ইউরোপের কোন দেশে পড়তে যাবেন

ছবি: সংগৃহীত

বিদেশে পড়ালেখায় আগ্রহী বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পছন্দের তালিকায় থাকে ইউরোপের দেশগুলো। প্রাচীনতম মহাদেশ ইউরোপের প্রতিটি দেশের অনন্য সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যময় ইতিহাস এবং নতুন বিষয় আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। ইউরোপে উচ্চশিক্ষা অর্জনের যাত্রায় নতুন ভাষা শেখা, ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া, আকর্ষণীয় স্থাপত্য পরিদর্শন করা ছাড়াও নানাবিধ সুবিধা পাওয়া যায়। 

ইউরোপের অনেক দেশে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীরা বহু-সংস্কৃতির একাডেমিক পরিবেশে পড়ালেখা করতে পারেন। আন্তর্জাতিক ভাষার প্রোগ্রামের আধিক্য থাকায় বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে টিউশন ফিও মওকুফ করা হয়। তবে কোন দেশগুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত সেই প্রশ্ন থাকে সবার মনে। 

এক নজরে সে সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক। 

জার্মানি

বার্লিন, মিউনিখ, কোলন, ফ্রাঙ্কফুর্ট বা অন্য যেকোনো শহরে পড়ালেখা করতে চাইলে জার্মানি আপনাকে দেবে বিশ্বমানের গবেষণার পাশাপাশি উচ্চমানের শিক্ষার নিশ্চয়তা। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একাডেমিক পারফরম্যান্স, আধুনিক সুবিধা এবং গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের কাজে নিয়োগের সুযোগ প্রদানের জন্য সুপরিচিত। তাছাড়া চমৎকার পরিবেশে শিক্ষাদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্টি বজায় রাখার জন্য বিশ্বের সর্বোচ্চ র‌্যাংকিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয় আছে এখানে। অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি না থাকায় ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে জার্মানি। 

নেদারল্যান্ডস

প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানানোর জন্য নেদারল্যান্ডস ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। নেদারল্যান্ডসে ডাচ ভাষার চেয়ে ইংরেজি ভাষার প্রোগ্রামই বেশি এবং অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একই গ্রেডিং সিস্টেম ব্যবহার করে। নেদারল্যান্ডসের উচ্চশিক্ষা উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার ওপর ভিত্তি করে সাজানো হয়েছে। এখানকার পাঠ্যক্রম বর্তমান ঘটনা, সমস্যা ও আবিষ্কারের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বাস্তব প্রেক্ষাপটের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন। যে বিষয়েই পড়েন না কেন, নেদারল্যান্ডস আপনাকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ করে তুলবে।

অস্ট্রিয়া

আপনি যদি বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশে বসবাস ও পড়ালেখা করতে চান তাহলে অস্ট্রিয়া হতে পারে পছন্দের দেশ। কম বা বিনা টিউশন ফি সুবিধা এবং জার্মান, ইতালীয় ও হাঙ্গেরিয়ান সংস্কৃতির অনন্য মিশ্রণ অস্ট্রিয়াকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আপনার পড়ালেখার অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করবে। ভিয়েনা, সালজবার্গ বা অন্যান্য শহরের চমৎকার স্থাপত্যশৈলী, কফি সংস্কৃতি, বল নৃত্য মুগ্ধ করবে যে কাউকে। বিশ্বের সংগীতের রাজধানী খোদ ভিয়েনায় সংগীতে ডিগ্রি অর্জন করা কিংবা ফ্রয়েডের মনো-বিশ্লেষণের স্থানে মনোবিজ্ঞান পড়ার অনুভূতিই অন্যরকম।

স্পেন

বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ, উষ্ণ জলবায়ু, সাশ্রয়ী মূল্যের জীবনযাত্রার খরচ ও টিউশন ফি'র জন্য পরিচিত স্পেন। বিশেষ করে স্প্যানিশ ভাষার প্রতি আকর্ষণ শিক্ষার্থীদের স্পেনে পড়ালেখার জন্য উৎসাহিত করে। তবে ইংরেজি ভাষার আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট, পোস্টগ্র‍্যাজুয়েট ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রোগ্রামের সংখ্যাও বেড়েছে এখানে। সামাজিক বিজ্ঞান, সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিখ্যাত বিজনেস স্কুলও রয়েছে স্পেনে।

ইতালি

ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ইতালিতে হাজারো ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থী ও পর্যটকের আগমন ঘটে। আপনি যদি কলা, স্থাপত্য বা বিশ্ব ইতিহাসে আগ্রহী হন, তাহলে ইতালি আপনার জন্য আদর্শ স্থান। উচ্চতর শিক্ষা, অভাবনীয় শহর, সুস্বাদু রন্ধনপ্রণালী, কম জীবনযাত্রার খরচের সুবিধা দিয়ে বিদেশে আপনার ডিগ্রি অর্জনের যাত্রাকে সমৃদ্ধ করার অপেক্ষায় আছে ইতালি। 

পোল্যান্ড 

জনসংখ্যার সাক্ষরতার হারের দিক থেকে পোল্যান্ড শীর্ষ ইউরোপীয় দেশ। পোলিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রয়েছে মানসম্মত শিক্ষার দীর্ঘ ঐতিহ্য ও খ্যাতি। মেডিসিন, ইঞ্জিনিয়ারিং, স্থাপত্য ও তথ্য প্রযুক্তির গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হন। পোল্যান্ডের সব জায়গায় স্বল্প বাজেটে থাকা যায়। এখানকার আকর্ষণীয় সংস্কৃতি মধ্যযুগীয় রূপকথার পরিবেশকে যেন ব্যস্ত শহুরে জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়। 

পর্তুগাল 

প্রাণবন্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ ও শান্ত পরিবেশের দেশ পর্তুগাল। বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান এখানে। রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি শহর ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের কারণে জমজমাট থাকে। কম খরচে পড়ালেখা ও জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানো যায় এখানে। সামাজিক বিজ্ঞান, সাংবাদিকতা, আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা বেশি। 

সুইজারল্যান্ড 

শুধু চকোলেট, বিলাসবহুল ঘড়ি ও ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের দেশ হিসেবে নয়, ক্যারিয়ার-কেন্দ্রিক ও যুগান্তকারী গবেষণার জন্যও বিখ্যাত সুইজারল্যান্ড। অসংখ্য প্রতিভাবান বিজ্ঞানীর আকর্ষণের কারণ সুইস বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনও করা যায় খুব সহজভাবে। তবে এখানে জীবনযাত্রার ব্যয় একটু সাবধানে পরিচালনা করতে হবে।

ফ্রান্স

কথায় আছে- সত্যিকারের বোহেমিয়ান জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় ফ্রান্সে। তবে ফ্রান্সে বেশ কয়েকটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে, সেগুলোর আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং দেখলেই এখানকার একাডেমিক পরিবেশ কেমন তা ধারণা করা যায়। এ ছাড়া, ফরাসি বিজনেস স্কুলগুলো ব্যতিক্রমী শিক্ষা-শৈলী ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্যও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। আপনি যদি ফ্যাশনে আগ্রহী হন তাহলে ফরাসি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করতে পারেন। প্যারিস, বোর্দো, মার্সেই শহরের জনাকীর্ণ পরিবেশ ও জাদুঘর আপনাকে মুগ্ধ করবে। 

বেলজিয়াম 

ইউরোপের কেন্দ্র ও জাতিসংঘের সদর দপ্তরের জন্য পরিচিত বেলজিয়াম। ফরাসি, জার্মান, ডাচ এবং ইংরেজি ভাষাভাষী প্রোগ্রামে পড়া যায় এখানে। নানা সুবিধার জন্য প্রতি বছর এক লাখেরও বেশি ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থী বেলজিয়ামে পাড়ি জমায়। 

আয়ারল্যান্ড 

ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো আয়ারল্যান্ডও বন্ধুত্বপূর্ণ। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিষেবা ও সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের জীবনকে সহজ করে তোলে। আয়ারল্যান্ডকে শিক্ষার্থী-বান্ধব দেশও বলেন অনেকে। এখানকার জনপ্রিয় বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে তথ্য প্রযুক্তি, ব্যবসায় ও বিজ্ঞান।

নর্ডিক দেশ

নর্ডিক দেশগুলোর মধ্যে নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। এখানকার প্রোগ্রামগুলো সমস্যা-সমাধান বিষয়ক শিক্ষা ও অত্যাধুনিক গবেষণা কাজের জন্য পরিচিত। এ ছাড়া, ডেনমার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নরওয়ের আউটডোর কাজকর্ম বা সুইডেনের বন্ধুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা পেতে পারেন। সমৃদ্ধশালী, স্থিতিশীল ও সুখী নর্ডিক দেশগুলোতে উচ্চমানের জীবন উপভোগ করারও সুযোগ রয়েছে। 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy

The number of Bangladeshis crossing the perilous Mediterranean Sea to reach Italy has doubled in the first two months this year in comparison with the same period last year.

7h ago