আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

ক্লাসেন-ইয়ানসেনের ধ্বংসযজ্ঞে চুরমার ইংল্যান্ডের বোলিং

রানের পাহাড়ে চড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপে তো বটেই, ওয়ানডে ক্রিকেটেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো দলের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড এটি।

ক্লাসেন-ইয়ানসেনের ধ্বংসযজ্ঞে চুরমার ইংল্যান্ডের বোলিং

ছবি: এএফপি

মুম্বাইয়ের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড ম্যাচ। আর তা ভক্তদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল বিশ্বকাপের আগে থেকেই। সেটা কেন? প্রথম ইনিংসেই উত্তর মিলল। রিজা হেন্ড্রিকস ও রাসি ফন ডার ডুসেনের ফিফটির পর এরপর হেইনরিখ ক্লাসেন ও মার্কো ইয়ানসেন ষষ্ঠ উইকেটে ৭৭ বলে ১৫১ রানের আগ্রাসী জুটি গড়লেন। তাদের ধ্বংসযজ্ঞে প্রোটিয়ারা ৭ উইকেটে ৩৯৯ রানের পুঁজি গড়েই তবে থামল।

ক্লাসেন মাত্র ৬১ বলে তুলে নেন বিস্ফোরক সেঞ্চুরি। কম যাননি ইয়ানসেনও। এতে রানের পাহাড়ে চড়েছে গত ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপে তো বটেই, ওয়ানডে ক্রিকেটেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড এখন তাদের। প্রোটিয়ারা পেছনে ফেলেছে ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডের করা ৫ উইকেটে ৩৯৮ রানকে।

শনিবার টস জিতে বোলিং নিয়ে হাই-স্কোরিং গ্রাউন্ড মুম্বাইয়ে মনের মতো শুরু পেয়ে যায় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় বলেই ভয়ঙ্কর কুইন্টন ডি ককের বিদায় ঘটে যায়। রিস টপলি ও ডেভিড উইলি সুইং পেয়ে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। ৪ রানে প্রথম উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকা খোলসে আটকে যায়। ৬ ওভার শেষে তাদের রান থাকে ১৮।

নিয়মিত অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার অসুস্থতায় ওপেনিংয়ে সুযোগ মিলে রিজা হেন্ড্রিকসের। শুরুতে হেন্ড্রিকস বেশ অস্বস্তিতে থাকলেও অন্যপাশে রাসি ফন ডার ডুসেন স্বচ্ছন্দ্যেই খেলে যান।

সপ্তম ওভারের পাঁচটি বল করেই টপলিকে মাঠ থেকে বের হয়ে যেতে হয় আঙুলে চোট পেয়ে। এরপরেই হেন্ড্রিকস ও ডুসেন দুজনেই সমানতালে চড়াও হন ইংলিশ বোলারদের উপর। মেজাজে ভিন্নতা এনে প্রথম পাওয়ার প্লের ১০ ওভারেই ৫৯ রান আনে দক্ষিণ আফ্রিকা, ১৬তম ওভারেই পেরিয়ে যায় একশ।

ডুসেন ৪৯ বলেই পেয়ে যান ফিফটি, এরপর হেন্ড্রিকস তার ফিফটি পূর্ণ করে ফেলেন ৪৮ বলে। দুজনেই যদিও ফিফটিকে বড় ইনিংসে রূপান্তর করার আগেই আউট হয়ে যান। ১১৬ বলে ১২১ রানের জুটির পর ডুসেন আউট হন ৮ চারে ৬১ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলে। হেন্ড্রিকস ফিরে যান যখন ৯ চার ও ৩ ছয়ে ৭৫ বলে ৮৫ করে।

দক্ষিণ আফ্রিকা তৃতীয় উইকেট হারিয়ে ফেলে ১৬৪ রানে। দুজনকেই ফেরান লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। সুইপে ক্যাচ দেন ডুসেন, ইনসাইড এজে বোল্ড হন হেন্ড্রিকস।

ক্লাসেন ও বাভুমার জায়গায় নেতৃত্ব পাওয়া এইডেন মার্করাম মিলে প্রোটিয়াদের দুইশ পার করান ৩১তম ওভারেই। তাদের ব্যাটে ঝড়ের আভাস মিলতে শুরু করেছিল। কিন্তু ৪২ বলে ৪৪ রানেই থামতে হয় মার্করামকে। মাঠে ফেরা টপলি মার্করামের পর বিপজ্জনক ডেভিড মিলারকেও টিকতে না দিলে প্রোটিয়ারা কিছুটা ধাক্কা খায়। কিন্তু তখনও ক্লাসেনের কারিশমা যে বাকি!

শেষ দশ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবেশ করে ২৫৬ রান নিয়ে। শুরু হয় 'ক্লাসেন শো'। একের পর এক বাউন্ডারি বের করতে থাকেন তিনি। মার্ক উড যত জোরে বল করছিলেন, ক্লাসেন আরও জোরে তা বাউন্ডারিতে পাঠাচ্ছিলেন। শক্তির সঙ্গে বুদ্ধি মিলিয়ে ইংল্যান্ডের বোলারদের শাসন করতে থাকেন তিনি।

৪০ বলে ফিফটি পূর্ণ করার পর ৬১ বলেই শতক হাঁকিয়ে ফেলেন ক্লাসেন। দ্বিতীয় ফিফটি করতে তার লাগে মাত্র ২১ বল! মুম্বাইয়ের অসহ্য গরমে ধুঁকছিলেন, লড়তে হচ্ছিল নিজের শরীরের সঙ্গেও। তারপরও ১২ চার ও ৪ ছয়ের বিধ্বংসী ৬৭ বলে ১০৯ রানের ইনিংস খেলে যখন ক্লাসেন ফেরেন, দল তখন দাঁড়িয়ে রানের পাহাড়ের চূড়ায়।

ইয়ানসেন শুরুতে ক্লাসেনকে যথার্থ সঙ্গ দেন দেখেশুনে খেলে। পরে তিনিও  যোগ দেন তাণ্ডবে। ৩৫ বলেই হাঁকান ফিফটি। ৩ চারের সঙ্গে মারেন ৬টি ছক্কা! ৪২ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকে যখন ইয়ানসেন মাঠ ছাড়েন, দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরবোর্ডে জ্বলজ্বল করতে থাকে ৩৯৯ রান।

আগের তিন ম্যাচের দুটিতে হেরে বেকায়দায় রয়েছে ইংল্যান্ড। সবশেষটি ছিল তুলনামূলক দুর্বল আফগানিস্তানের বিপক্ষে। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের কোণঠাসা অবস্থা আরও ঘনীভূত হওয়ার পরিস্থিতি এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে রেকর্ডও গড়তে হবে জস বাটলারের দলকে। কদিন আগেই শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৩৪৫ রানের লক্ষ্য সফলভাবে ছুঁয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়ার কীর্তি গড়ে পাকিস্তান।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

8h ago