ওয়াইফাই ধীরগতির সমাধানে রাউটার রিবুট করবেন যেভাবে
বাড়িতে কিংবা অফিসে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধার জন্য অনেকে রাউটারের ওপর নির্ভরশীল। তবে, মাঝেমধ্যেই ইন্টারনেটের গতি কমে যাওয়া কিংবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো ঝামেলায় পড়তে হয়। এ সব ঝামেলা এড়াতে রাউটার অফ করে অন করা, রিস্টার্ট বা রিবুট করার পরামর্শ দেন অনেকে।
তবে রাউটার রিবুটের মাধ্যমে যদি ইন্টারনেট সংযোগসহ নানা সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় তাহলে কেমন হয়?
সত্যি বলতে, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনসহ যেকোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির চেয়ে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বা সর্বক্ষণ সার্ভিস দিতে হয় রাউটারকে। শুধু তাই নয়, প্রসেসর, মেমোরি, অপারেটিং সিস্টেমের জন্য রাউটারকে ছোটখাটো একটি কম্পিউটারের সঙ্গেও তুলনা করা যায়। তাই কম্পিউটারে কোনো সমস্যা দেখা দিলে যেমন রিস্টার্ট দিলে পারফর্মেন্স ভালো পাওয়া যায়, তেমনি রাউটার রিবুট করলেও উপকার পাওয়া যেতে পারে।
ঠিক কতদিন পর পর রাউটার রিবুট করতে হবে এমন প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর নেই। এটা রাউটার ও ব্যবহার ভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে আইটি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি মাসে অন্তত দুএকবার রাউটার রিবুট করলে বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে দামি মডেলের রাউটার ব্যবহারের চেয়ে নিয়মিত রিবুটিং করার মাধ্যমে ভালো পারফর্মেন্স পাওয়া মুখ্য বিষয়। তবে, রাউটার বেশি পুরোনো হয়ে গেলে বা সিস্টেমজনিত কোনো সমস্যা থাকলে প্রতি সপ্তাহে বা প্রতিদিনই রিবুট করা যেতে পারে।
তাই ইন্টারনেট থাকা সত্ত্বেও সংযোগ না পাওয়া, এক ডিভাইসে সংযোগ থাকলেও অন্যটিতে না থাকা, ভিডিও স্ট্রিমিং করার সময় দীর্ঘক্ষণ বাফারিং হতে থাকা, পাসওয়ার্ড হ্যাক হওয়া, গতি কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার প্রাথমিক সমাধান হিসেবে রাউটার রিবুটিং করা যেতে পারে। যেসব উপায়ে সহজে রাউটার রিবুট করা যায়:
ম্যানুয়ালি রিবুট করা
ম্যানুয়ালি রাউটার রিবুট করতে ওয়াল আউটলেট থেকে পাওয়ার কর্ডটি সরিয়ে বা রাউটারের পেছনের পাওয়ার পোর্ট থেকে আনপ্লাগ করতে হবে। তারপর এক মিনিট অপেক্ষা করে আবার প্লাগ-ইন করতে হবে। তারপর রাউটারটি নেটওয়ার্কে পুনরায় সংযোগ করতে এবং সম্পূর্ণরূপে বুটআপ হওয়ার জন্য আরও দুএক মিনিট সময় লাগবে।
মনে রাখতে হবে, রাউটার রিবুটিং করার সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও কয়েক সেকেন্ডের জন্য সার্কিটগুলোর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক প্রবাহ চলতে পারে। তাই রাউটারটি যাতে সম্পূর্ণভাবে সাইকেল ডাউন হতে পারে সেজন্য ন্যূনতম ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হবে। তবে এক মিনিট অপেক্ষা করা উত্তম। নয়তো অল্প সময়ের ব্যবধানে রাউটার রিস্টার্ট করলে সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে না।
অ্যাপ ব্যবহার করা
সেঞ্চুরিলিংক রাউটারের মতো যেসব রাউটারের নিজস্ব অ্যাপ রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করেও যেকোনো সময় রাউটার রিবুট করা যায়। এ ক্ষেত্রে রাউটারের কাছাকাছি না থাকলেও কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমে রিবুটিং করা যায়। এ ছাড়া নিয়মিত রিবুটিং করার জন্য অ্যাপের মাধ্যমে যখনই রিবুট করা হয় পরবর্তী সময় সিলেক্ট করতে হয়। আর এই সময়সূচি নির্ধারণ করার ব্যবস্থা থাকায় ভুলে যাওয়ার অবকাশ থাকে না।
আউটলেট টাইমার ব্যবহার করা
নিয়মিত রাউটার রিবুট করার জন্য আরেকটি উপায় হলো প্লাগ টাইমার। এটি ক্রিসমাস লাইটের জন্য ব্যবহৃত পুরোনো, ননডিজিটাল টাইমারের মতো কম ওয়াটের একটি টাইমার। শুধু রাউটার পরিচালনা করার জন্য স্বল্প-ওয়াটের টাইমার বেশ ভালোই কাজ করতে পারে। তবে, এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য একটি থ্রি-প্রং প্লাগের গ্রাউন্ডেডের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বর্তমানে বেশিরভাগ ডিজিটাল প্লাগ টাইমার ৮৫০ থেকে ১৮০০ ওয়াটের হয়ে থাকে। যা বড় যন্ত্রপাতি পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট। যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ইন্টারনেট রাউটার ব্যবহার করার পাশাপাশি পাওয়ার স্ট্রিপ প্লাগের সুবিধার জন্য একই সময়ে আপনার রাউটার, স্মার্ট হোম হাবসহ অনেক কিছু রিবুট করা যাবে।
স্মার্ট প্লাগ ব্যবহার করা
ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগকারী স্মার্ট প্লাগও রাউটার রিবুটিং করার সুবিধা দেয়। এগুলো সাধারণত রিমোট কন্ট্রোল বা স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। যার ফলে বাড়ির যেকোনো জায়গা থেকে প্লাগটি সক্রিয় করা যায় এবং সুবিধামতো সময়সূচি নির্ধারণ করা যায়। নির্দিষ্ট দিনে রিবুট করার কথা থাকলেও যেকোনো সময় সেটি পুনঃনির্ধারণ করা যায় স্মার্ট প্লাগের মাধ্যমে।
তথ্যসূত্র: রিডারস ডাইজেস্ট, সেঞ্চুরিলিংক
গ্রন্থনা: আসরিফা সুলতানা রিয়া
Comments