ছিনতাইয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ দিলো মাদক মামলা

নাটোর
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

নাটোরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের মাদক মামলা দিয়ে আদালতে হাজির করার অভিযোগ ওঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

এ অভিযোগে পুলিশের ৩ উপপরিদর্শককে সশরীরে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ।

আদালতের আদেশের বরাত দিয়ে স্টেনোগ্রাফার মো. শহীদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত শুক্রবার গুরুদাসপুর থানার মধ্যমপাড়া এলাকায় ২ ভ্যান ছিনতাইকারীকে আটক করে স্থানীয়রা। তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

পুলিশ ওই ২ জনকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে ভর্তি করে।

এরপর গত শনিবার আসামি মো. স্বপন ও মো. আলহাজ্ব প্রামাণিককে মাদক মামলায় নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ।

সে সময় ম্যাজিস্ট্রেট আসামিদের কাছে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চান।

তারা ২ জনে জানান, তারা ভ্যান ছিনতাই করেছিলেন। কিন্তু, পুলিশ তাদের মাদক মামলায় আদালতে হাজির করেছে।

এরপর ম্যাজিস্ট্রেট গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. সুজাউদ্দিনের দেওয়া চিকিৎসাপত্র দেখেন। এতে চিকিৎসক উল্লেখ করেন, ভ্যান চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত রোগীরা ২৪ ঘণ্টা আগে শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন।

আসামিদের বক্তব্য শুনে ও চিকিৎসাপত্রের মতামত বিশ্লেষণ করে ম্যাজিস্ট্রেট জানান, আসামিরা ভ্যান চুরি বা ছিনতাইয়ের ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন তা বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে।

আদালতকে দেওয়া আসামীদের জবানবন্দির বরাত দিয়ে স্টেনোগ্রাফার মো. শহীদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত শুক্রবার স্থানীয় কাউন্সিলর মোখলেস আসামি ২ জনকে ভ্যান কেড়ে নিয়ে বিক্রি করার অপরাধে এসআই মাহবুবুর রহমানের হাতে সোপর্দ করেন। পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।'

তিনি আরও বলেন, 'পরে তাদের ২ জনের কাছ থেকে ১০ গ্রাম করে মোট ২০ গ্রাম গাঁজা জব্দ করা হয়েছে উল্লেখ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে মামলা রেকর্ড করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে আসামিরা জানিয়েছে।'

ম্যাজিস্ট্রেট তার অবজারভেশনে বলেন, 'যদি ঘটনাটা ভ্যান চুরি বা ছিনতাইয়ের হয়ে থাকে তাহলে আসামিদের বিরুদ্ধে চুরি বা ছিনতাইয়ের এজাহার না করে মাদক আইনে কেন মামলা করা হলো? আসামিদের বক্তব্য যদি সঠিক হয়ে থাকে, তবে তাদের কাছ থেকে জব্দকৃত ভ্যান ও ভ্যান বিক্রির টাকা কেন জব্দ তালিকায় নেই?'

নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ মামলার সংবাদদাতা ও গুরুদাসপুর থানার উপপরিদর্শক মো. মাহবুবুর রহমান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. জাহিদ হোসেন এবং অপর উপপরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. আখতারুজ্জামানকে আগামী ২৮ জুলাই আদালতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার আদেশ দেন।

মামলার সাক্ষী ও গুরুদাসপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোখলেছ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বপন ও আলহাজ্ব এক ভ্যান চালককে মেরে গুরুতর আহত করে ভ্যান ছিনতাই করে বিক্রি করে দিয়েছিল। ২ জনকে ধরে আমরা পুলিশে সোপর্দ করি।'

'মাদক উদ্ধারের' বিষয়ে তিনি বলেন, 'কারো কাছে মাদক পাওয়া যায়নি। তারা ভ্যান চুরির সঙ্গে জড়িত।'

উপপরিদর্শক মো. মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাউন্সিলর মোখলেছসহ স্থানীয়রা আসামিদের আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পরে তাদের কাছ থেকে গাঁজা উদ্ধার করা হয়। সেভাবে জব্দ তালিকা করে আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।'

আসামিদের কাছে গাঁজা পাওয়ার বিষয়ে সাক্ষীদের অস্বীকার করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'জব্দ তালিকায় সাক্ষীদের সই আছে। এখন অস্বীকার করছেন। কিন্তু, তারা সই করলেন কেন তখন?'

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মতিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি সেদিন ছুটিতে ছিলাম। বিষয়টি ভালোভাবে জানা নেই।'

তিনি জানান, খোঁজ নিয়ে তিনি জেনেছেন যে আসামিদের গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

আদালতের আদেশের বিষয়ে আব্দুল মতিন বলেন, 'এ বিষয়ে এখনো কিছু জানি না। আদেশের কপি হাতে পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

নাটোর জজ কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট শহীদ মাহমুদ মিঠু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভ্যান চুরি বা ছিনতাইয়ের মামলার আসামিদের যদি ১০ গ্রাম করে গাঁজা দিয়ে পুলিশ চালান দিয়ে থাকে তবে তা গুরুতর অপরাধ হবে।'

তার মতে, 'এমন ঘটনা ঘটে থাকলে এতে গুরুতর অপরাধ করার পর সামান্য মাদক দিয়ে আসামিদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে অপরাধীরা তাদের অপরাধ কর্মে আরও উৎসাহিত হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Tajia procession marks holy Ashura in Dhaka amid tight security

Crowds began gathering at the site from the early hours, with many attending alongside their families and children

1h ago