আইপিএস ও ইউপিএস কেনার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন
দুঃসহ এই গরম আর বারবার লোডশেডিংয়ের চক্রে পড়ে মানুষজন এখন ইলেকট্রনিক্সের দোকানে ছুটছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সত্ত্বেও বাসস্থান বা অফিসে ঝুটঝামেলাবিহীন জীবনযাপনের জন্য অনেকেই এখন আইপিএস ও ইউপিএস কিনছেন।
তবে এই তাড়াহুড়োতে অনেকে বিক্রেতার মিষ্টি কথায় গলে ভুল পণ্যটি কিনে বসেন। তাই আইপিএস ও ইউপিএস কেনার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা ভালো, তা নিয়েই এই লেখাটি।
পার্থক্য
শুরু করার আগে প্রথমেই আইপিএস এবং ইউপিএসের পার্থক্য নিয়ে কথা বলা দরকার। ইউপিএস (আনইন্টারাপ্টেড পাওয়ার সাপ্লাই) এবং আইপিএস (ইনস্ট্যান্ট পাওয়ার সাপ্লাই) তখন বিদ্যুতের যোগান দেয়, যখন বিদ্যুতের প্রধান লাইনে সরবরাহ বন্ধ থাকে। কিন্তু ইউপিএস এই সংযোগ বদলের বিষয়টি লোডশেডিংয়ের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে করতে পারে, যা কি না এক সেকেন্ডেরও কম সময়।
তবে আইপিএসের ক্ষেত্রে ১ সেকেন্ড বা এর চেয়ে কিছুটা বেশি সময় লাগে। আজকাল বেশিরভাগ আইপিএসেই ইউপিএস মোড থাকে, তাই দুভাবেই কাজ চালানো সম্ভব হয়।
ধরন
পণ্য কেনার আগে ক্রেতাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তিনি বাসাবাড়ি বা অফিসের জন্য কোন ধরনের আইপিএস বা ইউপিএস চাচ্ছেন। ২ ধরনের আইপিএস রয়েছে: বৈদ্যুতিক এবং সোলার সিস্টেম। বৈদ্যুতিক আইপিএস বাসস্থানের বিদ্যুতের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে এবং বিদ্যুৎ থাকাকালীন এটি চার্জ গ্রহণ করে। অন্যদিকে সোলার সিস্টেম আইপিএস সূর্যালোক থেকে শক্তির যোগান নেয় এবং এরজন্য কোনো প্রধান বিদ্যুতের সংযোগ থাকতে হয় না। বিদ্যুতের বাড়তি খরচের হিসেবে সোলার আইপিএস সাশ্রয়ী। এ ছাড়া এ তালিকায় আছে মিনি আইপিএস, যা কি না প্রতিটি ডিভাইসের ক্ষমতা ১০০ ওয়াট পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।
ইউপিএস রয়েছে ২ ধরনের
অনলাইন এবং অফলাইন। অফলাইন ইউপিএস অনলাইনের তুলনায় বেশি সাশ্রয়ী। অন্যদিকে কম সময়ের সংযোগ বিচ্ছিন্নতার জন্য অফলাইন ইউপিএস বেশি উপযোগী। তাই আপনি যদি অনলাইন ইউপিএস কেনার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে মাথায় রাখা দরকার যে বেশিরভাগ পণ্যের মতোই দাম যত বেশি হবে– অনলাইন ইউপিএসের মানও তত ভালো হবে।
ক্ষমতা
আইপিএস-ইউপিএস কেনার আগে হিসাব করতে হবে, আপনার ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোতে ঠিক কতটুকু বিদ্যুৎ প্রয়োজন এবং কতগুলো ডিভাইস সংযুক্ত করা হবে। যদি যোগানের চেয়ে চাহিদা বেশি হয়, তাহলে প্রয়োজন পূরণ হবে না। তাই হিসাব করার সময় ডিভাইসগুলোর পাওয়ার বা ওয়াটশক্তি পরিমাপ করে নিতে হবে। বেশিরভাগ সময় পণ্যের ওপরেই এগুলো লেখা থাকে, যার ওপর ভিত্তি করে ব্যবহার অভ্যেস বদলে নেওয়া যায়।
সঠিক পরিমাণে বিদ্যুৎ যোগান পেতে চাইলে আপনি যত ঘণ্টা একটি ডিভাইস ব্যবহার করবেন, সে সংখ্যা দিয়ে ওয়াটের পরিমাণকে গুণ দিয়ে নিন এবং এরপর ফলাফলকে ১০০০ দিয়ে ভাগ করুন। সহজ করে বলা যায়, স্থানীয় বাজারের বৈদ্যুতিক পাখাগুলোতে প্রয়োজন হয় ১০০ ওয়াট, অন্যদিকে বিদেশি ফ্যানগুলোতে লাগে ১৫০ ওয়াটের মতো। একটি টিভি চালু থাকতে প্রয়োজন হয় ১০০ ওয়াট এবং একটি টিউবলাইটে দরকার পড়ে ৬০ ওয়াট।
'ওয়াটেজ' ঠিক করার আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কতক্ষণ ধরে একটি ডিভাইস চালানো হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেহেতু দীর্ঘ সময় ধরে ব্ল্যাকআউট হচ্ছে, স্বাভাবিকতই মানুষ চাইবে পুরোটা সময়জুড়েই আইপিএস ও ইউপিএস-এর মাধ্যমে যাতে কাজ চালিয়ে দেওয়া যায়। সব সময় নিশ্চিত করতে হবে যে আইপিএস-ইউপিএস-এর ২০ শতাংশ যেন সবচেয়ে অনুকূলমাত্রায় ব্যাকআপ পারফর্ম্যান্সের জন্য প্রস্তুত থাকে।
ফিচার
অনেকক্ষণ ধরে চলার জন্য কিছু নির্দিষ্ট ফিচার আইপিএস ও ইউপিএসকে সহায়তা করে। পাওয়ার সাপ্লাই ডিভাইসে যাতে ওভারচার্জিং, ওভারলোডিং এবং শর্ট সার্কিট সুরক্ষা ফিচারগুলো থাকে। এ ছাড়া খেয়াল রাখতে হবে, আইপিএস ও ইউপিএস যেন সব ডিভাইসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, যাতে সুরক্ষাব্যবস্থা সব সময় বজায় রাখা যায়।
ডিভাইসের মধ্যে ঠিক মাত্রার সাইন তরঙ্গ আউটপুট আছে কি না, সেটিও দেখতে হবে। এই সাইনওয়েভটি মূলত একটি স্পষ্ট সংকেত দেয় এবং বজ্রপাতের সময় ডিভাইসগুলোকে ঠিকভাবে চলতে সাহায্য করে।
আজকাল আইপিএস ও ইউপিএস-এর মধ্যে ডিজিটাল ডিসপ্লে আছে, যাতে ডিভাইসের স্ট্যাটাস দেখা যায়। এই সবগুলো ফিচার যাতে ঠিকভাবে কাজ করে, এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে যাতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়।
ওয়ারেন্টি
আইপিএস ও ইউপিএস-এর স্থায়িত্ব ব্যাটারি যতক্ষণ চলে, ততক্ষণ। আইপিএস ও ইউপিএস-এর সব ধরনের ওয়ারেন্টিই ব্যাটারির জীবনচক্রের ওপর নির্ভর করে। এই ব্যাটারিগুলো ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তাই সেটুকু মাথায় রেখে এগোনো ভালো। যে ওয়ারেন্টি পাওয়া যাচ্ছে, সেটির মাধ্যমে পুরো কভারেজ পাওয়া যাচ্ছে কি না– তাও দেখতে হবে। নির্ভরযোগ্য ওয়ারেন্টি ও মানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে ভলভো, রহিমআফরোজ এবং হামকোর মতো স্থানীয় নামকরা ব্র্যান্ডগুলো থেকেই কেনা যেতে পারে।
মূল্য
কোনো বৈদ্যুতিক পণ্য কেনার ক্ষেত্রে এর দরদাম অন্যতম জরুরি বিষয়। অনেকের জন্যই বাজেটের সমস্যা থাকায় ভালো মানের আইপিএস অথবা ইউপিএস কেনা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এটি বেশ বড়সড় বিনিয়োগ, তাই সম্ভাব্য ক্রেতাদের এ ক্ষেত্রে একটু বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
আইপিএসের দাম শুরু হয় ৮ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। ইউপিএসের দাম শুরু হয় ২ হাজার ৬০০ থেকে এবং এটির দামও ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। দরদাম মূলত নির্ভর করে সঠিক ফিচার এবং ক্রেতার চাহিদার ওপর।
কেউ যদি জানে, সে কী কিনতে চাইছে– তবে ঠিক পণ্যটি খুঁজে পাওয়া সহজ। যাই কেনা হোক না কেন, চাহিদা ও বাজেটের মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ সংযোগ গড়ে তোলাটা অত্যন্ত জরুরি।
অনুবাদ: অনিন্দিতা চৌধুরী
Comments