সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছেছে নাসার মহাকাশযান পার্কার সোলার প্রোব

সূর্যকে প্রদক্ষিণরত মহাকাশযান পার্কার সোলার প্রোব। ছবি: নাসা

সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে পৃথিবী থেকে রওনা হয় নাসার মহাকাশযান পার্কার সোলার প্রোব। অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রা ও তীব্র বিকিরণের মধ্যে এখন সূর্যের বায়ুমণ্ডলের বাইরের স্তর বা করোনায় অবস্থান করছে মহাকাশ যানটি।

আগামী ২৭ ডিসেম্বর পার্কার সোলার প্রোব থেকে সংকেত আসতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। তখন জানা যাবে, প্রোবটি তার কার্যকারিতা ধরে রাখতে পেরেছে কি না।

আজ মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। 

গত এপ্রিলেই সূর্যের করোনায় প্রবেশ করে পার্কার। তবে সেটি গত সপ্তাহে প্রথম নিশ্চিত করতে সক্ষম হন নাসার বিজ্ঞানীরা। ইতোমধ্যে সূর্যকে ২১ বার প্রদক্ষিণ করেছে পার্কার। ১ হাজার ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে সক্ষম এই মহাকাশযান প্রতি প্রদক্ষিণের মাধ্যমে সূর্যের কাছাকাছি যাচ্ছে।

পার্কার এখন পর্যন্ত মানব-সৃষ্ট সবচেয়ে দ্রুততম বস্তু। মানুষের তৈরি কোনো যান এর আগে সূর্যের এত কাছে যায়নি।

প্রোবটি সেকেন্ডে ১৯৫ কিলোমিটার বেগে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। প্রদক্ষিণের সময় সবচেয়ে নিকটতম অবস্থানে সূর্যপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৬ দশমিক ১ মিলিয়ন কিলোমিটার বা ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থান করে পার্কার।

মহাকাশযানটি বর্তমানে সূর্যের ঠিক কতটা কাছে আছে, সেটি বুঝাতে নাসার বিজ্ঞান শাখার প্রধান ড. নিকোলা ফক্স বিবিসিকে বলেন, 'যদি পৃথিবী এবং সূর্যের দূরত্ব এক মিটার হয়, তাহলে বর্তমানে পার্কারের অবস্থান সূর্য থেকে মাত্র চার সেন্টিমিটার দূরে।'

কী করবে পার্কার?

এই মিশন নিয়ে ফক্স বলেন, 'শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমরা সূর্য নিয়ে গবেষণা করেছি। কিন্তু একটি জায়গার পরিবেশ বুঝতে হলে সেখানে উপস্থিত হওয়াটা জরুরি। সুতরাং সূর্যের ভেতরে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত আমরা ঠিক বুঝতে পারব না সেখানের পরিবেশ কেমন।'

মূলত সূর্য নিয়ে গবেষণার জন্যই নির্মাণ করা হয়েছে পার্কারকে। সূর্যের বায়ুমণ্ডলের বাইরের স্তর বা করোনা কিছু রহস্য সমাধান করতে পারে এই যান।

জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেনিফার মিলার্ড বিবিসিকে বলেন, সূর্যের বাইরের দিকে থাকার পরও করোনার তাপমাত্রা সৌরপৃষ্ঠের তুলনায় কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রি বেশি। সেটা কেন, তা এখনো জানেন না বিজ্ঞানীরা।

এছাড়া, পার্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সৌর বাতাসের প্রকৃতি এবং পৃথিবীর ওপর এর প্রভাব বোঝার জন্য তথ্য সংগ্রহ করবেন। সৌর বাতাস পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে, যার ফলে মেরু অঞ্চলের দিকে রাতের আকাশে অরোরা দেখা যায়।

আবার চৌম্বক ক্ষেত্রের এই প্রভাবের কারণে কখনো কখনো পাওয়ার গ্রিড ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেয়।

উচ্চ তাপমাত্রা ও বিকিরণের মধ্যে বিপজ্জনকভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে থাকায় এ মুহূর্তে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে পার্কারের। নাসার বিজ্ঞানীরা তাই বড়দিনের ছুটিতে উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছেন কখন আবার সংকেত পাঠাবে মহাকাশযানটি।

নিকোলা ফক্স বলেন, 'আমি এই মহাকাশযান নিয়ে সবসময় চিন্তার মধ্যে থাকি। তবে কঠিন, তীব্র পরিস্থিতি সহ্য করার মতো করেই একে তৈরি করেছি আমরা।' 

উচ্চ তাপমাত্রা ও অসহিষ্ণু পরিস্থিতির কারণে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলারও সম্ভাবনা আছে পার্কারের। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ২৭ ডিসেম্বর জানা যাবে মহাকাশযানটি অক্ষত ও কার্যকর আছে কি না।

Comments

The Daily Star  | English

Effective tariff for RMG exports to US climbs to 36.5%: BGMEA

The tariff will be a bit less if 20% of the cotton used in garment production is sourced from the USA

2h ago