জাবিতে মধ্যরাতে ছাত্রলীগ-পুলিশের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত, শিক্ষক ও ৪ সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ

জাবিতে মধ্যরাতে ছাত্রলীগ-পুলিশের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত, শিক্ষক ও ৪ সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ
হেলমেট পরে হাতে লাঠিসোটা নিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আবারও হামলা চালিয়েছে জাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

সোমবার মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের ওপর এই হামলা করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জাবিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান করছিল। মধ্যরাতে জাবি শাখা ছাত্রলীগ ও বহিরাগতরা সেই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। তখন আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে আশ্রয় নেয়। পরে সেখানে ঢুকে তাদের মারধর করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এক পর্যায়ে বিভিন্ন হল থেকে কয়েক শ শিক্ষার্থী বেরিয়ে এসে ভিসির বাসভবন ভাঙচুর করে। সেসময় পুলিশ-ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও ছররা গুলি ছোড়ে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জাবির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক খন্দকার লুৎফুল এলাহী ও চার সাংবাদিক। আহত ও গুলিবিদ্ধরা এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এর আগে রাত ১২টার দিকেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠি হাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। সেই সময় বহিরাগতসহ ছাত্রলীগের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী মিলে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

জাবিতে মধ্যরাতে ছাত্রলীগ-পুলিশের হামলা
আহত দুই সাংবাদিক। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষার্থীরা বলেন, হামলাকারী ব্যক্তিদের অধিকাংশের মাথায় হেলমেট ও হাতে ধারাল অস্ত্র ছিল। সেই সময় দুটি পেট্রলবোমা ছুড়তে দেখা যায় তাদের। হামলা থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে আশ্রয় নেন। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রাত সোয়া ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটক ছেড়ে রাস্তায় চলে যান। পরে রাত পৌনে ২টার দিকে ফটক ভেঙে বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। তখন বেশ কয়েকটি পেট্রলবোমা ছুড়ে বাসভবনের প্রধান ফটকের লাইটসহ বিভিন্ন লাইট ভাঙচুর করেন তারা। এরপর আন্দোলনকারীদের ব্যাপক মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেই সময় উপাচার্য বাসভবনেই ছিলেন।

রাত সোয়া ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে কয়েক শ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিসির বাসভবনের দিকে আসেন। সেই সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন তারা। পরে সেখানে অবস্থানরত পুলিশের ওপর চড়াও হন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে কাঁদানে গ্যাস, ছররা গুলি ছোড়ে পুলিশ।

গুলিবিদ্ধ দৈনিক বাংলার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আব্দুর রহমান সার্জিল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভিসির বাসভবনে ঢুকে আন্দোলনকারীদের মারধর করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা হল থেকে বেরিয়ে এসে ছাত্রলীগকে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। সেসময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ছররা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে অনেকেই আহত হয়। আমরা চার গণমাধ্যমকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছি।

গুলিবিদ্ধদের মধ্যে বণিক বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেদি মামুনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এনাম মেডিকেলের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার আলী বিন সোলাইমান ডেইলি স্টারকে বলেন, রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তত ৬০ জন আহত রোগী হাসপাতালে এসেছেন চিকিৎসা নিতে। তাদের মধ্যে ৩০ জন গুলিবিদ্ধ রয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহেল কাফি টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীরা যখন ভিসির বাসভবনের সামনে মুখোমুখি হয়, অপরদিক থেকে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনের সামনে উপস্থিত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেন। সেসময় আমাদের টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হামলায় আমিসহ অন্তত ১০-১৫ জন পুলিশ আহত হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
crimes against journalists

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

16h ago