অস্ট্রিয়ায় ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপের সুযোগ

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নে যদি আর্থিক সক্ষমতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে অস্ট্রিয়াকে রাখতে পারেন পছন্দের দেশের তালিকায়। কারণ ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে দেশটির সরকার অস্ট্রিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বয়ে আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট ও পোস্টগ্রাজুয়েট লেভেলে অফার করছে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ। 

টিউশন ফিসহ অন্যান্য খরচের ভাবনাকে পেছনে ফেলে শিক্ষাগত অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করার এ এক অনন্য সুযোগ। অস্ট্রিয়ায় পড়ার জন্য ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপের আবেদন প্রক্রিয়া, সুবিধা ও সময়সীমার তথ্য থাকছে আজকের আয়োজনে। 

অস্ট্রিয়ান সরকারের অনুদানে ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় সহযোগিতা করে আসছে দেশটি। এসব স্কলারশিপের আওতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট, পোস্টগ্রাজুয়েট ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করছেন। স্কলারশিপ প্রোগ্রামের মধ্যে রয়েছে হোটেল ম্যানেজমেন্ট, স্মৃতিস্তম্ভ ও জাদুঘর, আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, রাজনৈতিক অর্থনীতিসহ নানা বিষয়। অস্ট্রিয়ান সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীদারিত্বে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী শিক্ষা দেওয়ার জন্য স্কলারশিপ দিচ্ছে। 

অস্ট্রিয়ার সরকারি স্কলারশিপের সুবিধা

ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেলে পড়ালেখা ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বাড়তি সময় বিনিয়োগ করা যায়। অস্ট্রিয়ায় অধ্যয়নের জন্য দেশটির সরকার আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট ও পোস্টগ্রাজুয়েট লেভেলে স্কলারশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কিছু বাড়তি ডিগ্রি সুবিধা প্রদান করবে। সম্পূর্ণ টিউশন ফি পাওয়া যাবে বিধায় শিক্ষাগত খরচের বোঝা কমবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিগ্রি সম্পন্ন করা যাবে। 

অধ্যয়নরত অবস্থায় মানসম্পন্ন চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার সুবিধা থাকছে। জীবনযাত্রার ব্যয়ের জন্য মাসিক এক হাজার ৫০ ইউরো আর্থিক সহায়তা দেবে। একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সাহায্য করবে। ইইউ, ইএফটিএ বা ওইসিডি'র সদস্য দেশের নাগরিক না হলে নির্দিষ্ট ভ্রমণ ভাতা পাবেন। 

বাসস্থানের ওপর নির্ভর করে মাসিক ২২০ থেকে ৪৭০ ইউরো আবাসন খরচ দেওয়া হবে। কোয়েড'র হাউজিং ডিপার্টমেন্টে প্রতি মাসে ১৮ ইউরো প্রশাসনিক ফি প্রদান করা হবে। আর্থিক সক্ষমতা না থাকলেও যাতে শিক্ষা এবং ব্যক্তিগত বিকাশের ওপর প্রভাব না ফেলে সেজন্য এসব সুবিধা দেওয়া হবে।

আবেদনে যা যা লাগবে

অস্ট্রিয়াতে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে। এসব ডকুমেন্ট স্কলারশিপ প্রোগ্রামের জন্য আপনার যোগ্যতা ও উপযুক্ততা মূল্যায়নে ভূমিকা পালন করবে। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত তথ্য সঠিকভাবে আবেদনপত্রে উল্লেখ করতে হবে।

আপনি কে এবং কেন আপনি স্কলারশিপের জন্য একজন আদর্শ প্রার্থী, সে সম্পর্কে নির্বাচন কমিটিকে ধারণা দেওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা, সাফল্য এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করতে হবে। আপনার প্রস্তাবিত গবেষণা পরিকল্পনা বা অধ্যয়নের উদ্দেশ্যের রূপরেখা লিখতে হবে। এটি আপনার একাডেমিক লক্ষ্য এবং নির্বাচিত অধ্যয়নের ক্ষেত্রে আপনার উৎসাহ তুলে ধরবে। 

আপনার সক্ষমতা, কৃতিত্ব এবং সম্ভাবনার প্রমাণ দিতে অধ্যাপক, একাডেমিক উপদেষ্টা বা নিয়োগকর্তার কাছ থেকে পাওয়া সুপারিশকৃত চিঠি দিতে হবে। আপনার পরিচয় ও জাতীয়তার তথ্য দিতে বৈধ পাসপোর্টের অনুলিপি প্রদান করতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করতে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি সার্টিফিকেটের অনুলিপি জমা দিতে হবে। আপনি যদি ইতোমধ্যে একটি ডিগ্রি প্রোগ্রাম (গ্র‍্যাজুয়েশন) সম্পন্ন করে থাকেন, তাহলে তার লিখিত প্রমাণ প্রদান করতে হবে। 

অধ্যয়নের ক্ষেত্র বা যোগ্যতার মানদণ্ডের ওপর নির্ভর করে অস্ট্রিয়ান ফান্ড ফর 'রিনসিলিয়েশন, পিস অ্যান্ড কোঅপারেশন' বা জার্মান ফাউন্ডেশন 'মেমরি, রেসপনসিবিলিটি এবং ফিউচার (কর্মীদের জন্য)' থেকে করা চুক্তি বা সার্টিফিকেশনের প্রয়োজন হতে পারে। আবেদন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে সব প্রয়োজনীয় নথি সঠিকভাবে এবং প্রদত্ত সময়সীমার মধ্যে জমা দিতে হবে।

আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা 

অস্ট্রিয়ার ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ অস্ট্রিয়া ব্যতীত সব দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। স্কলারশিপ প্রোগ্রামের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হতে আপনাকে অবশ্যই নিম্নলিখিত মানদণ্ডগুলো পূরণ করতে হবে-

ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য নিজ দেশ বা অন্য কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে অবশ্যই বারো বছরের শিক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য  আবেদনকারীর অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রি বা সমমানের যোগ্যতা থাকতে হবে।

ভালো একাডেমিক পারফরম্যান্স একাডেমিক কৃতিত্ব প্রদর্শন ও সাফল্যের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিশ্রুতি দেবে। এটি স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলবে।

যেহেতু অনেক অস্ট্রিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি, তাই ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। 

প্রোগ্রামভেদে যোগ্যতার মানদণ্ড ভিন্ন হতে হতে পারে। তবে উপর্যুক্ত যোগ্যতা সব প্রোগ্রামের জন্যই প্রয়োজন পড়বে।  

আবেদনপত্র জমাদানের সময়সীমা

অস্ট্রিয়ায় ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপে আবেদনের জন্য ১ মার্চ এবং ১ সেপ্টেম্বর দুটি সময়সীমা থাকে। আবেদন গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য চূড়ান্ত সময়সীমার আগেই জমা দিলে ভালো হয়।  

আবেদন করার প্রক্রিয়া 

অস্ট্রিয়ান সরকারি স্কলারশিপের অফিসিয়াল অ্যাপ্লিকেশন লিঙ্কে প্রবেশ করে স্কলারশিপের আবেদনের অপশন খুঁজে বের করতে হবে। ওয়েবসাইটে দেওয়া ফরমে হালনাগাদকৃত তথ্য দিতে হবে। তারপর দুইবার চেক করে ফরম জমা দিতে হবে। ইমেইলের মাধ্যমে জমা দেওয়ার বার্তা দেওয়া হবে।  

মনে রাখবেন, আবেদন প্রক্রিয়ার সময় বিশদ বিবরণের প্রতি মনোযোগ এবং নির্ভুলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব পদক্ষেপ আপনাকে অস্ট্রিয়ায় অধ্যয়নের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এক ধাপ এগিয়ে দেবে। 

Comments

The Daily Star  | English

Reform now at crucial stage

Poised on the cusp of discussions on its much-promised reforms, the interim government completes six months in office following a wave of turbulence.

4h ago