‘আপনি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে ছোট করতে পারেন না’
মহানায়কের এমন বিদায় কি চেয়েছিল বিশ্বকাপ? মরক্কোর উল্লাসের ভিড়ে দ্রুত মাঠ ছাড়লেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। শক্তপোক্ত মানসিকতার আড়ালে কান্না লুকাতে চাইলেন যেন। মাথা নিচু করে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলেন পর্তুগিজ ফুটবলের মহারাজা। বিশ্বকাপে এসেছিলেন বড় স্বপ্ন নিয়ে কিন্তু নকআউট পর্বে এসে ভালো করে মাঠে থাকাই হলো না তার।
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডেই রোনালদোকে বেঞ্চে বসিয়ে গানসালো রামোসকে নামান ফার্নান্দো সান্তোস। রামোস নেমেই করে বসেন হ্যাটট্রিক। ৬ গোল দিয়ে শেষ আটে পা রাখে পর্তুগাল। রোনালদো সেদিন শেষ কুড়ি মিনিট নেমেছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। অনেকেই শেষ দেখে ফেলেন রোনালদোর।
মরক্কোর বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেও একই ছবি। রোনালদোকে বেঞ্চে বসিয়ে একাদশ নামান সান্তোস। এবার আর আগের মতো ঝলক দেখাতে পারেননি কেউ। সেই রামোসও থেকে যান আড়ষ্ট। গোল দেওয়ার বদলে প্রথমার্ধে গোল হজম করে পিছিয়ে যায় পর্তুগাল। ডিফেন্স ও গোলরক্ষকের ভুল অসহায়ভাবে বেঞ্চে দেখেন রোনালদো।
গোল শোধেও ধার রাখতে পারেনি তারা। বিরতির পর পরই রোনালদোকে নামাননি সান্তোস। কিছুটা সময় পর নাভাসের বদলি হিসেবে নামেন সিআরসেভেন। সতীর্থ পেপে তাকে পরিয়ে দেন অধিনায়কের আর্মব্যান্ড। কিন্তু ঠিক যেন অথরিটি ছিল না রোনালদোর।
গোল শোধে মরিয়া পর্তুগিজ অধিনায়ক বলের যোগান পাচ্ছিলেন না ঠিকমতো। অনেক নিচে নেমেও চেষ্টা করেছেন, লাভ হয়নি। বক্সের ভেতর দারুণ এক পাস দিয়েছিলে জোয়াও ফেলিক্সকে, ফেলিক্স সেটা গোলে পরিণত করতে পারেননি। খেলার শেষ দিকে বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক মারার সুযোগ পাননি। সেই ফ্রি কিক মারেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ। কিন্তু তা ছিল অতি দুর্বল, নীরবে দাঁড়িয়ে দেখতে হয় রোনালদোকে। শেষ দিকে তার নেওয়া শট মরক্কোর গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দিলে আর আশা থাকেনি বাকি।
রোনালদোর এমন বিদায়ের পর ফের সরব হয়েছেন তার আর্জেন্টাইন বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগুয়েজ। ইন্সটাগ্রামে পর্তুগাল কোচের দিকে ইঙ্গিত করে পোস্ট দিয়েছেন তিনি, 'আজ তোমার বন্ধু ও কোচ ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে বন্ধুর জন্য তোমার অনেক ভক্তি, অনেক শ্রদ্ধা ছিল। একই বন্ধু পরে তোমাকে আবার মাঠে নামালেন, কিন্তু তখন সব বদলে গেছে, অনেক দেরি হয়ে গেছে। 'আপনি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়, সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রকে ছোট করতে পারেন না।'
এই বিশ্বকাপে শুরুটা দারুণ ছিল রোনালদোর। ঘানার বিপক্ষে গোল করে প্রথম ফুটবলার হিসেবে পাঁচ বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড গড়েন তিনি। এরপর থেকেই নিভে যেতে থাকে যেন তার আভা। বয়সের ছাপ পড়ে পারফরম্যান্সে। ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগও পাননি। একাদশেই হারিয়ে ফেলেন জায়গা।
Comments