উচ্চমূল্যের সেরা ৩ স্মার্টফোন

হাতে স্মার্টফোন থাকলে দৈনন্দিন অনেক কাজই এখন সহজ হয়ে যায়। স্ক্রিনে নিজের প্রিয় সিনেমা দেখা থেকে শুরু করে প্রিয় মুহূর্তগুলো ক্যামেরায় ধরে রাখা, কী নেই স্মার্টফোনে? শুধু বিনোদনই নয়, অফিসের কাজেও স্মার্টফোন আজ অবিচ্ছেদ্য অংশ। 
ছবি: সংগৃহীত

হাতে স্মার্টফোন থাকলে দৈনন্দিন অনেক কাজই এখন সহজ হয়ে যায়। স্ক্রিনে নিজের প্রিয় সিনেমা দেখা থেকে শুরু করে প্রিয় মুহূর্তগুলো ক্যামেরায় ধরে রাখা, কী নেই স্মার্টফোনে? শুধু বিনোদনই নয়, অফিসের কাজেও স্মার্টফোন আজ অবিচ্ছেদ্য অংশ। 

তাই এখন বিশ্বজুড়ে মানুষ মেতে থাকে নতুন ফোনের নতুন সব ফিচার নিয়ে। বাংলাদেশের মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। চলুন, আজ জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায় এমন ৩টি দামি স্মার্ট ফোন সম্পর্কে।

আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স

সম্প্রতি অ্যাপল তার আইফোন ১৪ সিরিজের মুক্তি দিলেও বাজারে বিদ্যমান সর্বশেষ আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স সুপার-সাইজের স্মার্টফোনটি সব দিক থেকেই আকর্ষণীয়। অ্যাপলের আইফোন ১৩ প্রো আর ১৩ প্রো ম্যাক্স ফোন দুটিতে ব্যবহার করা হয়েছে একই চিপসেট, সফটওয়্যার, ডিজাইন এবং ক্যামেরা। তবে, মূল পার্থক্য দেখা যায় ফোন দুটির স্ক্রিনের মাপে।

ছবি: সংগৃহীত

আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স-এর ৬.৭ ইঞ্চির ১২০ হার্জের ওলেড ডিসপ্লে সবদিক থেকেই দুর্দান্ত। স্ক্রিন কোয়ালিটি, রেজোলিউশন, অথবা কালার প্যালেট- এই স্ক্রিনকে টেক্কা দেওয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বী বাজারে নেই বললেই চলে। আর আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স-এর রয়েছে দ্রুত কাজ করার অসাধারণ একটি প্রসেসর। অ্যাপলের এ১৫ বায়োনিক প্রসেসরটি বাজারের দ্রুততম প্রসেসরগুলোর একটি, যা ১২০ হার্জ স্ক্রিনের সঙ্গে সম্মিলিকভাবে একটি অতুলনীয় অভিজ্ঞতা এনে দেয়।

১৩ প্রো ম্যাক্স-এর ব্যাটারির জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছে অ্যাপল। ৪ হাজার ৩৫২ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ারের ব্যাটারিটি ফুল চার্জ দেওয়ার পর স্বাভাবিক ব্যবহারে প্রায় ৩ দিন এর চার্জের প্রয়োজন হয় না।

আইফোন ১৩ প্রো এবং ১৩ প্রো ম্যাক্স-এ ব্যবহার করা হয়েছে একই ক্যামেরা। এর পিছনে রয়েছে ৩টি ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। সঙ্গে রয়েছে কম আলোয় কাজ করার দক্ষতা এবং একটি দুর্দান্ত আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরা। পাশাপাশি ৩ গুণ অপটিক্যাল জুম করার অপশন এই আইফোনের ক্যামেরাকে করেছে একটি কমপ্লিট প্যাকেজ। এখানেই শেষ নয়। এর নতুন ফিচার হিসেবে ক্লোজআপ ছবি ক্যাপচার করার জন্য আছে একটি ডেডিকেটেড ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি মোড।

তবে, দেখতে দুর্দান্ত হলেও ডিসপ্লে স্ক্রিনের বড় আকার এবং শক্ত-সমর্থ্য স্টেইনলেস স্টিলের একটি নেতিবাচক দিকও রয়েছে: এর ওজন। গত বছরের আইফোন ১২ প্রো ম্যাক্স-এর ওজন ছিল ২২৬ গ্রাম, যাকেই অনেক ভারী বলে অভিযোগ করেছিলেন। আর ১৩ প্রো ম্যাক্স-এর ওজন ২৪০ গ্রাম!

৮ গিগাবাইট র‍্যামের এই ফোনটিতে ইন্টার্নাল স্টোরেজের ২টি অপশন রয়েছে। ১২৮ গিগাবাইট ইন্টার্নাল স্টোরেজের অপশনটি বেছে নিলে দাম পড়বে প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার ৯৯৯ টাকা। আর ২৫৬ গিগাবাইট ইন্টার্নাল স্টোরেজের ফোনটি বেছে নিলে গুনতে হবে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৯৯ টাকা।

স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রা ৫জি

স্যামসাংয়ের জনপ্রিয় নোট সিরিজের ছোঁয়া পাওয়া যায় গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রা-তে। এতে রয়েছে বিল্ট-ইন স্টাইলাস এবং গত বছরের এস২১ আল্ট্রার মতোই ৩ গুণ এবং ১০ গুণ অপটিক্যাল জুম ক্যামেরা। এস২২ আল্ট্রা-র ৬.৮ ইঞ্চির ডিসপ্লে স্ক্রিনে আছে ১২০ হার্জ পর্যন্ত রিফ্রেশ রেট। এই তীক্ষ্ণ ও মসৃণ স্ক্রিনটি ১ হাজার ৭৫০ নিটস পর্যন্ত উজ্জ্বলতা প্রদান করে, যা সরাসরি সূর্যের আলোতেও স্ক্রিন দেখা সহজ করে তোলে।

ছবি: সংগৃহীত

এস২২ আল্ট্রার মূল প্রসেসর কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন এইট জেন ওয়ান, যা ২০২২ সালের জন্য শীর্ষ অ্যান্ড্রয়েড চিপ। কোনো স্লো ডাউন ছাড়াই একাধারে একাধিক অ্যাপ পরিচালনা করে এই প্রসেসর। অন্যদিকে, এস২২ আল্ট্রা-র ব্যাটারি লাইফ অতুলনীয়। একবার ফুল চার্জ দেওয়ার পর ৫ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার হাওয়ারের ব্যাটারিটি একটি পরীক্ষায় ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কার্যকর রয়েছে। যার মধ্যে ছিলো ৩ ঘণ্টার ৫জি ইন্টারনেটের ব্যবহার, ৬ দশমিক ৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ধরনের চ্যাটিং অ্যাপ ও ক্যামেরার ব্যবহার, সেই সঙ্গে কিছুটা স্ট্রিমিং এবং গেমিং। পুরো সময়েই ফোনটির স্ক্রিন এফএইচডি প্লাস রেজোলিউশনে সেট করা ছিল।

এস২২ আল্ট্রা-তে কোয়াড-ক্যামেরা সেট আপ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২টি অপটিক্যাল জুম ক্যামেরা রয়েছে। ১০৮ মেগাপিক্সেলের প্রধান ক্যামেরাটি বাজারের সেরা ক্যামেরাগুলোর একটি, যা অত্যন্ত ডিটেইল্ড ছবি তোলায় পারদর্শী। এস২২ আল্ট্রায় কয়েক ধরনের মেমোরি অপশন রয়েছে। ৮, ১২ অথবা ১৬ গিগাবাইট র‍্যামের সঙ্গে আছে ১২৮ ও ২৫৬ অথবা ৫১২ গিগাবাইট অথবা ১ টেরাবাইট স্টোরেজের অপশন। এর মধ্যে সর্বাধিক বিক্রিত ১২ গিগাবাইট র‍্যাম ও ২৫৬ গিগবাইট স্টোরেজের ইউনিটের দাম পড়বে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯৯৯ টাকা।

ওয়ানপ্লাস ৯ প্রো

ওয়ান প্লাস ৯ প্রো বর্তমানে বাজারের সেরা ফোনগুলোর একটি। ৬.৭-ইঞ্চির ডিসপ্লে স্ক্রিনটিতে রয়েছে গভীর কালো রঙের কিউএইচডি প্লাস অ্যামোলেড প্যানেল, সেই সঙ্গে ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট।

ওয়ানপ্লাস ৯ প্রো-এর ক্যামেরা পারফরম্যান্স ব্যবহারকারীদের কাছে খুবই সন্তোষজনক। এই কোয়াড ক্যামেরা ফোনটির ৪৮ মেগাপিক্সেলের প্রধান ক্যামেরাটি ছবিতে প্রাকৃতিক রঙ নিয়ে আসলেও নাইটস্কেপ নিয়ে কিছুটা অভিযোগ রয়েছে। তবে, ৫০ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রা ওয়াইড ক্যামেরাটি নিয়ে অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই।

ছবি: সংগৃহীত

ওয়ানপ্লাস ৯ প্রো-তে রয়েছে একটি স্ন্যাপড্রাগন ৮৮৮ প্রসেসর। বর্তমান বাজারের সেরা এই সিস্টেম-অন-চিপের সঙ্গে ওয়ান প্লাসের ৮ অথবা ১২ গিগাবাইট র‍্যামের মিশ্রণ এক অসাধারণ শক্তিশালী সমন্বয় তৈরি করে। সেই সঙ্গে ৪ হাজার ৫০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার ব্যাটারির এই ফোনটি ১২০ হার্জ মোডে ১০ ঘণ্টা ৪০ মিনিট কার্যকর থাকে। ৬৫ ওয়াট চার্জার দিয়ে ফোনটি ১৫ মিনিটের মধ্যে ০ থেকে ৫০  শতাংশ পর্যন্ত এবং ৩০ মিনিটে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ হয়।

এই ফোনটি কিনতে গেলে ২টি ভেরিয়েন্টের মধ্য থেকে পছন্দের অপশনটি বেছে নিতে হবে। ৮ গিগাবাইট র‍্যাম ও ১২৮ গিগাবাইট রোম-এর অপশনটি কিনতে গেলে খরচ করতে হবে ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যদিকে, ১২ গিগাবাইট র‍্যাম ও ২৫৬ গিগাবাইট স্টোরেজ ভার্সনটির দাম পড়বে ৬০ হাজার টাকার মতো।
 
 
তথ্যসূত্র: ফোর্বস, টমসগাইড, দ্য গার্ডিয়ান
 

Comments