বিদায় স্কাইপ

বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের কম্পিউটার ও মোবাইলে এক সময়ের অন্যতম পরিচিত নাম ছিল 'স্কাইপ'। বন্ধু, পরিবার কিংবা অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলা, ফাইল পাঠানো কিংবা ভিডিও কলে চোখের দেখা – সবকিছুতেই স্কাইপ ছিল অগ্রগামী।

৫ মে ২০২৫-এ আনুষ্ঠানিকভাবে স্কাইপের সার্ভার বন্ধ করে দিলো মাইক্রোসফট। একবিংশ শতাব্দীর যোগাযোগ প্রযুক্তিতে যুগান্তকারী অবদান রাখা এই প্ল্যাটফর্মের বিদায়ে একটি প্রযুক্তিগত যুগের অবসান ঘটল।

শুরুর গল্প: স্কাইপের জন্ম

স্কাইপের যাত্রা শুরু হয় ২০০৩ সালে। সুইডেন-এস্তোনিয়ার কয়েকজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী এই প্রকল্পের পেছনে কাজ করেন। এক বছর পর, ২০০৪ সালে এটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে। সে সময় ইন্টারনেটের গতি কম হলেও স্কাইপ ভয়েস কল ও পরে ভিডিও কলের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটায়।

২০০৫ সালে স্কাইপকে কিনে নেয় ইবে (eBay)। তবে ২০১১ সালে মাইক্রোসফট এটাকে ৮.৫ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়। এটি ছিল মাইক্রোসফটের জন্য একটি বড় বিনিয়োগ। সে সময় স্কাইপকে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে সংযুক্ত করা হয়।

প্রযুক্তিগত অবদান

স্কাইপই প্রথম যে অ্যাপ্লিকেশন যা বিশ্বব্যাপী ফ্রি ভয়েস কল ও ভিডিও কলের সুযোগ দেয়। পিয়ার-টু-পিয়ার (P2P) প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্দান্ত অডিও-ভিডিও মান নিশ্চিত করেছিল স্কাইপ। ফাইল শেয়ারিং, স্ক্রিন শেয়ার, এবং গ্রুপ ভিডিও কলের মতো সেবাকে সহজ করে তোলে এটি। 

ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোবাইল এবং ল্যান্ডলাইন নম্বরে কল করার সুবিধা এনে দেয় স্কাইপ, যা ছিল একটি বৈপ্লবিক সেবা।

এই অ্যাপটি শুধু পারিবারিক কথোপকথনেই নয়, অফিসিয়াল মিটিং, অনলাইন ক্লাস, দূরবর্তী চাকরি ইত্যাদিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

পতনের কারণ

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ব্যর্থ হয় স্কাইপ। জুম, গুগল মিট, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেইসটাইম, ডিসকর্ডের মতো প্রতিযোগীদের সঙ্গে তুলনায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে থাকে স্কাইপ। প্রতিটি অ্যাপ স্ক্যাইপের তুলনায় আরও উন্নত ইউজার ইন্টারফেস ও দ্রুত সেবা দিতে সক্ষম হয়।

কর্পোরেট সেবার ক্ষেত্রে টিমসকে অগ্রাধিকার দেয় মাইক্রোসফট। যার ফলে পিছিয়ে পড়ে স্কাইপ।

স্কাইপের মূল প্রযুক্তি ছিল পিয়ার-টু-পিয়ার ভিত্তিক, যা পরবর্তীতে নিরাপত্তা ও স্কেলিং সমস্যার মুখে পড়ে। সেই সঙ্গে মোবাইল অ্যাপ সংস্করণে জটিলতা ও আপডেট আসতে বিলম্বও ইউজারদের বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে।

স্মৃতিতে স্কাইপ

বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ স্কাইপের মাধ্যমে প্রথমবার ভিডিও কলে মুখোমুখি হয়েছিল প্রিয়জনের।

দূরদেশে থাকা প্রবাসীদের কাছে এটি ছিল আবেগের নাম।

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে এটি ছিল গ্রুপ স্টাডির একটি বড় মাধ্যম।

করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে স্কাইপ আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই জুমের জনপ্রিয়তার কাছে হার মানে এই ঐতিহ্যবাহী অ্যাপ।

ভবিষ্যতের বার্তা

মাইক্রোসফট ঘোষণা দিয়েছে, ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে স্কাইপ ব্যবহারকারীরা তাদের তথ্য ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এরপর অ্যাকাউন্ট এবং সংরক্ষিত তথ্য মুছে ফেলা হবে।

আজকের প্রজন্ম হয়তো স্কাইপের নামও শুনবে না। কয়েক বছর পর পুরনো ইউজাররাও এর নাম ভুলতে শুরু করবেন।

কিন্তু যারা ২০০০ এর দশকে ইন্টারনেটের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে, তাদের কাছে এটি শুধুই একটি অ্যাপ নয়, বরং এক টুকরো নস্টালজিয়া।

বিদায় স্কাইপ—তুমি একসময় পৃথিবীকে কাছে এনেছিলে।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago