তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে অন্য প্রতিষ্ঠান খুঁজছে বেবিচক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ চলছে। স্টার ফাইল ছবি

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং পরিষেবায় হতাশ হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৃতীয় টার্মিনালে এ কাজের জন্য আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, সম্প্রতি দুর্বল লাগেজ হ্যান্ডলিং সেবা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় ও যাত্রীদের অসন্তোষের জেরে বেবিচক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, 'তৃতীয় টার্মিনালে প্রত্যাশিত পরিষেবার মানের একটি রূপরেখা প্রস্তুত করার জন্য আমরা একজন পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছি।'

সূত্র জানায়, কোনো প্রতিষ্ঠান কাজটি পেলে যদি তাদের পরিষেবায় কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হয়, তাহলে পরবর্তীতে তাদের দিয়েই পুরো বিমানবন্দরের কাজ চালানো হতে পারে।

তবে, তা করা হলে বিমানের বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। কারণ রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইনসটির বার্ষিক আয়ের (প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা) প্রধান উৎস গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা বিমানের উপার্জনের অন্যতম উৎস, তবে এ সেবা যথাযথভাবে পরিচালনায় তারা তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'সরকার যাদের উপযুক্ত মনে করবে, তাদেরকেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজটি দেওয়া হবে। আমি মনে করি, এ ব্যাপারে বিমানের আগ্রহ দেখানোর কোনো কারণ নেই।'

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কয়েক দশক ধরে যাত্রীরা লাগেজ অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেক সময় বিমানবন্দরে পৌঁছানোরও পরেও চেক-ইন লাগেজ পেতে যাত্রীদের ১ ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়।

যাত্রীদের ভোগান্তির কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও বিমানবন্দর কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন।

তিনি বলেন, 'প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। কিন্তু, দেশে এসে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তাদের লাগেজ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।'

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, 'বিমানবন্দরই একটি দেশ সম্পর্কে প্রথম ধারণা দেয়। যদি বিমানবন্দরে অভিজ্ঞতা খারাপ হয়, তবে এতে দেশের ওপর নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়।

মফিদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যদিও বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সম্পর্কিত পরিষেবার মান উন্নত করার চেষ্টা করছে, তবে তা যথেষ্ট নয়। আমরা তৃতীয় টার্মিনালে আন্তর্জাতিক মানসম্মত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা বজায় রাখা নিশ্চিত করতে চাই।'

'সব প্রক্রিয়া শেষ করার পরে আমরা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও কার্গো পরিষেবা সরবরাহে প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক বিডিং করব', বলেন তিনি।

এর ফলে যাত্রীরা আরও ভালো সেবা পাবেন এবং সরকারের আয়ও বাড়বে বলে উল্লেখ করেন বেবিচক প্রধান।

এর আগে মফিদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, বিমানকে বেশ কয়েকবার প্রতিটি মালপত্রের যথাযথ যত্ন নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত বিমান কিছুই করেনি।

তবে, বিমানও বিডিংয়ে অংশ নিতে পারবে বলেও জানান তিনি।

কোন প্রতিষ্ঠান এ কাজ পেতে পারে, সে প্রসঙ্গে সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী গণমাধ্যমকে বলেন, 'যারা সব নিয়ম-কানুন মেনে যোগ্য বিবেচিত হবে, তারাই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাবে। যাত্রীদের আরও ভালো পরিষেবা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য এবং এর জন্য সম্ভাব্য সবকিছু আমরা করব।'

তৃতীয় টার্মিনালটি ডিজাইন করেছেন প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন।

বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, গত মাস পর্যন্ত তৃতীয় টার্মিনালের প্রায় ৪৪ দশমিক ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং আগামী বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং কোরিয়ার স্যামসাং ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটি নির্মাণ করছে।

৩ তলা টার্মিনালে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার ফ্লোর স্পেস থাকবে। এতে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৪টি প্রস্থান ও ৬৪টি ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ২৭টি লাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ এবং ১৬টি ক্যারোসেল থাকবে।

এ ছাড়াও, ১ হাজার ২৩০টি যানবাহনের জন্য একটি নতুন পার্কিং এবং একটি নতুন ৬৩ হাজার বর্গমিটার আমদানি ও রপ্তানি কার্গো কমপ্লেক্স থাকবে। টার্মিনালে অ্যাপ্রনের ওপর ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করার জন্য জায়গা থাকবে।

বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বছরে ৮০ লাখ যাত্রীকে পরিষেবা দিচ্ছে। প্রায় ১৩০টি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার যাত্রী বহন করে থাকে।

তবে, ২০২৫ সালের মধ্যে যাত্রী সংখ্যা বছরে ১৪ মিলিয়ন এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রায় ২৫ মিলিয়নে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বেবিচক সূত্র।

Comments

The Daily Star  | English

Tax-free income limit may rise to Tk 3.75 lakh

The government is planning a series of measures in the upcoming national budget to alleviate the tax pressure on individuals and businesses, including raising the tax-free income threshold and relaxing certain compliance requirements.

11h ago