সেল্ফ পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফির ৫ কৌশল

ছবি: সংগৃহীত

নিজেকে ফ্রেমে ধরে রাখার ধারণাকে সেল্ফ পোর্ট্রেট বা আত্ম প্রতিকৃতি বলা হয়। চিত্রকার যেমন নিজেকে এঁকে সেল্ফ পোর্ট্রেট করেন, আলোকচিত্রী তেমনটাই করেন যান্ত্রিক কিছু কারিগরিতে। আলোকচিত্রী বা ফটোগ্রাফার ছাড়াই নিজে নিজেই যে ছবি তোলা হয় সেটিকে বলা হয় সেলফি। আমরা কমবেশি সবাই 'সেলফি' তুলে থাকি। সেল্ফ পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফ বলতে কিছুটা বিশেষ ভঙ্গিমায় নিজেকে ক্যামেরার সামনে তুলে ধরাকেই বুঝায়।

সেল্ফ পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফিকে আরও সৃজনশীল করেতে এই আলোচনা।

রিফ্লেকশন বা প্রতিফলন

প্রতিফলন বা প্রতিবিম্ব আমাদেরকে ঘিরেই থাকে সবসময়। নিজেকে নিজের সামনে তুলে ধরতে এর জুড়ি মেলা ভার। সেল্ফ পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফিতেও এই পদ্ধতিটি কাজে লাগিয়ে দারুণ সব ফ্রেমিং সৃষ্টি করা যায়। প্রতিফলনে নিজেকে ধরতে সহায়ক হতে পারে ঘরের দেয়ালে ঝুলতে থাকা আয়না, থাইগ্লাসের জানালা। অথবা লেকের সামনে নিজেকে মেলে দিয়ে হাতের ক্যামেরাকেই প্রশ্ন করতে পারেন, 'দিঘির জলে কার ছায়া গো, তোমার নাকি আমার?' তবে প্রতিফলনের ছবি তোলার ক্ষেত্রে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলটা যাতে ঠিকঠাক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মোশন ব্লার পদ্ধতি

সাদা-কালো, ঠিক-ভুলের বাইনারি নিয়মে সাধারণত আমরা যখন স্পষ্টতারই জয়গান করি, তখনো কিছু অস্পষ্ট দৃশ্যপট এসে যেন আমাদের আরও কিছু ভাববার–তলিয়ে দেখবার সুযোগ করে দেয়। মোশন ব্লার ফটোগ্রাফিও অনেকটা তেমনই। গতি আর অস্পষ্টতার সঠিক মিশেলে ছবিতে আসবে একধরনের অস্থিরতা। এমন সেল্ফ পোর্ট্রেট তুলতে হলে প্রথমেই ক্যামেরার শাটার স্পিড কমিয়ে দিতে হবে। ট্রাইপডে ক্যামেরা ও টাইমার সেট করে দিয়ে শট নেওয়ার সময়টাতে মাথা ঝাঁকুনি দিলে যে ছবিটি তৈরি হবে–তাতে ব্যক্তির মাথা অস্পষ্ট হলেও ছবির বাকি অংশে ফোকাসে থাকবে।

সাদাকালো ফ্রেম

জীবনময় 'সাদাকালো এই জঞ্জালে' ডোবার চাইতে বরং আত্ম-প্রতিকৃতিতে আনা যাক বইয়ের পাতায় লেখা, পুরনো ছাপার হরফের মতো সাদাকালো সৌন্দর্য। বাস্তব জগতে এত বেশি রঙ আমাদের ঘিরে থাকে যে নিজেকে নিজের মতো দেখতে ইচ্ছে করে সেই পুরনো 'চারুলতা'র দৃশ্যের মতো করে। পরে ফিল্টার যোগ করার মাধ্যমে সাদাকালো করার চাইতে ক্যামেরার সেটিংসেই রঙ বদল করে নেওয়া যায়। এতে করে ছবি তোলার প্রক্রিয়াটি আরও অকপট মনে হবে।

আলো-ছায়ার খেলা

প্রতিটি ছবিই আদতে আলো-ছায়ার সংমিশ্রণে তৈরি। ব্যক্তির আশেপাশে বিদ্যমান আলো-ছায়াকে একটু আলাদাভাবে ব্যবহার করলেই ছবিতে স্বাতন্ত্র্য আনা যায়। বিভিন্নভাবেই এ কাজ করা সম্ভব। কোনো ধরনের পর্দা, ফ্রেম, রেখার মতো শূন্যস্থান আছে এমন বস্তুর মধ্য দিয়ে আলোকে ফ্রেমে প্রবেশ করতে দিতে হবে। এভাবে একটি আলাদা প্যাটার্ন তৈরি হবে, যার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির চেহারা ক্যামেরায় ধরা গেলে তৈরি হবে একটি অন্যরকম সেল্ফ পোর্ট্রেট।

রঙিন আলোর ব্যবহার

গৎবাঁধা আলোকসজ্জার ব্যবহারের চাইতে সেল্ফ পোর্ট্রেটকে একটু অন্যভাবে আলোকিত করতে পারেন। ছবিতে আরও উচ্ছলতা কিংবা আমেজ আনতে রঙিন আলোর ব্যবহার বেশ মানানসই একটি কৌশল। কেমন রঙের আলো ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি এখানে ছবির আবহ তৈরিতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেউ চাইলেই সকালের মতো নরম কোনো রঙের আলোতে নিজেকে দেখতে চাইতে পারেন। কিংবা গাঢ় নীল-সবুজ-লালের ফোঁটা ফোঁটা আলোয় গড়ে তুলতে পারেন মুখোশপরা, রহস্যঘেরা পরিবেশ। আলোক উৎসের জন্য ডিম লাইট বা রঙ বদলকারী বাল্ব ব্যবহার করা যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নিজের চেহারা ঘিরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের রও নিয়ে খেলা করা যেতে পারে। এতে হয়তো জন্ম নেবে মনে রাখার মতো কিছু রঙিন সেল্ফ পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফ।

ফটোগ্রাফিতে যাদের আগ্রহ আছে, তাদের জন্য আসলে সেল্ফ পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফির বিশেষত্ব অনেক বেশি। প্রথমত এতে অন্য কোনো মডেলের দরকার হয় না, আর দ্বিতীয়ত নিজেকে নিজেরই নিত্য-নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার সুযোগটাও হাতের মুঠোয় থাকে। তাই চাইলেই ক্যামেরা নিয়ে এরকম দারুণ কোনো পদ্ধতিতে মুহূর্তের মধ্যে বন্দী করে ফেলা যায় নিজেকে।

  

Comments

The Daily Star  | English

BNP hails AL ban, urges speedy trials

Fakhrul seeks election roadmap, citing public frustration over the lack of democratic process

32m ago