ইউরোপিয়ানদের উপর ক্ষোভ ঝাড়লেন ফিফা সভাপতি
ফুটবলের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসরের আগে সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হবে মাঠের ফুটবল, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপের আগের দিনও মাঠের বাইরের বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না, কাতারের আইন থেকে শুরু করে তাদের মানবাধিকার রেকর্ড সবকিছু নিয়েই বিশেষ করে সরব ইউরোপিয়ানরা। এবার কাতারের পক্ষ নিয়ে তাদের একহাত নিলেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো।
সাধারণত বিশ্বকাপের প্রাক্কালে কেবল ফুটবলকেন্দ্রিক আলোচনায় সয়লাব থাকে সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে সকল ক্রীড়ামাধ্যম। তবে এবার এই মহাযজ্ঞ শুরুর অনেক আগে থেকেই আলোচনায় কাতারের প্রতি ইউরোপিয়ানদের প্রতিবাদ। মূলত সমকামীদের প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির আইন, প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি তাদের আচরণ ও মানবাধিকার রেকর্ডকে ইস্যু বানিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে খেলোয়াড়দের আহ্বান জানানো হয় প্রতিবাদ করতে। এর সঙ্গে সমালোচনা তো চলছেই।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম 'দা গার্ডিয়ান' এক প্রতিবেদনে জানায় বিশ্বকাপ ভেন্যু নির্মাণের কাজে কাতারে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার অন্তত সাড়ে ৬ হাজার অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। যাকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে প্রতিবাদ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন সংস্থা।
তবে ফিফা সভাপতি মনে করছেন এসব সমালোচনা তাদের মতো ইউরোপিয়ানদের মুখে মানায় না। দোহায় শনিবার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'একপাক্ষিক নৈতিক শিক্ষা প্রদান- এটা কেবলই ভণ্ডামি। আমি আপনাকে কোন জীবনমুখী শিক্ষা দিতে চাই না, তবে এখানে যেটা চলছে সেটা মারাত্মক অন্যায়। মানুষকে নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার আগে বিগত ৩০০০ বছর ধরে আমরা ইউরোপিয়ানরা যেটা করে আসছি সেটার জন্য আগামী ৩০০০ বছর আমাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।'
তবে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর প্রতি নিজের সমর্থন জানাতে ভুলেননি ইনফান্তিনো, 'আজ আমার নিজেকে একজন কাতারি মনে হচ্ছে, আরব মনে হচ্ছে, আফ্রিকান মনে হচ্ছে, আজ নিজেকে সমকামী মনে হচ্ছে, অক্ষম মনে হচ্ছে, একজন প্রবাসী শ্রমিক মনে হচ্ছে।'
একই সংবাদ সম্মেলনে পরে ফিফা সভাপতির পাসে বসে মিডিয়া রিলেশনের পরিচালক ব্রায়ান সোয়েপসন জানান তারা সমকামীদের প্রতি সহমর্মী, 'জিয়ান্ন ইনফান্তিনো সভাপতি হওয়ার পর থেকে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে সমকামী ইস্যুতে। আমি কাতারে বিশ্ব মঞ্চে বসে বলছি সবাই এখানে স্বাগত। ইনফান্তিনো সমকামী নন বলেই সমকামীদের প্রতি সহমর্মী নন এটা নয়, তিনি সহমর্মী। আমরা ফিফা সবার প্রতিই সহমর্মী। আমরা একটা উদার সংগঠন। আমার প্রচুর সমকামী সহকর্মী আছেন। কাজেই এই বিতর্ক সম্পর্কে আমি অবগত। সবার মতামত আমরা নেই, কিন্তু আমাদের একটা অবস্থান থাকে।'
২০ নভেম্বর ইকুয়েডরের বিপক্ষে স্বাগতিক কাতারের ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে ফুটবলের মহাযুদ্ধ। ইনফান্তিনোর এই বক্তব্য কিভাবে নেয় ইউরোপিয়ানরা-সেটাই এখন দেখার।
Comments