এআই-ভিআরসহ আধুনিক সব প্রযুক্তির ব্যবহারে নির্মিত ‘অ্যাভাটার-২’

এআই-ভিআরসহ আধুনিক সব প্রযুক্তির ব্যবহারে নির্মিত ‘অ্যাভাটার-২’
অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার ছবির দৃশ্য

চলতি বছর মুক্তি পাওয়া জেমস ক্যামেরুন নির্মিত ব্লকবাস্টার সিনেমা অ্যাভাটারের সিক্যুয়াল 'অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার' ব্যাপক প্রশংসা পাচ্ছে। 

ভবিষ্যতের আবহে দেখানো হয়েছে প্যানডোরা উপগ্রহ। সেই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির নিখুঁত ব্যবহারে কাল্পনিক এই উপগ্রহ হয়ে উঠেছে একেবারেই বাস্তব। 

চলুন এক নজরে দেখে নেই 'আভ্যাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার' সিনেমায়  ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলো-

পারফর্মেন্স ক্যাপচার

পারফর্মেন্স ক্যাপচারের মাধ্যমে একজন অভিনেতার অভিনয়কে ক্যামেরায় ধারন করার পরে সেটিকে ডিজিটাল ফরমেটে রূপান্তর করা হয়। পারফর্মেন্স ক্যাপচারকে মোশন ক্যাপচার অথবা মো ক্যাপও বলে অনেকেই। 

অ্যাভাটার মুভিতেও এই প্রযুক্তির ব্যবহার করে মানুষ এবং এলিয়েন উভয়ের মধ্যে এক প্রকার জীবন্ত ও বাস্তব অনুভূতি দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথমত বিশেষ স্যুট পরিধান করে অভিনেতাদের মুভমেন্ট গুলোকে সেন্সরের মাধ্যমে রেকর্ড করা হয়েছে। সেই রেকর্ড করা মুভমেন্ট গুলো পরে কম্পিউটারে ট্রান্সলেট করে ভার্চুয়াল ক্যারেক্টারদের মধ্যে যুক্ত করা হয়েছে।

এই প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণশৈলীতে এক প্রকার বাস্তবিক অনুভূতি যুক্ত করার অভিনব সুযোগ তৈরি হয়েছে নির্মাতাদের। তারা প্রথমে তাদের চাহিদা অনুযায়ী আচরণ বা মুভমেন্ট তৈরি করেন এবং পরে সেই মুভমেন্টগুলো তাদের তৈরি করা চরিত্রগুলোতে প্রয়োগ করে থাকেন।


 
ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর)

'অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার' নির্মাণ করার সময় ভার্চুয়াল রিয়ালিটির ব্যবহার হয়েছে অনেক বেশি। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হেডসেট পরে তারা প্যানডোরা উপগ্রহের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখেন। এর ফলে তারা সেই কাল্পনিক গ্রহ সম্পর্কে অনেক বেশি উপলব্ধি করতে পারে, যা খালি চোখে দেখে হয়তো সেরকমটা বোঝা যাবে না। সেই সঙ্গে যারা অভিনয় করেছেন তারাও এই ভার্চুয়াল রিয়েয়ালিটির মাধ্যমে পরিবেশ ও চরিত্রগুলোর সঙ্গে নিজেদের বেশি সম্পৃক্ত করতে পেরেছেন। যার ফলে মূল গল্প ও এর চরিত্রগুলো আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। 

থ্রিডি প্রিন্টিং

সুক্ষ্ম প্রপস ও কস্টিউম ডিজাইন করার সময় থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাভাটার-২ সিনেমায়। থ্রিডি প্রযুক্তির সাহায্যে নির্মাতা বেশ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে বিভিন্ন সুক্ষ্ম কস্টিউম তৈরি করে নেন। সনাতন পদ্ধতিতে হয়তো এসব প্রপস নির্মান করা প্রায় অসম্ভব বিষয়।

এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে কস্টিউমসে যেকোনো ধরনের পরিবর্তন কিংবা সংযোজন করতে নির্মাতাদের খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হতো না। তারা বেশ দ্রুতই যেকোনো ধরনের পরিবর্তন করতে পারতেন এই প্রযুক্তির ফলে। 

অ্যাগমেন্টেড রিয়ালিটি কিংবা (এআর)

এ আর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সিনেমায় বিভিন্ন রকমের ইফেক্ট দিতে সক্ষম হয়। যা কিনা প্যানডোরা উপগ্রহকে আরও বাস্তব দেখাতে সহায়তা করে। বিভিন্ন ডিজিটাল এলিমেন্টকে সিনেমার আবহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে বাস্তবভাবে উপস্থাপন করার জন্য এ আর ব্যবহার করা হয়। এমনকি কিছু দৃশ্য এতটাই সুক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন মনে হয় এটা বাস্তবের চেয়ে সুন্দর কোনো পৃথিবী।
 
জটিল ও বাস্তব এই এলিয়েনগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ইফেক্ট যুক্ত করতেও অ্যাভাটার সিনেমায় এ আর ব্যবহার করা হয়।
 

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির ব্যবহার এই সিনেমার প্রায় পুরোটা জুড়েই। প্রত্যেক সিনকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে বিশেষভাবে মোডিফাই করা হয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এলগোরিদমের সাহায্যে সিনেমার গল্প ও স্ক্রিপ্ট পুনরায় সাজানো হয়েছে।

গল্পের মোড় ঘোরানোর মতো পরিবর্তন করতেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিশেষ সহায়তা করেছে পুরো সিনামায়। 

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেই সঙ্গে গল্পের চরিত্রের এক্সপ্রেশনের সঙ্গে কম্পিউটারের মধ্যে সেগুলোর মডিফিকেশনেও বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে পুরো সিনেমাজুড়ে। 

সর্বোপরি 'অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার' সিনেমার সাহায্যে উপলব্দি করা যায় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রযুক্তির ব্যবহারের উৎকৃষ্ট ফলাফল। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, থ্রি-ডি পেইন্টিং ও পারফোর্মেন্স ক্যাপচার ইত্যাদি প্রযুক্তির ব্যবহার একটি কাল্পনিক জগৎকে কীভাবে অতিবাস্তব করে তুলেছে তার একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শনই হচ্ছে 'অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার' সিনেমাটি। ভবিষ্যতে প্রযুক্তির ব্যবহারের এই ধারা যে অব্যাহত থাকবে সেটিও অবধারিত।

 

অনুবাদ করেছেন আরউইন আহমেদ মিতু

 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

2h ago