ব্রাজিলকে হারিয়েও বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ক্যামেরুনের
সমীকরণটা ততোক্ষণে জেনে গিয়েছিলেন ভিনসেন্ট আবুবকর। ব্রাজিলকে হারাতে পারলেও আর কাজ হচ্ছে না। কারণ একই সময়ে অপর ম্যাচে জয়ের পথে তখন সুইজারল্যান্ড। কিন্তু তাতে কী, প্রতিপক্ষ ব্রাজিল বলে কথা। তাদের বিপক্ষে গোল করতে পারলে উদযাপনটা বুনো না হয়ে পারে? জার্সি খুলেই 'নম্বর ১০' দেখিয়ে উদযাপন করলেন। তাতে পেতে হলো লাল কার্ড। কিন্তু তারপরও হাসিমুখেই মাঠ ছাড়েন তিনি। কারণ ততোক্ষণে ইতিহাস লিখে ফেলেছেন এ ফরোয়ার্ড।
দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপের 'জি' গ্রুপের ম্যাচে ব্রাজিলকে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারায় ক্যামেরুন। প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে পাঁচবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নদের হারায় দলটি। কিন্তু তারপরও আসর থেকে বিদায় নিতে হলো ক্যামেরুনকে।
ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষে তখন চলছিল যোগ করা সময়। যেভাবে ফরোয়ার্ডটা মিস করছিলেন আর গোলরক্ষকরা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন তাতে মনে হয়েছিল আরও একটি গোলশূন্য ড্র দেখতে যাচ্ছে বিশ্ব। কিন্তু হঠাৎ এরমধ্যে পাল্টা আক্রমণ ব্রাজিলিয়ান শিবির স্তব্ধ করে দেন আবুবকর। এনগোম এমবিকেলির অসাধারণ ক্রসে দুর্দান্ত এক হেড। বল খুঁজে নেয় জাল। উল্লাসে মাতে ক্যামেরুন। তাতে টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দলকে তো হারানো গেল ঠিকই, কিন্তু নকআউট পর্বের জায়গাটা মিলল না তাদের।
অথচ এবার এই ম্যাচের আগে ব্রাজিলের গোলবারে একটি শট লক্ষ্যে রাখতে পারেনি আর কোনো দল। এদিন ক্যামেরুন রাখে ৩টি। সবমিলিয়ে ৭টি শট নেয় তারা। অন্যদিকে ৬৫ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে ২১টি শট নেয় ব্রাজিল, যার ৭টি ছিল লক্ষ্যে। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের একের পর এক ব্যর্থতায় গোল মিলেনি তাদের।
যদিও এদিন মূল একাদশের ৯ জনকেই বসিয়ে রেখেছিল ব্রাজিল। যে দুইজন ছিলেন আগের ম্যাচে, তারাও খেলেননি প্রথম ম্যাচে। নেইমার ও দানিলোর ইনজুরির কারণেই গত ম্যাচে ছিলেন। সেক্ষেত্রে পুরো ১১ জনকেই বদল করা হয়েছে বললেও ভুল হবে না। এমনকি দ্বিতীয়ার্ধে যে বদলি খেলোয়াড়দের মাঠে নামান তিতে, তাদের তিনজন আজই প্রথম নামেন বিশ্বকাপের মঞ্চে।
তবে হারলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নকআউট পর্বে জায়গা করে নিয়েছে ব্রাজিল। দিনের অপর ম্যাচে সার্বিয়াকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে তাদের সঙ্গী হয়েছে সুইজারল্যান্ড। দুই দলেরই পয়েন্ট সমান ৬। তবে এক গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় গ্রুপ সেরা হয় ব্রাজিলিয়ানরা। ক্যামেরুনের সংগ্রহ ৪ পয়েন্ট। সার্বিয়ার পয়েন্ট ১। আগামী সোমবার রাতে শেষ আটে ওঠার ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল।
তবে ম্যাচে এদিন গোল করার মতো অনেক সুযোগ পায় ব্রাজিল। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে ফ্রেদ ঠিকভাবে পা ছোঁয়াতে পারলে এগিয়ে যেতে পারতো তারা। ১৪তম মিনিটে তো সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন মার্তেনেল্লি। একেবারে অরক্ষিত অবস্থায় থেকে দারুণ হেড নিয়েছিলেন। তবে দারুণ দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে জাল অক্ষত রাখেন ক্যামেরুন গোলরক্ষক ডেভিস এপাসি।
২০তম মিনিটে গোল করার মতো প্রথম সুযোগ পায় ক্যামেরুন। এরিক ম্যাক্সিম চুপো-মোটিংয়ের ক্রস থেকে অসাধারণ হেড নিয়েছিলেন ভিনসেন্ট আবুবকর। কিন্তু দুর্দান্ত দক্ষতায় ফিস্ট করে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক এদেরসন। দুই মিনিট পর ফ্রেদের ভলি ক্যামেরুনের এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে উপরে উঠে না গেলে বিপদ হতে পারতো তারা।
৩৮তম মিনিটে আন্তনির কোণাকোণি শটে জোর না থাকায় বিপদ হয়নি ক্যামেরুনের। যোগ করা সময়ের প্রথম তিন মিনিটেই গোল করার সুবর্ণ সুযোগ পায় দুই দলই। প্রথম মিনিটে দুই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে মার্তেনেল্লির বুলেট গতির শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান গোলরক্ষক এপাসি। সেই কর্নার থেকে রদ্রিগোর কোণাকোণি শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটে এমবুয়েমোর হেড অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ঠেকান ব্রাজিল গোলরক্ষক এদেরসন।
৫১তম মিনিটে আবুবকরের শট একেবারে গোলবার ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দুই মিনিট পর ছোট ডি-বক্সে জটলায় বিপদ হতে হতে হয়নি ক্যামেরুনের। এর তিন মিনিট পর দুর্দান্ত ক্যামেরুন গোলরক্ষক। মার্তেনেল্লির নেওয়া আরও একটি শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান। ৫৭তম মিনিটে এদের মিলিতাওয়ের শট ঠিকভাবে ধরতে না পেরে প্রায় গোল খেয়ে বসেছিল দলটি। তবে কোনো মতে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন এপাসি।
৫৮তম মিনিটে আন্তনির কোণাকোণি শট ফের কর্নারের বিনিময়ে ক্যামেরুন গোলরক্ষক। সেই কর্নার থেকে ব্রেমারের হেড গোলের দিকেই যাচ্ছিল। গোলমুখ থেকে এক খেলোয়াড় হেড দিয়ে ঠেকালে বেঁচে যায় আফ্রিকান দলটি। ৭৩তম মিনিয়ে ফাঁকায় থেকে নেওয়া ব্রুনো গিমারেসের শট লক্ষ্যে থাকেনি। পাঁচ মিনিট পর অলিভার নিচামের দূরপাল্লার ঝাঁপিয়ে লুফে নেন এদেরসন। ৮৪তম মিনিটে রাফিনহার কাটব্যাক গিমারেসের শট ব্লক করেন এক ক্যামেরুন ডিফেন্ডার।
৮৮তম মিনিটে হোয়াও পেদ্রোর শট লক্ষ্যে থাকলে গোল পেতে পারতো ব্রাজিল। যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে গিমারেসের হেডে জোর না থাকায় কোনো বিপদে পড়েনি ক্যামেরুন। অষ্টম মিনিটে মার্কুইনহোসের হেড থেকে ফাঁকায় পেয়েও মার্তেনেল্লির হেড বারপোস্টের সামান্য উপর দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটে গিমারেসের ভলিও বারপোস্টের উপর দিয়ে গেলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় ব্রাজিলকে।
Comments