকু খেতে পারবেন। তবে মেডিসিন বা ইনসুলি নেওয়ার পর যদি সুগার বেশি থাকে তবে না খাওয়াই ভালো।

টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার পরিমাণ হঠাৎ স্বাভাবিক এর চেয়ে কমে গেলে আখের রস পানে তাৎক্ষণিক উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া হাইপোগ্লাইসিমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে উপকারী আখের রস। তবে কী পরিমাণে আখের রস খেতে হবে তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো।

Comments

The Daily Star  | English

Jamaat rally commences at Suhrawardy Udyan

Supporters continued to arrive at the venue in processions, chanting slogans and carrying banners in support of the demands

1h ago