হলের সিট বুঝিয়ে দিতে ঢাবি প্রশাসনকে শিক্ষার্থীর উকিল নোটিশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’, ‘চ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ

হলে বরাদ্দ আবাসিক সিট বুঝিয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, রেজিস্ট্রার ও হলের প্রভোস্টকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র জালাল আহমদ এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।

গত ৫ জুন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের মাধ্যমে উকিল নোটিশটি পাঠান তিনি। আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ নোটিশ পৌঁছেছে বলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন।

আগামী ৭ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করবেন বলেও জানান জালাল আহমদ।

ওই শিক্ষার্থী উকিল নোটিশে বলেন, তিনি ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের  সুপারিশে ওই বছরের নভেম্বর মাস থেকে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৪৫৮ নম্বর রুমে সিট বরাদ্দ পান। কিন্তু ওই রুমে থাকা একজন সিনিয়র শিক্ষার্থীর অনুরোধে এবং তারই সমঝোতায় তাকে ৩৫১ নম্বর রুমে থাকতে দেওয়া হয়।

কিছুদিন পর তাকে ৪৫৮ নম্বর রুমের পরিবর্তে ৪৬২ নাম্বার রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই রুমে ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি গোলাম রসুল বিপ্লব অবৈধভাবে অবস্থান করায় তিনি তার রুমে উঠতে পারেননি।

উকিল নোটিশে আরও বলা হয়, ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে ওই বছরের ৪ মার্চ দিবাগত রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে এবং ছাত্রদল কর্মী  হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে ৩৫১ নম্বর রুম থেকে মারধর করে বের করে দেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। হলের আবাসিক সিট বুঝে পেতে এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিসে অভিযোগ দিলেও আজ পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

হলের আবাসিক সিট বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য হলের প্রভোস্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং ভিসি বরাবর বারবার আবেদন করলেও আজ পর্যন্ত তাকে রুম বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি বলে উকিল নোটিশে বলা হয়।

এতে আরও বলা হয়, 'গত বছরের ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনে ভর্তির সময় আমি হলের আবাসিক ফি পরিশোধ করার পরও রহস্যজনক কারণে হলের আবাসিক কার্ড দেওয়া হয়নি। গত ২৯ আগস্ট আমার হলের আবাসিক কার্ড নবায়ন করার জন্য প্রভোস্ট বরাবর লিখিত আবেদন করলেও আইডি কার্ড নবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।'

নোটিশে ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, আবাসিক কার্ড না দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তিনি।  তিনি ২০১৯-২০ সেশনে প্রশাসন কর্তৃক মওকুফকৃত পরিবহন এবং আবাসিক ফি ফেরত পাচ্ছেন না। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন চাকরিতে বর্তমান ঠিকানা হিসেবে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের নাম দেওয়া। হলে থাকতে না পারার কারণে তাকে না পেয়ে তার চিঠিপত্র ফেরত যাচ্ছে।

উকিল নোটিশ পাঠানো শিক্ষার্থী জালাল আহমদ বলেন, 'আমার বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই। ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে আমার পক্ষে থাকা কষ্টকর। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ৮-৯ হাজার টাকা এনে চলতে হচ্ছে। এটা আমার পরিবারের জন্য বোঝা এবং আমার জন্য লজ্জাজনক বিষয়।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি দৈনিক আমার বার্তা পত্রিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছি। সংবাদ সংগ্রহ করতে আমাকে নিয়মিত ক্যাম্পাসে থাকতে হয়। সাংবাদিকতা ছাড়াও ক্যাম্পাস ও হলের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য আমি‌। হলে থাকতে না পারার কারণে আমার একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলামে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। তাই হলের আবাসিক সিট বুঝিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি।'

হল থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন দায়ের করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ধরনের কোনো নোটিশের বিষয়ে অবগত নই৷ যদি কোনো নোটিশ এসে থাকে,তাহলে আইনি বিষয় আইনিভাবে দেখা হবে৷'

Comments

The Daily Star  | English

Neonatal mortality still high at 20 per 1,000 births

A recent study has raised concerns about their current condition, revealing operational issues that could threaten future progress.

13h ago