কাতারে মেসির ১৫ রেকর্ড
স্বপ্নের বিশ্বকাপটা শেষ পর্যন্ত লিওনেল মেসির হাতে উঠল। জাদুকরী পারফরম্যান্সে এলো পরম আরাধ্য শিরোপাটি। আসরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমান তালে খেলেই অমরত্বের পথে এগিয়ে গেলেন মেসি। আর স্মরণীয় যাত্রায় অনেক অনেক রেকর্ড গড়লেন এই জীবন্ত কিংবদন্তি। বলা চলে, মেসিময় একটি আসর দেখল ফুটবল বিশ্ব।
কাতারে এবার অনেক রেকর্ড গড়বেন তা প্রত্যাশিতই ছিল। স্কোয়াডে সুযোগ মেলার সঙ্গে সঙ্গেই গড়েন এক রেকর্ড। এরপর সে ধারা চলতে থাকে শেষ পর্যন্ত। লুসাইল স্টেডিয়ামে সোনালী ট্রফিতে চুমু খাওয়ার আগ পর্যন্ত আর থাকেননি। এ পথে ১৫টি রেকর্ড হয়ে গেছে তার। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কী সেই রেকর্ডগুলো।
১) বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা নিশ্চিত হওয়াতেই একটি রেকর্ড নিশ্চিত হয় মেসির। ইতালির জিয়ানলুইজি বুফন, মেক্সিকোর আন্তনিও কারবাহাল, জার্মানির লোথার ম্যাথিউজ ও মেক্সিকোর রাফায়েল মার্কেজের সঙ্গে সমান ৫টি করে বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ডে ভাগ বসান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তবে এবার আরও তিনজন নিজেদের পঞ্চম বিশ্বকাপে খেলেছেন। পর্তুগালের ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, মেক্সিকোর আন্দ্রেয়াস গার্দাদো ও গিলার্মো ওচোয়া। ফলে সবমিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়ালো আটে।
২) সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ খেলায় মেসির পাশে তো রয়েছেন অনেকেই। একদিক থেকে পেছনে ফেলেছেন এ আর্জেন্টাইন। সবচেয়ে কম বয়সে পাঁচটি বিশ্বকাপ অংশ নিয়েছেন সাবেক বার্সা তারকা। ৩৫ বছর বয়সেই এ রেকর্ডটি গড়েছেন। এতো দিন পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলা সর্ব কনিষ্ঠ খেলোয়াড় ছিলেন বুফন (৩৬ বছর)। বিশ্বকাপ যদি নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ জুন-জুলাইয়ে হতো, তাহলে বয়সটা আরও ছয় মাস কম থাকতো মেসির। সেক্ষেত্রে ৩৪ বছর বয়সেই রেকর্ডটা গড়তে পারতেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
৩) বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডটিও গড়েছেন মেসি। ফাইনাল ম্যাচে মাঠে নেমে মোট ২৬টি ম্যাচ খেললেন বিশ্ব আসরে। এর আগে জার্মানির লোথার ম্যাথিউজ সর্বোচ্চ ২৫টি ম্যাচ খেলেছিলেন বিশ্বকাপে।
৪) সময়ের হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় মাঠে থেকেছেন মেসি। বিশ্বমঞ্চে সবমিলিয়ে ২৩১৪ মিনিট খেলেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। এর আগে ইতালিয়ান কিংবদন্তি পাওলো মালদিনি চারটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে খেলেছিলেন ২২১৭ মিনিট।
৫) অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডটিও এখন মেসির। ১৯টি ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এর আগে রাফা মার্কেজ সর্বোচ্চ ১৭টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মেক্সিকোকে।
৬) বিশ্বকাপে এবার ৭টি গোল করেছেন মেসি। সবমিলিয়ে ১৩টি। এ পথে নিজ দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে যান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। বিশ্বকাপে বাতিগোল করেছিলেন ১০টি গোল।
৭) বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোলে সরাসরি অবদান রেখেছেন মেসি। মোট ২১টি গোলে (১৩ গোল, ৮ অ্যাসিস্ট) অবদান তার। এতদিন মোট ১৯ গোলে অবদান রেখে শীর্ষে ছিলেন জার্মানির মিরাস্লাভ ক্লোসা ও ব্রাজিলের রোনালদো।
৮) একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের পাঁচটি ভিন্ন আসরে অ্যাসিস্ট করেছেন মেসি। আরেক আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনা, ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে, পোল্যান্ডের জেগোস লাতো ও ইংল্যান্ডের ডেভিড বেকহ্যামের তিন আসরে অ্যাসিস্ট করেছেন।
৯) বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করার রেকর্ডটি এখন স্বদেশী কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন মেসি। দুইজনেরই অ্যাসিস্ট সংখ্যা ৮টি।
১০) আর নকআউট পর্বে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করার রেকর্ডটি ভাগ করেছেন এখন কিংবদন্তি পেলের সঙ্গে। নকআউট পর্বে দুইজনই ৬টি করে অ্যাসিস্ট করেছেন।
১১) বিশ্বকাপে মেসির প্রথম ও সবশেষ গোলের মাঝে ব্যবধান ১৬ বছর ১৮৪ দিন। যা বিশ্বকাপে সবচেয়ে দীর্ঘ। তার পরেই আছেন পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। তার দুই গোলের মাঝে ব্যবধান ১৬ বছর ১৬০ দিন।
১২) বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১১ বার ম্যাচ সেরা হয়েছেন মেসি। কাতারেই এবার পাঁচ বার ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন। যা এক আসরের রেকর্ডও বটে।
১৩) বিশ্বকাপে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার-ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল এবং ফাইনালে গোল দেওয়ার কীর্তি গড়েছেন মেসি।
১৪) প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে তিনটি ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্টের ডাবল মেসির। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চার ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্ট এর অনন্য অর্জনও তার।
১৫) ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দুটি গোল্ডেন বল জিতেছেন মেসি। ২০১৪ সালে রানার্সআপ হলেও গোল্ডেন বল পেয়েছিলেন তিনি। এর আগে কেউই দুইবার পাননি।
Comments