রোনালদোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়নি, জানালেন পর্তুগাল কোচ
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে সমস্ত ক্যামেরার নজর মাঠের বদলে পর্তুগালের ডাগআউটে। ভীষণ অচেনা এক দৃশ্য থমকে দিয়েছে সবাইকে, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো যে সেখানে অ্যাপ্রোন পরে বিমর্ষ হয়ে বসে আছেন। পর্তুগালের প্রথম একাদশে ঠাঁই হয়নি এই মহা তারকার। ম্যাচটি ৬-১ গোলে জিতে পর্তুগাল কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার পরও রেশ থাকল এই ঘটনার। পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো সান্তোসকে দিতে হলো জবাব।
পর্তুগাল তো বটেই, আন্তর্জাতিক ফুটবলেই সর্বোচ্চ গোলদাতার নাম রোনালদো। পাঁচবার ব্যালড ডি'অর জেতা এই তারকা নিজে দেশের অনেক সাফল্যেরও নায়ক। প্রথম ফুটবলার হিসেবে পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল করারও রেকর্ড গড়েছেন এবার।
ফিট থাকলে ১৮ বছর ধরে পর্তুগালের প্রতিটি অভিযানে নিশ্চিত নাম ছিলেন তিনি। শেষবার পারফরম্যান্সের কারণে রোনালদোকে বেঞ্চে বসে থাকতে হয়েছিল ৬৭৪৭ দিন আগে। ২০০৪ সালে তার ক্যারিয়ারের একদম শুরুর সময়টায়!
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে রোনালদোকে প্রথম একাদশে না রাখার আভাস সান্তোস আগেই দিয়েছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়ার পর তাকে তুলে নেন কোচ। মাঝপথে তাকে তুলে নেওয়ায় প্রতিক্রিয়া দেখান এই তারকা। যা স্বাভাবিকভাবে নেননি সান্তোস।
পর্তুগিজ গণমাধ্যম এ বোলার একটি জরিপেও রোনালদোকে শুরু একাদশে না রাখার পক্ষে মত আসে ৭০ শতাংশ।
রোনালদোর জায়গায় নেমে বেনফিকার তরুণ ফরোয়ার্ড গানসালো রামোস রীতিমতো ঝড় বইয়ে দিয়েছেন। এবার বিশ্বকাপে করে ফেলেছেন প্রথম হ্যাটট্রিক। আরেকটি গোলেও রেখেছেন অ্যাসিষ্ট করে অবদান। রামোসকে তুলে ৭৪ মিনিটে রোনালদোকে নামান সান্তোস। অফসাইড থেকে তিনি একবার জালে ঢুকালেও সেভাবে আর ছাপ রাখার সুযোগ পাননি এই ম্যাচে।
তবে কি রোনালদো অধ্যায়ের এখানেই সমাপ্তি? শুরুর একাদশে আর কখনই জায়গা মিলছে না তার? সান্তোস অবশ্য এমন পারফরম্যান্সের পরও মরক্কোর বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে রামোসের খেলা নিশ্চিত করেননি। 'এটা এখনো চূড়ান্ত করার বিষয় হয়নি।
৬৮ বছর বয়েসী এই কোচ সংবাদ সম্মেলনে জোর গলায় জানান, দেশের ইতিহাসের সেরা তারকার সঙ্গে তার নেই কোন বিবাদ, 'কালও আমি যেটা বলেছি রোনালদোর সঙ্গে আমার কোন সমস্যা নেই।'
'তার (রোনালদো) সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক আছে, সব সময়ই ছিল। স্পোর্টিং লিসবনে সে যখন খুব তরুণ তখন থেকেই তাকে আমি চিনি। এরপরে আমি জাতীয় দল উন্নতির কাজ করেছি।'
'আমাদের সম্পর্কটা এরপর গাঢ় হয়েছে। আমরা অনেক বছর ধরে বন্ধু। এটা সম্পর্কে ক্ষতি করবে না।'
এই ম্যাচে রোনালদোকে কেন শুরুর একাদশে রাখা হয়নি, তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান সান্তোস। পুরো ব্যাপারটা যে রোনালদোই নেতৃত্বের মুন্সিয়ানায় মেনে নিয়েছেন তাও বলেছেন পর্তুগিজ কোচ, 'আমি এরমধ্যে ব্যাখ্যা দিয়েছে যে সব সমাধান হয়েছে। আমি আগেও বলেছি, আবার বললাম। এটা এমন কিছু যার সমাধান হয়ে গেছে।'
'সে প্রবল ইচ্ছা নিয়ে এসেছে। সে অধিনায়ক হিসেবে দারুণ উদাহরণ তৈরি করেছে।'
ফরোয়ার্ড লাইনে একই পজিশনে রামোস, রোনালদো আর আন্দ্রে সিলভার বিকল্প আছে কোচের কাছে। প্রতিটি ম্যাচ ও প্রতিপক্ষের কথা ভেবেই একাদশ সাজাতে চান তিনি, 'অবশ্যই পর্যবেক্ষণ করার আমার একটা পথ আছে। যা বরাবর ছিল। এই পজিশনে যারা আছে আমার দলে প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের।'
'আন্দ্রে (সিলভা) অনেকটা এগিয়ে গিয়ে খেলে, রোনালদো এক জায়গায় থিতু থাকে, সে নির্দিষ্ট এলাকায় খেলে। গানসালো (রামোস) অনেকটা ডায়নামিক।'
'আমার তিনজন খেলোয়াড়ের উপরই পুরো আস্থা আছে। প্রতিটি ম্যাচে কৌশল বুঝে তাদের আমি কাজে লাগাব। সব সময় আমি আমার ক্যারিয়ারে এটা করে এসেছি। '
মঙ্গলবার পর্তুগাল নকআউট পর্বে নিজেদের ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় জয় পায়। এটা ছিল রীতিমতো এক বিধ্বংসী পারফরম্যান্স। উড়ন্ত জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোকে পাচ্ছে প্রথম বিশ্বকাপ জেতার আশায় ছুটতে থাকা দলটি। সান্তোস চান এই যাত্রায় খেলোয়াড়দের সতেজ রেখে সেরাটা বের করে আনতে, 'তাদেরকে (খেলোয়াড়দের) যেটা বলছিলাম, আমরা যখন ফুরফুরে থাকি তখন আমরা সব কিছু ছাড়িয়ে যেতে পারি। খেলোয়াড়রা দুর্দান্ত খেলেছে।'
Comments