যেভাবে উদ্বেগমুক্ত থাকবেন চাকরিপ্রার্থীরা
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2022/06/10/job_opportunity.jpg?itok=EpbT1RD2×tamp=1654829174)
চাকরির আবেদন প্রক্রিয়াটি কম ঝক্কির নয়। শেষ পর্যন্ত চাকরিটি হবে কি না, সেটা ভেবে ঘাবড়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে চাইলে এই প্রক্রিয়াটিকে চাপমুক্ত করা সম্ভব।
চাকরির আবেদনকালীন চাপ কমাবার তেমনই কিছু টিপস-
গুছিয়ে কাজ করুন
কোন চাকরির জন্য আবেদন করেছেন, আবেদনের ডেডলাইন, চাকরি বিষয়ক অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সবকিছু সাজিয়ে একটি স্প্রেডশিট ফাইল কিংবা ডকুমেন্ট তৈরি করুন। এতে করে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ডেডলাইন ভুলে যাবার ভয় থাকবে না এবং আপনি থাকবেন অনেকটাই দুশ্চিন্তামুক্ত।
উপযুক্ত কভার লেটার ও সিভি লিখুন
আপনি চাকরিতে যে পদের জন্য আবেদন করছেন ঠিক সেই পদটির জন্য উপযোগী কভার লেটার লিখুন এবং সিভি তৈরি করুন। এতে করে আপনার সিভির মধ্য দিয়েই চাকরিটির প্রতি আপনার আগ্রহ এবং জানাশোনা প্রকাশ পাবে। যা আপনাকে অধিকাংশ প্রার্থীর চেয়ে আলাদা করে তুলবে।
নেটওয়ার্কিং বাড়ান
কাজের সুযোগ সম্পর্কে জানতে এবং পছন্দের চাকরি পেতে নেটওয়ার্কিং একটি দুর্দান্ত ভূমিকা রাখতে পারে। অধিকাংশ চাকরিদাতাই একজন যোগ্য এবং পরিচিত প্রার্থীকে চাকরি দিতে বেশি আগ্রহী হয়। এ জন্যই আপনার পছন্দের চাকরি ক্ষেত্রে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে কিংবা আপনাকে চাকরির সুযোগের বিষয়ে জানাতে পারে এমন বন্ধু, আত্মীয়স্বজন কিংবা পেশাদার ব্যক্তিদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাবার্তা বলুন এবং ভালো যোগাযোগ গড়ে তুলুন।
সাক্ষাৎকার চর্চা করুন
যত বেশি চর্চা করা যায় সাক্ষাৎকারের দক্ষতা তত বেশি বাড়ে। এ জন্যই চাকরির সাক্ষাৎকার দেওয়ার আগে এটি চর্চা করা জরুরি। আপনার একজন বন্ধু কিংবা আত্মীয়ের কাছে কিছু সাধারণ চাকরির সাক্ষাৎকারের উপযোগী প্রশ্নের উত্তর বলা চর্চা করুন। এতে করে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং সত্যিকারের সাক্ষাৎকারের সময়ে আপনি থাকবেন অনেকটাই চাপমুক্ত।
নিজের প্রতি যত্নশীল হোন
চাকরির জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাওয়া আপনার শরীর ও মনের ওপর বেশ চাপের সৃষ্টি করে। আর তাই এ সময়ে ভালো থাকার জন্য শরীর ও মনের প্রতি যত্নশীল হওয়া খুব প্রয়োজন। নিজেকে আনন্দে রাখুন, পছন্দের কাজ করুন, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া এবং ঘুম হচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন।
বাস্তববাদী হোন
চাকরির জন্য আবেদন করা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া এবং এ জন্য আপনি একবারে কতগুলো চাকরিতে আবেদন করবেন সে সম্পর্কে বাস্তববাদী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এক সঙ্গে অনেক বেশি চাকরিতে আবেদন করা উচিত নয়। যে পরিমাণ শ্রম এবং সময় আপনি আবেদন এবং সুষ্ঠু প্রস্তুতির জন্য ব্যয় করতে পারবেন তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সে পরিমাণ চাকরির জন্যই আবেদন করা উচিত।
প্রত্যাখ্যানকে ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রত্যাখ্যান একজন ব্যক্তি হিসেবে আপনার যোগ্যতার প্রতিফলন নয়। এটি কেবল চাকরির বাছাই প্রক্রিয়ার একটি অংশ। আর এ জন্যই নিরুৎসাহী না হয়ে প্রত্যাখানকে সহজভাবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করুন।
ধৈর্য্য ধারণ করুন
চাকরি খোঁজা একটি সময়সাধ্য প্রক্রিয়া, তাই ধৈর্য্য ধরা খুব প্রয়োজন। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ঠিকমতো চেষ্টা চালিয়ে গেলে পছন্দের চাকরির সুযোগ শেষ পর্যন্ত আসবেই, তাই হাল ছেড়ে দেবেন না।
একটি সময়সূচি তৈরি করুন
চাকরির সন্ধান এবং এ বিষয়ক সব কাজের জন্য প্রতি দিনের কিংবা সপ্তাহের অন্যান্য সব কাজের বাইরে একটি আলাদা সময় নির্দিষ্ট রাখুন এবং এই সময়সূচি মেনে চলার চেষ্টা করুন। এটি আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি এতে করে আপনার কাজ হবে আরও গোছানো এবং আপনি সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারবেন।
বিরতি নিন
দীর্ঘদিন ধরে চাকরি খুঁজতে গিয়ে যদি হাঁপিয়ে ওঠেন তবে বুঝবেন এবার একটু জিরিয়ে নেওয়ার সময় এসেছে। সবকিছু থেকে কিছুদিন বিরতি নিন, মনে আনন্দ যোগায় এমন কাজ করুন। নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ান। আপনি আপনার সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়েই চেষ্টা চালাচ্ছেন, এটি মনে রাখুন।
ক্ষেত্র পরিবর্তন করুন
দীর্ঘসময় চেষ্টার পর পছন্দের চাকরির সুযোগ না পেয়ে থাকলে তখন ক্ষেত্র পরিবর্তন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে আপনার পছন্দের চাকরি ক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত; তবে ভিন্ন এমন কোথাও আবেদন করুন। এটি আপনাকে মূল্যবান অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করতে পারে এবং ভবিষ্যতে আপনার পছন্দসই ক্ষেত্রটিতে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি বাড়িয়ে দিতে পারে।
সহায়তা খুঁজুন
চাকরি খোঁজা একটি একাকী প্রক্রিয়া হতে পারে, তাই বন্ধু, পরিবার এবং পেশাদারদের কাছ থেকে সহায়তা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যারা নিজেরাই চাকরি খোঁজার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং তাদের কাছে পরামর্শ এবং সহায়তা চান।
ইতিবাচক মনোভাব রাখুন
চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক মনোভাব সবকিছু বদলে দিতে পারে। নিজেকে মনে করিয়ে দিন যে আপনার মূল্যবান দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং আপনি শেষ পর্যন্ত একটি ভালো চাকরি পাবেন। একটি ইতিবাচক মনোভাব আপনাকে আরও উদ্যমী হতে অনুপ্রাণিত করবে যা আপনার সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে কয়েকগুণ।
খুব বেশি চাপ নেবেন না
মনে রাখবেন যে চাকরি পাওয়া আপনার যোগ্যতা বা সাফল্যের একমাত্র পরিমাপক নয়। চাকরি খোঁজা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চাকরি পেতে হবে, এমন চাপ তৈরি করা ঠিক নয়। চাকরি পাওয়ার ওপরে নয় বরং পাওয়ার চেষ্টার ওপর এ সময়ে বেশি মনোযোগী হওয়া ভালো।
বিভিন্ন ধরনের কাজের মানসিকতা রাখুন
শুধু নির্দিষ্ট ধরনের চাকরি বা নির্দিষ্ট পদে আবেদন করার মানসিকতা রেখে নিজেকে সীমাবদ্ধ করবেন না। বরং বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ গ্রহণের মানসিকতা রাখুন। কেন না কখন কোন সুযোগ আপনার জন্য বড় সফলতা এনে দেবে তা আগে থেকে বলা যায় না।
অনলাইন সাইটের ব্যবহার
চাকরির সন্ধানে সহায়তা করার জন্য অনলাইনে রয়েছে বেশকিছু সাইট। চাকরির সুযোগ খুঁজতে জব সার্চ ইঞ্জিন, অনলাইন জব বোর্ড এবং পেশাদার নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করুন। এগুলোতে অনেক সময় এমন চাকরির নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তি পাবেন যা অন্য কোথাও প্রকাশিত হয়নি।
নতুন কিছু শিখুন
নতুন একটি দক্ষতা অর্জন চাকরির বাজারে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। আপনি যে চাকরির জন্য আবেদন করছেন তার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক একটি নতুন দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করুন। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ক্লাস কিংবা ওয়ার্কশপের সাহায্য নিতে পারেন।
ইন্ডাস্ট্রি নিউজের খোঁজ রাখুন
সবশেষ ইন্ডাস্ট্রি নিউজ সম্পর্কে আপ-টু-ডেট থাকুন। এটি কাজের ক্ষেত্র সম্পর্কে আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে তুলবে। পাশাপাশি চাকরির সাক্ষাৎকারে কথা বলার জন্য বেশ কিছু রসদও আপনি পেয়ে যাবেন।
সাফল্য উদযাপন করুন
সাফল্য যত ছোটই হোক, তা উদযাপন করতে ভুলবেন না। সেটি হতে পারে কোন চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য ডাক পাওয়া কিংবা নতুন চাকরি লাভ। তাই ছোট বড় সব সাফল্য উদযাপন করুন। এতে করে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে ।
অনুবাদ করেছেন নাফিসা ইসলাম মেঘা
Comments