‘বুয়েটের কাছে প্রমত্তা পদ্মা পরাস্ত হয়েছে’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, ‘পদ্মাকে শাসন করা খুব সহজ কাজ ছিল না। পদ্মাকে শাসন করেছে বুয়েট। বুয়েটের কাছে পদ্মা পরাস্ত হয়েছে।’
বুয়েট অ্যালামনাইয়ের উদ্যোগে পুরকৌশল সেমিনার হলে পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ছবি: স্টার

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, 'পদ্মাকে শাসন করা খুব সহজ কাজ ছিল না। পদ্মাকে শাসন করেছে বুয়েট। বুয়েটের কাছে পদ্মা পরাস্ত হয়েছে।'

শনিবার বিকেলে বুয়েট অ্যালামনাইয়ের উদ্যোগে পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সংবর্ধনা দেওয়ার পর 'পদ্মা সেতু: আমাদের স্বপ্ন, সংকল্প ও অর্জন' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বুয়েটের পুরকৌশল সেমিনার হলে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

পদ্মা সেতু নির্মাণে অসামান্য অবদান রাখায় বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, প্যানেলের সাবেক সদস্য প্রফেসর ড. আলমগীর মজিবুল হক, প্রফেসর ড. এ এম এম সফিউল্লাহকে মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞ দলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম শামীম জেড বসুনিয়া ও ৪ সদস্য প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত, প্রফেসর ড. এম ফিরোজ আহমেদ, প্রফেসর ড. হোসাইন মো. শাহীন, প্রফেসর ড. খান মহমুদ আমানত এবং পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামকে সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হয়।

বুয়েট অ্যালামনাই সভাপতি প্রফেসর ড. আইনুন নিশাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল জব্বার খান।

উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ এ সেতু নির্মাণে কাজ করেছে, অবদান রেখেছে। পদ্মা সেতু নিয়ে শিক্ষার্থীদের সেমিনার করা যেতে পারে। জামিলুর রেজার নামে পুরস্কার, ল্যাবরেটরি করা যেতে পারে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল জব্বার খাঁন বলেন, পদ্মা সেতুর সাথে মাওয়া ও জাজিরা সংযোগ সড়কে সংযুক্ত হয়েছিলাম। সংযোগ সড়কের নিম্নস্তরের মাটি উপরের মাটির ভার নিতে পারবে কি না এ ব্যাপারে আমার কাছে সার্ভিস চাওয়া হয়েছিল। এ সমাধানে দেশের অর্থ সাশ্রয় হয়েছিল। তিনি বলেন, দক্ষিণ বঙ্গের ২১টি জেলায় মাস্টার প্ল্যান নিয়ে ভাবা দরকার। সেখানে উন্নয়নের ব্যাপারে পরিকল্পনা দরকার।

পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হোসাইন মো. শামীম জেড বসুনিয়া বলেন, আমি চেষ্টা করছি পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ডকুমেন্ট করার। পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন সেটি অনস্বীকার্য।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যদি বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করা না যেত তবে পদ্মা সেতু হতো না। দেশে যেসব মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে তাতে এই দুই সেতুর অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যাবে।

পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য প্রফেসর ড. এম. ফিরোজ আহমেদ বলেন, যমুনা সেতু নির্মাণ করেছিলাম তাই পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহস পেয়েছি। এই সেতুর কারণে যাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে তারা আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণে জীববৈচিত্র নিয়েও কাজ করা হয়েছে। নদীতে কচ্ছপের ডিম পাড়া জায়গা ও পাইল ড্রাইভিংয়ের সময় মাছের ক্ষতি হতে পারে কি না সে বিষয়ে নজর দেওয়া হয়। নদীতে ইলিশ মাছ কোন স্তরে আছে তার সমীক্ষা করা হয়। ডিম পাড়ার মৌসুমেও দেখা হয় কোথায় অবস্থান। সবকিছু বিবেচনা করে দেখা গেল ৭ মিটারের বেশি পানি থাকলে সেখানে কাজ করা যাবে না। তা সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।

তিনি বলেন, আরেকটি বড় সমস্যা ছিল পানির ভেতরে শব্দ। যখন হ্যামারের মাধ্যমে পাইল বসানো হয় তখন পানির ভিতরে অনেক শব্দ হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায় প্রায় ২০০ ডেসিবল শব্দ উৎপন্ন হয়। তবে এটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কমতে শুরু করে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে পাইলিং স্থান থেকে ১০০ মিটার মধ্যে জেলেরা মাছ ধরতে পারছে। এতে ইলিশের কোনো ক্ষতি হয় না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, ঝড় এসব বিষয়েও কাজ করা হয়েছে।

পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য প্রফেসর ড. হোসাইন মো. শাহীন বলেন, ২০১৭ সালে পদ্মা নদীতে পিলার বসানোর জায়গার মাটিতে সমস্যা দেখা দেয়। যেখানে পাইল বসবে তা উপযুক্ত ছিল না। যদি সেখানে পাইল বসে তবে যে লোড নেওয়ার কথা সেটি পারবে না। বিভিন্ন সয়েল টেস্টে ভিন্নতা দেখা গেল। যাতে স্ক্রিন গ্রাউটিং করে আসলো সমাধান। পদ্মা সেতুর অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে বড় ধরনের ব্রিজ নির্মাণ সম্ভব।

বুয়েট অ্যালামনাই মহাসচিব প্রকৌশলী মাহতাব উদ্দিন বলেন, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বেই পুরো সেতু বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। তিন জন সহযোদ্ধা দক্ষ কারিগর হিসাবে ভূমিকা রাখেন। পদ্মা নদীতে ব্রিজ নির্মাণের ভাবনাটি বাস্তবায়ন করা ছিল খুব কঠিন। স্বাধীনতার পর বড় অর্জন পদ্মা সেতু নির্মাণ। এতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কারিগরি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। এ সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে ১০ জন শ্রমিক মারা গেছেন, তাদের আত্মত্যাগকেও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

আলোচনায় পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছি, প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেছি। টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে শুরুতেই খুব সমস্যা ছিল। কারণ বিদেশিদের খুব আস্থা ছিল না। ঠিকাদার নির্ধারণ করার পর ৪ বার সময় পরিবর্তন করতে হয়েছে। যা ছিল চ্যালেঞ্জিং। সেতু নির্মাণে অনেক টাকা লাগবে কিন্তু একসঙ্গে লাগবে না। ধাপে ধাপে প্রয়োজন হবে। বাজারদর অনুযায়ী ডলার ক্রয় করতে হয়েছে। ডলারের দাম ৭৮ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কিনতে হয়েছে। নিজস্ব ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে এসব কাজ করা হয়েছে। বিদেশিদের নিয়েছি এক্সপার্ট হিসেবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারদের আস্থা বেড়েছে। সুনাম বেড়েছে।

তিনি জানান, সয়েল সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধানের জন্য বুয়েটের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। সরাসরি যোগাযোগ ছিল বুয়েটের সাথে, তাই বুয়েটের কাছে কৃতজ্ঞ।

Comments

The Daily Star  | English

Bangla Blockade: Students again block Shahbagh, Science Lab, other key Dhaka intersections

Students demonstrating against the quota system in government jobs blocked some key intersections of the capital, including Shahbagh and Farmgate, this afternoon as part of their “Bangla Blockade” programme

53m ago