অনেকেই হারিয়ে গেলেও আমি হারাইনি, টিকে আছি: পূর্ণিমা

‘২৫ বছরে অনেক উত্থান-পতন দেখেছি।’
পূর্ণিমা। ছবি: স্টার

সিনেমায় ক্যারিয়ারে ২৫ বছর পূর্ণ করলেন চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। ১৯৯৮ সালে নায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় তার। এরপর অনেক সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি, পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। উপস্থাপক হিসেবেও দর্শকপ্রিয় তিনি।

সিনেমার ক্যারিয়ারে ২৫ বছর পূর্তিতে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন পূর্ণিমা।

পূর্ণিমা। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

২৫ বছরের দীর্ঘ যাত্রায় আপনার অর্জন কতটা?

২৫ বছরে অনেক উত্থান-পতন দেখেছি। ২৫ বছর যেভাবে দাপিয়ে বেড়ানোর কথা ছিল, সেভাবে হয়ত পারিনি। আমার যেখানে সবচেয়ে বেশি কাজ করার কথা ছিল, সেটা পারিনি। তবে, জনপ্রিয়তা বলি আর ভালোবাসা—সবার কাছ থেকে পেয়েছি। পরিচালক, প্রযোজক, সাংবাদিক, সহশিল্পী, শুটিং ইউনিটের টিবয়—সবার ভালোবাসা পেয়েছি। এর সবই  এক জীবনের অর্জন। শিল্পী হিসেবে যতটুকু সম্মান ও ভালোবাসা পাচ্ছি, সবই এই ২৫ বছরের অর্জন।

কোনো আক্ষেপ আছে?

আছে। আরও অনেক সিনেমা করার কথা ছিল। আক্ষেপ হচ্ছে, আমাকে নিয়ে যেভাবে সিনেমা করার কথা ছিল, সেভাবে হয়নি। ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে শেষের ৭-৮ বছর উপস্থাপনা আমাকে এগিয়ে রেখেছে। উপস্থাপনা দিয়েও মানুষের মন জয় করা যায়, মানুষের কাছাকাছি থাকা যায়, সেটা আমি দেখেছি।

চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকার সময়ে হঠাৎ করেই নাটকে অভিনয়ের কারণ কী ছিল?

যখন অভিনয় শুরু করলাম, তার কয়েক বছর পরই সিনেমায়  অশ্লীলতার জোয়ার চলে আসে। ওই সময়টাতে টেলিভিশনে কাজ শুরু করি, তাও সিরিয়ালে। 'লাল নীল বেগুনী'সহ আরও কয়েকটি সিরিয়াল করি। আমি ও মৌসুমী আপু এটা করেছি।

কাজেই এটা বলতেই হয় যে শুধু চলচ্চিত্র না, টেলিভিশনও আমাকে সাপোর্ট করেছে। ২ জায়গাতেই সমানভাবে কাজ করেছি। পরে যখন সিনেমার সিচ্যুয়েশন ভালো হলো, তখন শুরু হলো একক নায়ককেন্দ্রিক সিনেমা। তখনই কাজ কমিয়ে দেই।

সবকিছু মিলিয়ে আমি এখনো টিকে আছি, এখনো ভালোবাসে মানুষ, এটাই অনেক। অনেকেই হারিয়ে গেছে, আমি টিকে  আছি। হারিয়ে যাইনি, এখনো কাজ করছি।

অভিনয়ের শুরুর সময় সহজ ছিল, নাকি কঠিন?

আমার ক্যারিয়ারের শুরুটা কঠিনও ছিল, আবার সহজও ছিল। শুরুতে যে পরিচালকের (জাকির হোসেন রাজু) সিনেমায় অভিনয় করেছি, সেটা আমার জন্য বড় ব্রেক ছিল। বড় একজন প্রযোজক ছিলেন, সেটাও বড় ব্রেক ছিল। সেদিক থেকে বলব, আমার শুরুটা সহজ ছিল।

কিন্তু, টিকে থাকার জন্য, একজন অভিনেত্রী হওয়ার জন্য আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে, মেধার প্রমাণ দিতে হয়েছে, যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়েছে। তখন আমি ১৪ বছরের একটি মেয়ে। সবকিছু মিলিয়ে প্রথম সিনেমা ছিল আমার জন্য  সৌভাগ্য।

ওই সময়ের শীর্ষ নায়িকা মৌসুমী, শাবনূরসহ যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে আপনার নামও তো আলোচিত হলো?

তখন তো মৌসুমী আপু, শাবনূর খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। এরপর পপি এলেন, প্রথম সিনেমা দিয়েই বাজিমাত করলেন। তারপর ওই সারিতে আমার নামটিও এলো।

এর জন্য যুদ্ধ করতে হয়েছে আমাকে। একদিনে নামটা দাঁড়ায়নি। কম করে হলেও ৫ বছর লেগেছে। ওই সময় আমি ও শাবনূর রোমান্টিক সিনেমায় অভিনয় শুরু করি। পপি এক ধরণের সিনেমা করতেন, মৌসুমী আপু আরেক ধরনের সিনেমা করতেন।

purnima
অভিনেত্রী পূর্ণিমা। ছবি: সংগৃহীত

প্রয়াত মান্নাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

মান্না ভাইকে সবসময় স্মরণ করি। তিনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে  বাঁচিয়ে রাখার জন্য লড়াই করেছেন। তিনি সবসময় চাইতেন, সিনেমা শিল্পটা ভালো থাকুক। শুধু নিজের জন্য নয়, পুরো সিনেমার জন্য তিনি কাজ করেছেন, ভেবেছেন। এখানেই তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। এখানেই তার বড় মনের পরিচয় পাওয়া যায়।

সেই সময় রুবেল ভাই, ফেরদৌস, রিয়াজ সবাইকে নিয়ে মান্না ভাই বসতেন। কখনো একা বড় হতে চাননি। সবাইকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চেয়েছেন এবং সর্বোপরি সিনেমার মঙ্গল চেয়েছেন। আমরা এখন আর সেটা করি না। সবার সঙ্গে বসে পরামর্শ করতেন মান্না ভাই। নতুনদের জন্যও তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন।

এই সময়ে আপনার চাওয়া কী?

ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া নেই। সব চাওয়া ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে। আমি চাই ঢাকাই সিনেমা ঘুরে দাঁড়াক, উঠে দাঁড়াক। দু-একজন নায়ক-নায়িকা নয়, অনেক নায়ক-নায়িকা প্রয়োজন। কাদা ছোড়াছুড়ি চাই না। কেবল সিনেমার ওপরই সব শিল্পীর ফোকাস চাই। আরও নায়ক-নায়িকা আসা উচিত। নতুনরা যেন ব্রেক পায়।

আপনার এতদূর আসার পেছনে পরিবারের কার অবদান সবচেয়ে বেশি?

অবশ্যই মায়ের। মায়ের আগ্রহ, সাপোর্ট, ভালোবাসা, পরিশ্রম আমাকে কাজ করতে এবং স্বপ্ন দেখতে সাহস জুগিয়েছে। মা চেয়েছেন তার মেয়ে প্রতিষ্ঠিত হোক, যাকে এক নামে সবাই চিনবে। বাকিটা আমার চেষ্টা।

সংসার জীবনে কেমন আছেন?

সবাই মিলে ভালো আছি।

Comments

The Daily Star  | English
social safety net budget

Safety Net Programmes: Slice for the poor only gets thinner

Although budgetary allocation for social safety net programmes has increased over the past 13 years, the share of compatible programmes has declined significantly.

1h ago