শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করব: রাবি ভিসি

অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। ছবি: সংগৃহীত

রক্তাক্ত এক গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে সম্প্রতি রাষ্ট্র ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়েছে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। তবে এই আন্দোলনের জেরে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ থাকায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ। ইতোমধ্যে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই নিয়োগ পেয়েছেন নতুন উপাচার্য। যাদের সামনে এখন পুরোনো অচলায়তন ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুনভাবে সাজানোর চ্যালেঞ্জ।

এসব নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: প্রায় এক মাসের প্রশাসন-শূন্য রাবি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?

অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব: এই শূন্যতার ফলে ক্লাস-পরীক্ষা, সবমিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, সবকিছুর ওপরই প্রভাব পড়েছে। একইসঙ্গে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, এটা একটা গণঅভ্যুত্থানের পরের পরিবেশ। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই, গণঅভ্যুত্থান বা গণবিপ্লবের পরে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়, সেটা স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় সবসময়ই লাগে। আর এক মাস দীর্ঘ সময়। সবমিলিয়ে বলতে গেলে, হ্যাঁ কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।

ডেইলি স্টার: রাবির একাডেমিক কার্যক্রমে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসবে কি?

অধ্যাপক সালেহ: আমি মনে করি আমরা এখন একটি পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আছি। একাডেমিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন, গবেষণা ও প্রশাসন সবকিছুতেই একটা পরিবর্তন চাইব, আর সেটা অবশ্যই ইতিবাচক হতে হবে। আমরা শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করব।

ডেইলি স্টার: সেশনজট কমানোর জন্য কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং কবে থেকে এগুলোর বাস্তবায়ন হতে পারে?

অধ্যাপক সালেহ: সেশনজট কমাতে আমার একটা ব্যক্তিগত মতামত হলো, এটাকে পাঁচ মাসে কমিয়ে আনা। তিন মাসে শেষ করার কথা আসলে সেখানে শিক্ষা কার্যক্রমের ঠিক কতটুকু পূরণ করা যাবে, সেটা নিয়ে আমি সন্দিহান। আমরা কঠিন সময় পার করছি বিধায় পড়াশোনায় ছাড় দেবো, আমি এটার পক্ষপাতী নই।

ডেইলি স্টার: নিয়মিত ক্লাস করানোর বিষয়ে শিক্ষকদের জবাবদিহির জায়গা কতটুকু?

অধ্যাপক সালেহ: জবাবদিহির জায়গা আছে। কিন্তু যেভাবে একটি জবাবদিহির পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে আমরা ব্যর্থ। এটাও একটা নির্মম বাস্তবতা। আমরা অচিরেই শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষকদের মূল্যায়নের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসব। 

ডেইলি স্টার: লেজুড়বৃত্তি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী রাজনীতির অবসান ঘটবে? নাকি প্রশাসন এ ব্যাপারে নমনীয় থাকবে?

অধ্যাপক সালেহ: বিগত দশকগুলোতে যে গঠনতন্ত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী রাজনীতি হয়েছে, তার ফলাফল যে ভালো হয়নি তা আমাদের জানতে বাকি নেই। আমরা এটা নিয়ে খুব গুরুত্বের সঙ্গেই কাজ করছি। মাস-খানেকের মধ্যেই আমরা একটা প্রস্তাবনা সবার সামনে তুলে ধরতে পারব বলে আশা করছি।

ডেইলি স্টার: রাকসু সচল হবে? রাকসু নিয়ে প্রশাসনের ভাবনা কী?

অধ্যাপক সালেহ: আমার ব্যক্তিগত কার্যপ্রণালীর প্রথম দিকেই থাকবে রাকসু নির্বাচন। আপাতত এটুকুই বলব।

ডেইলি স্টার: শিক্ষার্থীরা নিজেদের অভিযোগের কার্যকরী সমাধান পাবেন কীভাবে? তদন্ত কমিটি গঠনের সেই পুরোনো তন্ত্রেই কি বর্তমান প্রশাসন বিশ্বাসী?

অধ্যাপক সালেহ: আমার প্রশাসন তদন্ত কমিটির সেই পুরোনো তন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। আমার প্রশাসন চায় তদন্ত কমিটি নিয়ে আগে যা ঘটেছে, তা আমরা ঘটতে দেবো না। আমরা সব তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করব, যদি শিক্ষার্থীরা চায়।

ডেইলি স্টার: শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ আবাসিকতা কতদিনের মধ্যে নিশ্চিত করা সম্ভব? হলের ডাইনিংয়ের মান উন্নয়ন, আবাসনের মান উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কতটুকু সক্ষম?

অধ্যাপক সালেহ: আমি মনে করি হলে শতভাগ আবাসিকতা সম্ভব। সারা দুনিয়াতেই এটা হয়ে থাকে। তবে এর জন্য সময় লাগবে। আমাদের পর্যাপ্ত হল নেই, নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু এই চাহিদাগুলো কতদিনে পূরণ করতে পারব, সেই দিনক্ষণ বেঁধে দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে আমি নেই। আরও নির্দিষ্ট করে যদি বলি, এই ব্যাপারটা নির্ভর করছে আমরা ঠিক কত টাকা ফান্ডিং পাচ্ছি তার ওপর।

ডেইলি স্টার: ২০১৯ সালের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কৃষি প্রকল্প সেখানে ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি ছিল। ২০১৯ সালের পর কিছু ফসলি জমিও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ২০১৯ সালের পর ব্যয় বেশি দেখানো হয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

অধ্যাপক সালেহ: আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করব। নিজেরাও খতিয়ে দেখতে চাই, ঠিক কী কারণে কৃষি প্রকল্পের এই ক্ষতিটা হলো।

ডেইলি স্টার: ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কী সিদ্ধান্ত নেবেন?

অধ্যাপক সালেহ: শিক্ষার্থীরা চাইলে যেকোনো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শী হতে পারেন। এটা তাদের মৌলিক অধিকার। এ ব্যাপারে আমার কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু যেসব শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে, অবৈধ সুবিধা নিয়েছে, হল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, তাদের একটা জবাবদিহির মধ্যে আসতেই হবে। এই অন্যায়গুলোর যতদিন না সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আমি শিক্ষক, হল প্রশাসন, ডীন সবাইকে নিয়েই এই সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করব।

ডেইলি স্টার: শিক্ষার্থীদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

অধ্যাপক সালেহ: উপাচার্য নয়, শিক্ষক হিসেবে আমি তাদের কাছে পড়াশোনা, চিন্তাভাবনা ও গবেষণা চাই। নতুন বাংলাদেশে যোগ্যতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। তারা (শিক্ষার্থীরা) খুবই অদ্ভুত, অথচ সুন্দর একটা সময় পার করে এসেছেন। বিপ্লবের প্রায় সব উপাদানের স্বাদ তারা গ্রহণ করেছেন। এখন তাদের আবার পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে হবে।

ডেইলি স্টার: শিক্ষার্থীদের কাছে নিজেকে ঠিক কীভাবে উপস্থাপন করতে চান?

অধ্যাপক সালেহ: আগেই বলেছি, আমি চাই তারা আমাকে শিক্ষক হিসেবেই দেখুক। আমি যখন চলে যাব, তখন তারা যাতে আমাকে বর্তমান সময়ের চেয়েও আরও চমৎকারভাবে কাছে পায়, আমার নিজের কাছে নিজের প্রত্যাশা এটুকুই।

Comments

The Daily Star  | English

137 journalists sued so far

They have been charged with murder, attempted murder, unlawful assembly, rioting, abduction, vandalism, extortion, assault, and in certain cases, genocide, and crimes against humanity.

9h ago